রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন

জাবি ভিসির শক্তির উৎস কী?

জাবি ভিসির শক্তির উৎস কী?

স্বদেশ ডেস্ক: আন্দোলন চলমান থাকলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফারজানা ইসলামের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বুধবার বিকেলের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তা না হলে শক্তি প্রয়োগ করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার তার কার্যালয় ঘেরাও করা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো এই ঘটনাকে ছাত্রলীগের গণঅভ্যুত্থান হিসেবে অভিহিত করেন ভিসি ফারজানা ইসলাম। তাকে রক্ষা করার জন্য ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন। এই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও শিক্ষার্থীরা তা মানেনি।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে আবারো হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাও প্রত্যাখ্যান করে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে। এদিকে ক্যাম্পাস না ছাড়লে শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঢুকেছে। এর আগে ক্যাম্পাসে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সংহতি সমাবেশ করে।

‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ মঞ্চের সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন,‘ভিসি ফারজানা ইসলাম আর তাঁর পদে থাকতে পারেন না। তিনি নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজে ছাত্রলীগকে চাঁদা দিয়েছেন, তা প্রমাণিত। ই-টেন্ডার না ডেকে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছেন। এ নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান লিখিত অভিযোগও দিয়েছে। আর সর্বশেষ তিনি ছাত্রলীগকে দিয়ে হামলা চালিয়েছেন। তিনি ভিসি পদের থাকার সব নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।’

আর গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন,‘ভিসি একজন স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ, তিনি স্বীকারও করেছেন। আমরা তিন মাস ধরে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে আছি। এখন আমাদের ওপর আঘাত করা হচ্ছে। ছাত্রলীগকে দিয়ে হামলা করানো হচ্ছে। শক্তি প্রয়োগ করছেন।’

তিনি বলেন,‘এই ধরনের একজন ভিসিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা মেনে নেবে না। তাকে চলেই যেতে হবে। আমরা তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’

এদিকে ছাত্রলীগ বলছে, মঙ্গলবার তারা ভিসিকে উদ্ধারে যায়নি, গিয়েছিল তাদের ‘দাবি দাওয়া নিয়ে’। হামলায় নেতৃত্ব দেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা দাবি করেন,‘এই আন্দোলনে শিবির ও জামায়াত জড়িত। আমরা তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাতে ভিসির অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে সামান্য হাতাহাতি হয়। আমরা ভিসি ম্যাডামকে উদ্ধার করতে যাইনি। তিনি যদি আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সেটা তার ব্যাপার।’

এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো স্পষ্ট অবস্থান জানা যায়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবয়াদুল কাদের। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘ভিসি ম্যাডাম নিজেকে অনেক শক্তিশালী মনে করেন। তিনি নিজেকে প্রভাবশালী একজনের বান্ধবী পরিচয় দেন। তার প্রভাবের কারণে এই আন্দোলন চলাকালেই তিনি ঢাকায় গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে বৈঠক করেন।’

মঙ্গলবারের হামলায় আহত অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন,‘ওনার (ভিসি) ক্ষমতার উৎস কী আমরাও বুঝতে পারছি না। উনি বলছেন রাষ্ট্রপতি না বলা পর্যন্ত পদত্যাগ করবেন না। হয়তো সেই পর্যন্ত তিনি যেভাবেই হোক টিকে থাকতে চাইছেন। রাষ্ট্র থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়া পর্যন্ত তিনি এগুলো করতে থাকবেন। মঙ্গলবার হামলা করা হয়েছে। এখন শক্তি প্রয়োগের হুমকি দেয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন,‘আমরা কোনো ফাঁদে পা দেব না, আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। কোনো উস্কানি আমাদের আন্দোলন ক্ষত্রিগ্রস্ত যাতে না করতে পারে সে ব্যাপারে আমরা কৌশলী হবো।’

প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ২০১৪ সালের মার্চে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান। গত বছর তাকে দ্বিতীয় দফায় নিয়োগ দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজে দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গত তিন মাস ধরে আন্দোলন হচ্ছে। এই কাজে চাঁদাবাজির ঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র : ডয়চে ভেলে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877