সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন

কলকাতায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাসপোর্ট কেলেঙ্কারি!

স্বদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জাল পাসপোর্ট কেলেঙ্কারি নিয়ে চলমান তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেশটির এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) জানিয়েছে, এই জালিয়াতি থেকে সংগৃহীত বিপুল অর্থ হাওয়ালা রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশে পাচার করা হয়েছে।

তদন্তে উঠে আসা সবচেয়ে বিতর্কিত তথ্য হলো—গ্রেফতারদের একটি বড় অংশই বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেছে কলকাতা প্রশাসন। এতে রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে চরম অস্বস্তি তৈরি হয়েছে এবং কলকাতার নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।

তদন্ত অনুযায়ী, এই জাল পাসপোর্ট চক্র একটি দ্বি-স্তর বিশিষ্ট অর্থপ্রবাহে কাজ করতো। প্রথম স্তরে, বাংলাদেশি নাগরিকদের সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করানো হতো। এরপর জাল জন্ম সনদ, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার আইডি এবং আধার কার্ড তৈরি করে দিত এই চক্র। প্রতিটি পরিচয়পত্রের জন্য নেওয়া হতো দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

দ্বিতীয় স্তরে, এই জাল নথিগুলোর ভিত্তিতে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়া হতো, যার জন্য খরচ হতো ৭৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা।

ইডি জানিয়েছে, এই পাসপোর্ট কেলেঙ্কারি থেকে অর্জিত অর্থ হাওয়ালা সিন্ডিকেট ব্যবহার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অর্থের একটি অংশ মৌলবাদী গোষ্ঠীর কাছেও পৌঁছাতে পারে।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, গ্রেফতার হওয়া অনেক বাংলাদেশির সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃত্বের সম্পর্ক আছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এতে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

এই মামলার মূল দুই অভিযুক্ত—ভারতীয় নাগরিক অলোক নাথ ও বাংলাদেশি নাগরিক আজাদ মল্লিক—কে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজাদ মল্লিক একটি ট্রেডিং সংস্থা পরিচালনা করতেন এবং কলকাতা থেকেই হাওয়ালা সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

কলকাতা পুলিশ ইতোমধ্যে একটি ১৪০ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা দিয়েছে, যাতে ১৩০ জনের নাম রয়েছে, যাদের মধ্যে ১২০ জনই পলাতক বাংলাদেশি নাগরিক। অভিযোগ, তারা জাল পাসপোর্টের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন, আর ভারতীয় নাগরিকরা নথিপত্র তৈরিতে সহায়তা করেছেন।

এই ঘটনায় কলকাতার জনমনে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ ও নিরাপত্তা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের একাংশ মনে করছে, প্রতিবেশী দেশের একটি শাসকদলের ঘনিষ্ঠদের জড়িয়ে পড়া কেবল আইনত নয়, কূটনৈতিকভাবেও স্পর্শকাতর একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো সংবাদ