রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আলজাজিরার প্রতিবেদন: ভারতীয় ভিসা নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে বাংলাদেশি রোগীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিজয় একাত্তর হল সভাপতি সজিব গ্রেফতার বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে অস্ত্র-বোমা উদ্ধার করল সেনাবাহিনী পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন বন্ধে জোরদার হচ্ছে অভিযান আইসিউতে মুশফিক ফারহান সাবেক প্রতিমন্ত্রীর চাচাকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে পিটুনি ফ্যাসিবাদের ঘৃণাস্বরূপ বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি তারেক রহমানের ৪ মামলা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আগামী সোমবার লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ১২০ দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে যেসব প্রস্তাবনা দিতে যাচ্ছে কমিশন
পর্নো ব্যবসার সূত্রপাত হলো কীভাবে…?

পর্নো ব্যবসার সূত্রপাত হলো কীভাবে…?

ফ্রাঙ্কি কুকনি: নব্বইয়ের দশক। ডিভিডি ও ইন্টারনেটের বদৌলতে সম্পূর্ণ পাল্টে গেল পর্নো বিকিকিনির ধরন। আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ তখন পর্নো দেখার সুযোগ পেলো। এই ব্যবসা থেকে টাকা কামানোর উপায়ও পাল্টে গেল। তখনও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্মিত ছবি বা ভিডিও দেখতে গাঁটের পয়সা খরচ করতে রাজি ছিল মানুষ। কিন্তু অনলাইন বিজ্ঞাপনের আবির্ভাব যখন হলো, তখন ছবি বা ভিডিও ওয়েবসাইট মালিকরা বুঝতে পারলেন, শুধু সাবস্ক্রিপশনই নয়, বিজ্ঞাপনও হতে পারে অর্থ আয়ের নতুন পথ। ‘দ্য প্লেয়ার্স বল: এ্যা জিনিয়াস, এ্যা কন ম্যান, এ্যান্ড দ্য সিক্রেট হিস্টোরি অব দ্য ইন্টারনেট’স রাইজ’ বইয়ের লেখক ডেভিড কুশনার লিখেছেন, ‘ওয়েবসাইট মালিকরা তখনো সাইটের সদস্যপদের সাবস্ক্রিপশন বিক্রি করতেন। ওয়েবসাইটে প্রবেশের জন্য মাসে মাসে একটা অর্থ কেটে নিতেন গ্রাহকদের কাছ থেকে। কিন্তু দ্রুতই তার বিজ্ঞাপনে যেন গ্রাহকরা ক্লিক করেন, সেই কৌশল অবলম্বন শুরু করেন।’
২০০৭ সালে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটলো। দুটি পর্নোসাইটের ‘টিউব’সাইট এলো অনলাইনে, যেখানে বিনামূল্যেই পাওয়া যায় পর্নো ভিডিও। একই বছর বাজারে এলো আইফোন। আর ঠিক ওই বছরই ভিভিড এন্টারটেইনমেন্ট প্রকাশ করলো কিম কার্দাশিয়ানের সেক্স টেপ। আজকের সোস্যাল মিডিয়া তারকা কার্দাশিয়ানকে তখন খুব কম মানুষই চিনতো। এমনও নয় যে, তিনিই প্রথম সেলিব্রেটি যিনি সেক্স টেপ তৈরি করেছেন, আর যা ফাঁস হয়ে গেছে। কিন্তু ওই ভিডিও এত সহজে পাওয়া গেল যে, এর দর্শকের পরিমাণ ছিল নজিরবিহীন। সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মাইক স্টাবাইল বলেন, ‘বহুদিন ধরেই, একটি পর্নোসাইটে কিম কার্দাশিয়ান ছিলেন সবচেয়ে বেশি খোঁজা শব্দ।’
এই সময়ের মধ্যেই অনলাইনে কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে যেকোনো ধরনের দৃশ্যের জন্য সার্চ দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে। এই যে পর্নো শিল্পে প্রযুক্তির এই প্রভাব, তা-ই ছিল বৃটিশ সাংবাদিক জন রনসনের অডিও তথ্যচিত্র ‘দ্য বাটারফ্লাই ইফেক্ট’-এর প্রধান উপজীব্য। কিন্তু পর্নো শিল্পে প্রযুক্তির যতো প্রভাব বেড়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ে পাইরেসি। গ্রাহকরা কোনো প্রিমিয়াম ওয়েবসাইট থেকে অর্থ পরিশোধ করে পর্নো ভিডিও কিনে তা আপলোড করে দিলো বিনামূল্যের টিউব সাইটগুলোতে। আর সেখানে হাজার হাজার মানুষ একই ভিডিও বিনামূল্যে দেখার সুযোগ পেলো। জন রনসন এই শিল্পের বহু পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা বর্ণনা করেছেন কীভাবে এই অনিয়ন্ত্রিত পাইরেসি এই শিল্পের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
