শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৫:১৭ অপরাহ্ন

শাশুড়ির অত্যাচারে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন পলাশের স্ত্রী

স্বদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১০ মে, ২০২৫

আলোচিত র‍্যাব কর্মকর্তা পলাশ সাহার আত্মহননের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার স্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করে একের পর এক স্ট্যাটাস দেওয়া হচ্ছে। তবের‍্যাব কর্মকর্তা পলাশের শ্বশুরবাড়ি ফরিদপুরে গিয়ে জানা গেলো ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, পুত্রবধূকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতেন পলাশের মা আরতি শাহা। শাশুড়ির অত্যাচারে এক সময় আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন সুস্মিতা সাহা।

সরেজমিনে চৌধুরীপাড়ায় ভরত সাহার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুস্মিতা সাহার বাবা ভরত সাহা থেমে থেমে বিলাপ করে চলেছেন একমাত্র মেয়ের জামাইয়ের জন্য। তিনি বলছেন, ‘তার মেয়েকে অনেক ভালোবাসতো পলাশ। নিজের হাতে খাইয়ে দিত, সময় পেলে বেড়াতে নিয়ে যেত, যেটা সহ্য হতো না পলাশের মায়ের।’

ভরত সাহার প্রতিবেশী ব্যবসায়িক চান্দু সরকার বলেন, ‘সুস্মিতা ও তার পরিবারের সবাই খুব নিরীহ। ওর ভাই সৌরভ সাহা কুয়েটে লাস্ট সেমিস্টারে পড়াশোনা করছে। বাবার টাকা-পয়সা তেমন না থাকলেও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। কিন্তু লোভের কাছে আমাদের মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে গেলো।’

সুস্মিতা সাহার প্রতিবেশী গৃহবধূ দীপা সরকার বলেন, ‘তিন দিন আগে মোবাইল ফোনে কথা হয় তার সঙ্গে। সুস্মিতা বলেছিল, ডাল রান্না ভালো হওয়ায় তার প্রশংসা করেছিল পলাশ। এর সঙ্গে সঙ্গেই খাবার টেবিলেই তার শাশুড়ি আরতি সাহা ডালের বাটি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। সেদিন রাতেই সুইসাইডের অ্যাটেম নেন সুস্মিতা। ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেই পোস্ট তার শাশুড়ি আরতি সাহার পিড়াপিড়িতে তুলে নিতে বাধ্য হন সুস্মিতা। আত্মহত্যার দিন সকালে অফিসে আসার সময় পলাশ সুস্মিতাকে জানালা দিয়ে বিদায় দিয়েছিলেন। সেটা নিয়েও শাশুড়ি আরতি সাহা আক্রমণ করেন সুস্মিতাকে। তার কিছুক্ষণ পরই নিজেকে শেষ করে দেন পলাশ।’

চৌধুরী পাড়ার গৃহবধূ সাধনা সাহা বলেন, ‘আমার দেবরের মেয়ে সুস্মিতা। আমার দেবরের টাকা পয়সা নেই, তাই শাশুড়ি সুস্মিতাকে ঠিকমতো খেতে দিত না, অত্যাচার করতো সব সময়। আরতি সাহা সব সময় সুস্মিতাকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য মতলব করত। কিন্তু ছেলে ভালোবাসতো বেশি, তাই নিয়ে সংসারে অশান্তি ছিল।’

সুস্মিতার চাচাতো ভাই ব্যাংকার পার্থ সাহা বলেন, ‘১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর পলাশের আগ্রহ দেখে আমরা বোনকে দিয়ে দিই। কিন্তু বিয়ের পর কোনোদিন ওদের বাড়ি আমরা যেতে পারিনি। সব সময় শুনতাম আমার বোনটাকে ওরা যৌতুকের জন্য অত্যাচার করে। কিন্তু পলাশের কথা সব সময় শুনেছি ভাল। সে আমার বোনকে অনেক ভালোবাসতো।’

সুস্মিতা সাহার ভাই সৌরভ সাহা বলেন, ‘আমার বোন জামাই পলাশ অনেক ভাল মানুষ ছিলেন। আমার বোনকে খুব ভালোবাসতেন। সব সময় ফোনে আমাদের খোঁজ নিতেন। এটাও ছিল তার মায়ের কাছে দোষের! বিয়ে হওয়ার দুই বছরের মধ্যে একবারও আমরা মেয়ের শ্বশুরবাড়ি যেতে পারিনি। আমাদেরকে ওই মহিলা সহ্য করতে পারতেন না। চিরকুটটা পলাশের হাতের লেখা। ওখানে যে স্বর্ণের কথা লিখেছেন, তিনি হয়ত ধারণা করেছিলেন, তার এ ঘটনার পর তার স্ত্রীকে তার পরিবার কোনো কিছুই দিবে না। তাই হয়ত স্বর্ণের কথা উল্লেখ করে গেছেন।’

সুস্মিতা সাহার বাবা ভরত সাহা বলেন, ‘বড়লোকের সঙ্গে আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইনি। কিন্তু ছেলেটি অনেক শখ করে আমার মেয়েটাকে এক রকম জোড় করেই বিয়ে করে। ছেলের আগ্রহ দেখেই আমরা শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকে দিয়েছি। কিন্তু আমার মেয়ে তো শাশুড়ির অত্যাচারে স্বামীকে বাঁচাতে পারলো না। মেয়েটা আমার কয়েকবার আত্মহত্যা করতে গেছে। এখন আমি ভয় পাচ্ছি, মেয়েটা নিজেকে না শেষ করে দেয়।’

ভরত সাহা আরও বলেন, ‘উনি (আরতি সাহা) খুবই ভয়ঙ্কর মহিলা! আমাদের কাছে টাকা পাননি। তাই সারাদিন অত্যাচার করত মেয়েটাকে। ঠিকমতো খেতেও দিত না। আমারতো টাকা পয়সা নেই, এটাই আমার দোষ। আমার কোনো কর্ম নেই, নিজের ওষুধ কেনার টাকাও নেই, মেয়েকে কোত্থেকে দেবো! ওই মহিলা চেয়েছিলেন ছেলেকে বিয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা আনবেন। সেটা না পেরে সারাদিন যন্ত্রণা দিতেন সুস্মিতাকে। আর নিজের স্ত্রীর অপমান সইতে না পেরেই আমার জামাই (পলাশ সাহা) নিজেকে শেষ করে দিলো।’

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে পলাশ সাহার মা আরতি সাহা কিংবা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এর আগে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় র‍্যাব কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পলাশ সাহা আত্মহত্যা করেন। গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় র‍্যাব- ৭ এর নগরের বহদ্দারহাট ক্যাম্পে নিজ অফিস কক্ষে তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া যায়।

পলাশ সাহার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। পারিবারিক কলহের জেরে পলাশ আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে ধারণা পুলিশ কর্তৃপক্ষের। তার সুইসাইড নোটে লেখা আছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভাল রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভাল থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভাল রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো সংবাদ