রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৫ অপরাহ্ন

দুশ্চিন্তায় আছেন ফেনী আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরা…?

দুশ্চিন্তায় আছেন ফেনী আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরা…?

স্বদেশ ডেস্ক: নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের পর থেকেই বিভিন্ন স্তরে অন্য দল থেকে অনুপ্রবেশের জের ফেনীতেও রয়েছে। বিএনপি অধ্যুষিত এ জেলায় বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য দলের নেতাদের একের পর এক যোগদানে স্বয়ং আওয়ামী লীগ নেতারাও বিরক্তি প্রকাশ করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব নেতার বিষয়ে কঠোর মনোভাব থাকায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অনুপ্রবেশকারীরা। অনুরূপভাবে বিএনপিও দলত্যাগীদের একটি তালিকা তৈরি করছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বিভিন্ন সূত্র জানায়, সম্প্রতি দলের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অন্য দলের নেতাদের যোগদানে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু শুসেন চন্দ্র শীল। এ সরকার ক্ষমতায় আসার ১১ বছরে জেলার বিএনপি-জামায়াতের কয়েকশ’ নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন পদপদবিও পেয়ে বসেছেন। অনেকে পুরস্কৃত হয়েছেন জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব পেয়ে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মাঈন উদ্দিন আনসারী, সহসভাপতি ভিপি হানিফ খান জয়, ক্রীড়া সম্পাদক ওবায়দুল্লাহ মজুমদার, সদস্য রাসেল ভূঞা ও লেমুয়া ইউনিয়নের সহসভাপতি আইয়ুব বাচ্চু, লেমুয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক জাফর উল্লাহ (চেয়ারম্যান), সোনাগাজী উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি শহীদ উল্লাহ প্রঃ কানা শহিদ ও সদস্য রাইফেল জসিমসহ কয়েকজন। এদের কয়েকজন বিস্ফোরক ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় আসামি। আওয়ামী লীগ বা অঙ্গ সংগঠনে পদপদবি না পেলেও আপাতত মামলা-মোকদ্দমা থেকে গা বাঁচিয়েছেন তারা। এছাড়া ঠিকাদারি কাজেও কিছু সুবিধা পাচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
পৌর নির্বাচনের আগে যোগ দেওয়া জেলা যুবদলের সহ-সম্পাদক মনির আহম্মদ এখন ১৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বিএনপি থেকে নির্বাচিত এ কাউন্সিলর এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তৃতীয়বারের মতো পৌরসভার কাউন্সিলর হয়েছেন। ১৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সাইফুর রহমান সাইফু এখন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে রেড ক্রিসেন্ট চেম্বারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্যানেলে তিনি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সেক্রেটারি, ফেনী শিশু নিকেতন কালেক্টরেট স্কুলের সদস্য, ফেনী চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক। জেলা তৃণমূল দলের সেক্রেটারি আতিক উল্লাহ ফয়সাল পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর। বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপির সাবেক দেহরক্ষী জেলা যুবদল সদস্য আবুল কালাম জেলা যুবলীগের সদস্য পদ পান। এলাকায় তার প্রভাব অনেক আওয়ামী লীগকেও ছাড়িয়ে গেছে, যা পুরোনো আওয়ামী লীগরা ভালো চোখে দেখছেন না বলে জানিয়েছেন। সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সাহাব উদ্দিন সিকদার আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন সদর উপজেলা বিআরডিবির চেয়ারম্যান পদ। জেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈকত জাহান সম্প্রতি ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছেন। সৈকত এখন ছাত্রলীগ কর্মী শাকিল হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। পৌরসভার ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮নং ওয়ার্ডে নবীনরা সবাই এক সময় যুবদল নেতা মাহবুবুল হক রিপনের সঙ্গে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। এদের মধ্যে ইমন জেলা ছাত্রদলের সদস্য। কিছুদিন আগে হামলা-মামলার শিকার হয়ে সেও ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছে।
২০১১ সালে পৌর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেন যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন উর রশিদ মজুমদার। তিনি ২০০৯ সালে বিএনপির মনোনয়নে সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। যোগদানের পর ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পুরস্কৃত হন। সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চাচাতো ভাই ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন সামু আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এছাড়া সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়ন যুবদল সদস্য মিয়া মেম্বার ও সোনাগাজীর নবাবপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম দল বদল করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
বিগত পৌর নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাজী আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে জেলা জাতীয় পার্টির নেতারা সদলবলে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এরপর আওয়ামী লীগের টিকিটে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন হাজী আলাউদ্দিন। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোশাররফ হোসেন শহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ইসমাইল হোসেন খোকন জেলা জুয়েলার্স সমিতির সভাপতির পদ পান। জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন যুব সংহতি ছেড়ে আবু সুফিয়ান জেলা যুবলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক পদ পান।
এসব বিষয় নিয়ে এখন রাজনৈতিক মহলে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। বিশেষ করে শীর্ষ নেতারা অনুপ্রবেশ নিয়ে নেতিবাচক কথা বলায় আওয়ামী লীগে নবাগতরা তাদের রাজনীতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।
তবে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ফেনীর সম্মেলনে বলেছেন, ভালো লোকদের জন্য আওয়ামী লীগের দরজা খোলা থাকবে। তিনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভালো লোকদের আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান। অন্যদিকে দলের স্বার্থ বাদ দিয়ে পকেট ভারি করতে বিতর্কিতদের আওয়ামী লীগে স্থান না দিতেও নির্দেশ দেন তিনি। সম্মেলনের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগে নতুন লোকের প্রয়োজন নেই। দলে যারা আছেন তারাই যথেষ্ট। জেল হত্যা দিবসের আলোচনা সভায় পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়নুল কবির শামীম ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনুপ্রবেশকারীদের ঠাঁই না দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের প্রয়োজন নেই। অতীতে যারা অনুপ্রবেশ করেছে তাদের যেন আগামীতে দলের কোনো পর্যায়ে স্থান দেওয়া না হয়। অনুপ্রবেশকারীরা দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তারা ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত। পৌর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এ ধরনের লোকদের জায়গা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, জেলা নেতারাও যেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের কোনোভাবেই জায়গা না দেন।
তবে তৃণমূলে যারা দীর্ঘদিন দলে থেকে বঞ্চিত থেকেছেন তারা অভিযোগ করে, অনুপ্রবেশকারীরা ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের অভিভাবক আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম ও ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম হাজারীর নেতৃত্বের প্রতি সম্মান দেখিয়ে দলে ভীড়ছেন হালুয়া রুটির আশায়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877