নেইটগ্লাস হলেন টেইকডাউন পাইরেসি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার এই প্রতিষ্ঠান কপিরাইট নিশ্চিতে বিভিন্ন কোম্পানিকে সহায়তা করে থাকে। ২০১৫ সালে তিনি সিএনবিসি’কে বলেন, ‘টেইকডাউন পাইরেসি প্রতিবছর টিউবসাইটগুলোর কাছে প্রায় ২৫ হাজার কপিরাইট নোটিশ পাঠিয়ে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘কোনো কোম্পানির মুনাফা প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু এটা বোঝা যায় যে, পর্নো প্রযোজনার হার কমছে। আগের চেয়ে কমসংখ্যক কোম্পানি এখানে কাজ করে। নতুন কনটেন্ট নির্মিত হচ্ছে কম। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাজও কমে গেছে। ২০০৯ সালে আমি যখন বিভিন্ন স্টুডিওর হয়ে কাজ করতাম, তখন ওই বছরেই ডিভিডি বিক্রির পরিমাণ এক বছরের মধ্যে হঠাৎ করে ৫০ শতাংশ কমে যায়। আমার মনে হয়, তখন থেকেই এই নেতিবাচক ধারার শুরু।’
শিরাট্যারান্ট নিজের লেখা বই ‘দ্য পর্নোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রি হোয়াট এভরিওয়ান নিডস টু নো’-এ অনুমান করে বলেছেন যে, পাইরেসির কারণে পর্নো ইন্ডাস্ট্রির বার্ষিক ক্ষতি হয় ২০০ কোটি ডলার। অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও আগের চেয়ে কম অর্থ আয় করেন। ২০১২ সালে, এই শিল্পে কাজ করা এজেন্ট মার্ক স্পিগলার বলেন, একুশ শতাব্দীর শুরুতে একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী যত কামাতেন, এখন তার অর্ধেক পান। তার ভাষ্য, ‘এক দশক আগে গড়পড়তা একজন নারী পারফরমার বছরে ১ লাখ ডলার আয় করতেন। তিনি এখন ৫০ হাজার ডলারের মতো পান হয়তো।’
ভিডিও প্রযোজনা ও বিতরণের উপায়ই শুধু পরিবর্তিত হয়নি। পুরো বাজারই পাল্টে গেছে নাটকীয়ভাবে। কোপেনহেগেন-এর সেই ট্রেড শো ‘সেক্স ৬৯’ সম্পর্কে অবজারভার পত্রিকার সাংবাদিক লিখেন, ‘এখানে যারা ঘুরতে এসেছেন এদের ৯০ শতাংশই পুরুষ। নারীরা খুব কম।’ কিন্তু একটি পর্নোসাইটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাইট ভিজিটরদের ৩০ শতাংশই এখন নারী।
এর বাইরেও স্বাধীন পর্নো স্টুডিও হয়েছে। এ ছাড়া সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করায় পর্নো শিল্পীরাও কিছুটা স্বাধীনতা পেয়েছে। ফলে এই শিল্প নিয়ে তারা প্রায়ই প্রকাশ্যে কথা বলছে। অনেকে আবার যৌন শিক্ষায় আত্মনিয়োগ করেছে। অনেকে আবার শ্রম অধিকার বা যৌন হয়রানি নিয়েও সরব হয়েছে।
এখন বার্লিন, ভিয়েনা আর লন্ডনে পর্নো চলচ্চিত্র উৎসব হয়। ড্যানস্যাভেজ-এর হাম্প! ফেস্টিভ্যাল-এর কথা না-ই বা বললাম। আমরা যদি এই গত ৫০ বছরের দিকে তাকাই, এটা মনে করা খুব সহজ যে, আমরা অনেক দূর এসেছি। কিন্তু এ সম্পর্কিত আইন, শিল্প ও দর্শক পরিবর্তিত হলেও, কিছু সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এখনো রয়ে গেছে যা সেই ১৯৬৯ সালের মতোই।
যেমন ‘সেন্সরশিপ ইন ডেনমার্ক’ তথ্যচিত্রকে ‘অনবদ্য’ আখ্যা দেয়া এক চলচ্চিত্র সমালোচকের রিভিউর প্রতিক্রিয়ায় তখনই একটি নিবন্ধ লিখেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক ভিনসেন্ট ক্যানবি। তিনি লিখেন, ‘এটি হয়তো অনেককেই মুগ্ধ করবে, কিন্তু তারপরই এটি অনেক কিছুকেই হুমকির মুখে ফেলবে, যেটা নিয়ে কথা বলা অত ফ্যাশনেবল নয়, বরং কঠিন। যেমন: বিশুদ্ধবাদী বিবেক ও আমাদের যৌনতা সংক্রান্ত ট্যাবু, যেটি আমরা স্বীকার করি আর না করি, আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। আর এর সঙ্গে মনের সম্পর্ক নেই, আছে আবেগের সম্পর্ক।’
এখন যেকোনো বিতর্কিত যৌন কনটেন্ট-এর বিষয়ে উপরের কথাগুলো প্রয়োগ করে দেখুন। আজ অবধি সেই কথাগুলো কারও কারও কথার সঙ্গে মিলে যায়। এই তো এই সপ্তাহেই, কয়েক মাসের বিতর্ক, যৌন শিক্ষাবিদ ও বাকস্বাধীনতা এ্যাক্টিভিস্টদের প্রতিবাদের মুখে যুক্তরাজ্য সরকার তাদের বিতর্কিত বয়স যাচাইকরণ বিল প্রত্যাহার করেছে। এই পর্নো শিল্পের আকার হয়তো অনেক ব্যাপক, এর চাহিদা হয়তো অনেক বেশি, কিন্তু এই পর্নো নিয়ে কথা বলতে গেলে আমরা এখনো হিমশিম খাই। কিন্তু একটি বিষয় নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। সেটা হলো, পর্নো টিকে থাকবেই! এই শিল্প নিয়ে লেখা প্রত্যেকটি ঐতিহাসিক বইপুস্তক এই উপসংহারই টেনেছে। (ফ্রাঙ্কি কুকনি একজন লেখিকা ও সাংবাদিক। তার এই নিবন্ধ মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস-এর ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে)।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877