কার্ডিফের বৃষ্টিস্নাত দিনে আরও একবার স্বপ্ন উঁকি দিয়ে গেল। ওয়েলসের শহরটি বাংলাদেশের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ বললেও ভুল হবে না। বিদেশের মাটিতে একমাত্র গ্রাউন্ড, যেখানে বাংলাদেশের জয়ের রেকর্ড শতভাগ! বিশ্বকাপের ম্যাচ বলে কথা। অতশত গল্প ও স্বপ্নবাজের আনাগোনা কমই হবে বৈকি!
ইতিহাসের সরল গল্পের বইয়ে বাংলাদেশের রেকর্ডও আজ পক্ষে গেছে। বিশ্বকাপের আগের দুটি ম্যাচেই ‘থ্রি-লায়ন্স’কে মাটিতে নামিয়ে এনেছিল টাইগাররা। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে ২০১৫ বিশ্বকাপে রুবেল হোসেনের ইয়র্কার লেংথের ডেলিভারিতে বোল্ড হন অ্যান্ডারসন। ভোঁ দৌড় দিয়েছিলেন রুবেল! বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লিখিয়েছিল। আরও একটি বিশ্বকাপ খোদ ইংল্যান্ডের মাটিতে।
ইংল্যান্ডের মাটিতে হলে হবে কী, কার্ডিফ মাশরাফিদের আরেকটি বাড়ি, আর সেখানে আরেকটি ‘অ্যাডিলেড মহাকাব্য’ রচিত হোকÑ সে প্রত্যাশা মনের কোণে বাসা বেঁধেছে! বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড এই বিশ্বকাপে সরলরেখায় চলেছে। দুই দলই হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। আবার ইংল্যান্ড সর্বশেষ ম্যাচে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ হেরেছে নিউজিল্যান্ডের কাছে। ফলে জয়-পরাজয়ের টক-মিষ্টি-ঝাল স্বাদ পাওয়া হয়ে গেছে। ৯ ম্যাচের গ্রুপপর্ব।
পরের পর্বে যেতে হলে ৫টি ম্যাচ তো জিততে হবেই। বাংলাদেশ এমন লাকি গ্রাউন্ড আর পাবে না। এর আগে কার্ডিফে ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ২০১৭ সালে (চ্যাম্পিয়নস ট্রফি) নিউজিল্যান্ডকে ধরাশায়ী করে বাংলাদেশ। কার্ডিফ সোফিয়া গার্ডেনের রেকর্ড ও বিশ্বকাপের ইতিহাস বলছেÑ বাংলাদেশ ফেভারিট! ইংল্যান্ড গত ৪ বছরে অন্য ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলছে।
দলটির ওপেনার থেকে ৯ নম্বর পর্যন্ত ব্যাট করার মতো খেলোয়াড় আছে। দুজন অভিজ্ঞ স্পিনার। কন্ডিশন বুঝে খেলোয়াড় ও সাইড বেঞ্চে দারুণ খেলোয়াড় আছেন। এউইন মরগ্যান গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমরা জানি সবাই বাংলাদেশকে খাটো করে দেখে। তাই বলে আমরা সেটা ভাবছি না। অবশ্যই বাংলাদেশ ভালো দল। আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। মাশরাফি জানেন ইংল্যান্ডের শক্তির জায়গা কোথায়।
তিনি বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডের প্রত্যাশার চাপ আছে। মানুষ বলছে তারা এবার বিশ্বকাপ জিতবে। এই ফেভারিট তত্ত্বের দুটি দিক আছেÑ ইংল্যান্ড নিজেদের মাটিতে চাপে থাকবে, আবার আমাদের কাছে একটু সোজা যে প্রত্যাশা ওই মাপে নেই।’ মাশরাফি আরও জানান, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করা একই ভুল এই ম্যাচে হবে না। তিনি আবহাওয়া দেখে দলের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে দলটি খেলেছিল, একই একাদশ ছিল নিউজিল্যান্ডের ম্যাচে। ইংল্যান্ডের ম্যাচে একটি পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। রুবেল হোসেনকে দল নেওয়া হতে পারে। তবে মোসাদ্দেক যেভাবে খেলছেন, তাকে বসানোটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাবে। ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ৩ ম্যাচ মুখোমুখি হয়েছে। ইংল্যান্ড ১টিতে জিতেছে ১২ বছর আগে ২০০৭ সালে।
বাংলাদেশ পরের দুটি বিশ্বকাপে জয় পেয়েছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড। সেই ক্ষত এখনো মরগ্যানের মনে আছে। প্রতিশোধ নিয়ে কথাই হয়নি; মরগ্যান বাংলাদেশকে বরং সমীহ করছে। বড় ফরম্যাটের বিশ্বকাপ। এখনো টুর্নামেন্ট শুরুর দিকে রয়েছে। ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। ওয়ানডেতে ইংল্যান্ড ১ নম্বর দল, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ নম্বরে।
কথা হচ্ছে, এটা বিশ্বকাপ। উত্তাপ কোন দল কতটুকু হজম করবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে! নিউজিল্যান্ডের ম্যাচে অনেক ভুল ছিল। ভাগ্যের সহায়তা ছিল না। টস, আবহাওয়া, রান আউট, আড়াইশর নিচে স্কোর, আবার রান আউটের সুযোগ হাতছাড়াÑ সব মিলিয়ে বাংলাদেশের দিন ছিল না। কার্ডিফে কাল বৃষ্টি থাকলেও আজ রোদ থাকার সম্ভাবনা প্রবল। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও হেসে ওঠার দিন। আরেকটি অ্যাডিলেড মহাকাব্য রচিত হোকÑ সে প্রত্যাশায় সবাই রয়েছে।