স্বদেশ ডেস্ক:
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিং অবনমনের মুডির সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে অর্জিত উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঠিক প্রতিফলন হয়নি।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মুডি’স ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশের সার্বভৌম রেটিং বি১ থেকে বি২-এ নামিয়ে এনেছে এবং স্বল্পমেয়াদে ইস্যুয়ার রেটিং নট প্রাইম হিসেবে বহাল রেখেছে। এছাড়া দৃষ্টিভঙ্গিকে নেতিবাচক দিকে নিয়েছে।
অবনমনের কারণ হিসেবে রাজনৈতিক ঝুঁকি এবং সম্ভাব্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছে রেটিং এজেন্সিটি।
বৃহস্পতিবারের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আরো বলেছে, এ বছরের শুরুতে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক রূপান্তরের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শুরু করা মূল সংস্কার ও উন্নতিকে উপেক্ষা করা হয়েছে এই মূল্যায়নে।
এতে বলা হয়, ছাত্র-নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের আগস্টে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন সরকার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা, দুর্নীতি রোধ এবং সুশাসন শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে ব্যাপক সংস্কার শুরু করেছে।
অর্থনৈতিক সংস্কার ও স্থিতিশীলকরণ ব্যবস্থা
বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমান প্রশাসনের অধীনে বেশ কয়েকটি মূল পদক্ষেপ এবং অর্জনের রূপরেখা দিয়েছে যা বিশ্বাস করে যে এটি ইতিবাচক অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রদর্শন করে।
১. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শাসন ব্যবস্থার সংস্কার : রাজনৈতিক দল ও প্রধান অংশীজনদের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনপ্রশাসন, আর্থিক খাত এবং দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টার মতো ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার সাধন করেছে।
২. ব্যাংকিং খাত সংস্কার : বাংলাদেশ ব্যাংক ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন এবং তারল্য ও কর্মক্ষমতা উন্নয়নে দৈনিক তদারকির কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিসহ ব্যাংকিং খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করেছে। এই সিদ্ধান্তে ইতোমধ্যেই এই ব্যাংকগুলোতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার লক্ষণ দেখা গেছে।
৩. সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা : সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা, বৈদেশিক রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতির চাপ। তবে ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে বৈদেশিক খাতের সূচকগুলো স্থিতিশীল হয়েছে। শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রফতানি প্রবৃদ্ধির কারণে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১২০ টাকায় স্থির রয়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে স্থিতিশীল হয়েছে এবং বাহ্যিক অ্যাকাউন্টের ভারসাম্যহীনতায় উন্নতি হয়েছে।
৪. মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ : মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক চাহিদা ও সরবরাহ-পার্শ্ব নীতির সমন্বয় বাস্তবায়ন করেছে। চাহিদার দিক থেকে, নীতি হার সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোসহ আর্থিক কঠোর ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সরবরাহের দিক থেকে, প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর কর কমানো হয়েছে এবং বিশেষত কৃষিতে সরবরাহ চেইনের বিঘ্ন মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বন্যার কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উচ্চ থাকলেও গত তিন মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির উন্নতি হয়েছে।
আরো বিস্তৃত মূল্যায়ন প্রয়োজন
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে সংস্থাটি চলমান সংস্কার প্রচেষ্টা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বৃহত্তর চিত্র উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যুক্তি দিয়ে বলেছে, রেটিং এজেন্সির মূল্যায়ন একটি ‘পশ্চাদমুখী দৃষ্টিভঙ্গি’ এবং নতুন সরকারের অধীনে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো পুরোপুরি বিবেচনা করেনি।
বাংলাদেশের সংস্কার ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আরো পুঙ্খানুপুঙ্খ ও সরেজমিন পর্যালোচনা করার জন্য সংস্থাটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ‘মূল্যায়ন করার সময় মুডি’স দূরদৃষ্টি দেয়নি’। বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্বাস করে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমর্থন এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব উভয়ের সমর্থনে অব্যাহত সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আরো বিস্তৃত মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়েছে। যার মধ্যে মূল অংশীজনদের সাথে পরামর্শ এবং প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ জড়িত। বাংলাদেশ ব্যাংক দৃঢ়তার সাথে বলেছে, কেবল এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমেই মুডি’স বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের একটি সুষ্ঠু ও সঠিক মূল্যায়ন দিতে পারে।
সূত্র : ইউএনবি