স্বদেশ ডেস্ক: দীর্ঘ সময় যুক্তরাষ্ট্র শক্তিধর রাষ্ট্রের শীর্ষে থাকলেও এখন বৈশ্বিক রাজনীতি বদলেছে। মহাযুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেশটি আগে রাশিয়াকে সমীহ করলেও এখন যুক্ত হয়েছে চীন। ২০১৮ সালের মার্কিন প্রতিরক্ষা কৌশল ইঙ্গিত দেয়, তারা যেকোনো পদক্ষেপ নিতে গিয়ে বাধার মুখোমুখি হয়েছে রাশিয়া, বিশেষ করে চীনের। দেশ দুটি তাইওয়ানের মতো মার্কিন স্বার্থ, মিত্র ও প্রতিষ্ঠিত অংশীদারদের প্রতি বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। মার্কিন সেনাবাহিনীও ভবিষ্যৎ যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে চীন-রাশিয়ার বিরুদ্ধে তৈরি হচ্ছে। কিন্তু বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, মহাযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ খেলা এখন এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নেই। রাশিয়া ও চীন ইতিমধ্যে মিসাইল, রাডার, ইলেকট্রনিক যুদ্ধকৌশলে অনেক উন্নতি করেছে। একই সঙ্গে পশ্চিম প্যাসিফিক ও পূর্ব ইউরোপে মার্কিন প্রতিরক্ষা দুর্বল করতে সমর্থ হয়েছে। ওইসব অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ও অংশীদার বাছাই করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এদের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিক সক্ষমতা অর্জনে চীনের সাফল্য বিস্ময়কর। দেশটি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, দূরপাল্লায় বিমান অভিযান ও পরমাণু সাবমেরিন পদ্ধতির যোজন যোজন উন্নতি করেছে। চীন-রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা তাইওয়ানের মতো বাল্টিক রাষ্ট্রেও (এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়া) যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষয়িষ্ণু করেছে। এখন প্রশ্ন, কী হবে? যদি চীন-রাশিয়া সামরিক সুযোগ গ্রহণে তাইওয়ানের মতো মার্কিন অনুগতদের ওপর জবরদস্তি করে, স্বাভাবিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে ওয়াশিংটন। তখন ওই অঞ্চল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে। ইতিমধ্যে পেন্টাগনের হাতে এ সংক্রান্ত একাধিক নথি এসেছে। এরপর থেকে তাইওয়ান ও বাল্টিক অঞ্চলে মার্কিন সেনারা সতর্ক পা ফেলতে শুরু করেছে। বিশেষ করে কিছু সামুদ্রিক অঞ্চল থেকে প্রতিরক্ষা প্রভাব কমিয়ে তারা ভারসাম্য ও নিয়ন্ত্রিত সামুদ্রিক নীতির প্রস্তাব করেছে।
পশ্চিম প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন এবং পূর্ব ইউরোপে রাশিয়া সরাসরি তাদের প্রভাব তৈরি করছে। এখন এসব অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ কোনো আর্থিক পদক্ষেপ নিলে নিশ্চিত বাগড়া দেবে। তর্কের খাতিরে চীন তাইওয়ানে হামলা করলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দেবে। আফ্রিকায় চীনা ঘাঁটি জিবুতি অথবা সুবিধাপ্রাপ্ত পাকিস্তান, কম্বোডিয়া ও শ্রীলঙ্কার সহযোগিতা পাওয়ার চেষ্টা করবে। একইভাবে রাশিয়া বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর দখল নিলে যুক্তরাষ্ট্র বড়জোর ক্রিমিয়া ও সিরিয়ায় রাশিয়ান সেনাদের অবরুদ্ধ করতে পারবে। এতে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ হতে পারে অথবা পরস্পর গুটিয়ে নেবে।
ফরেন পলিসি বলছে, সরাসরি যুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরক্ষার এ তত্ত্ব খুব কাজে আসে না। বরং প্রত্যেক অংশীদার প্রতিরোধের জন্য সব সুবিধা ব্যবহারে মরিয়া হয়ে ওঠে এবং যেকোনো মূল্যে জয় পেতে চায়। প্রকৃতপক্ষে এমন হলে যুক্তরাষ্ট্র নয়, যুদ্ধের সব সুবিধা চীন ও রাশিয়ার পক্ষে যাবে। অতীত যুদ্ধের ইতিহাসও বলে, যুক্তরাষ্ট্রকে দমাতে জোট হলে চীন-রাশিয়ার মধ্যেই হবে। বিস্তৃতভাবে স্থানীয় পর্যায়ে যুদ্ধের ব্যয় বহনের সক্ষমতাও তাদের হাতে থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হাতে থাকবে না। পেন্টাগনও আভাস পেয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে মস্ত শক্তিধরদের সামলাতে মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে সামরিক পরিকল্পনা ঢেলে সাজাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামরিক বিবেচনায় আগামীতে তিন পরাশক্তির মধ্যে তাইওয়ান নিয়ে পেইচিংয়ের এবং বাল্টিক অঞ্চল নিয়ে মস্কোর সঙ্গে যুদ্ধ হবে ওয়াশিংটনের। এক্ষেত্রে চীন-রাশিয়া মিলে যুক্তরাষ্ট্রকেই পিষে দেবে।