স্বদেশ ডেস্ক: কাজের বৈধ অনুমোদন (আকামা) থাকা সত্ত্বেও গত দুদিনে ৩৭৩ বাংলাদেশি শ্রমিককে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি পুলিশ। শুক্রবার রাতে ২০০ জন এবং শনিবার রাতে ১৭৩ জন ফিরে আসেন। এর আগে গত ৯ অক্টোবর ৯১ জন, ৮ অক্টোবর ১০৫ জন, ৪ অক্টোবর ১২০ জন এবং ৩ অক্টোবর ১৩০ জন বাংলাদেশি কর্মীকে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ভাগ্য বদলের আশায় সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে স্বপ্নের দেশ সৌদি আরবে গিয়েছিলেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। কিন্তু তাদেরকে মিথ্যা অভিযোগে শূন্যহাতে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। দেশে ফেরা অনেকে জানিয়েছেন, তাদের আকামা থাকা সত্ত্বেও তাদের ধরে সবজি, খেজুর ও পানি বিক্রিসহ ভিক্ষা করার মতো মিথ্যা অভিযোগ এনে দেশে পাঠানো হচ্ছে। শনিবার (২৬ অক্টোবর) ফেরত আসাদের মধ্যে ছিলেন দুই ভাই নড়াইলের নয়ন ও শুক্কুর মোল্লা। এর মধ্যে নয়ন চার বছর আগে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন রং মিস্ত্রির কাজ নিয়ে। মাত্র দুই মাস আগে ছোট ভাই শুক্কুর মোল্লাকে একই কাজে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুইজনকে শূন্য হাতে গতকাল দেশে ফিরতে হয়েছে। নয়নের অভিযোগ, ছোট ভাই বাজার করতে বের হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেন। এ খবর শুনে ছুটে যান তিনি। কিন্তু সে দেশের পুলিশ কোনো কথা শোনেনি। তাদের দুই ভাইকে ধরেই দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
বাংলাদেশি শ্রমিক: ভোলার ফুয়াদ হোসেন দু’বছর আগে ছয় লাখ টাকা খরচ করে ফ্রি ভিসার নামে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, বৈধ আকামা থাকার পরেও তাকে গ্রেফতার করা হলো তিনি বুঝতে পারছেন না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে কথা বললে তাকে বলা হয়েছে, আপনারা এভাবে আসেন কেন? যেভাবে আসছেন, সেভাবেই সমাধান করেন। মুন্সিগঞ্জের মহিউদ্দিন জানান, গত ১০ বছর ধরে তিনি সৌদি আরবে কাজ করেছেন। আকামাসহ বৈধভাবেই ছিলেন। সম্প্রতি নামাজ পড়তে মসজিদে যাবার পথে সৌদি ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে। আকামা থাকার পরও আটকের কারণ জানতে চাইলে তাকে মারধর করা হয় ও দেশে ফেরত পাঠানো হয়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে কাজ করা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর প্রায় ১৬ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিককে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ৭৯ হাজার ১০৬।
ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ফেরত আসা কর্মীরা যেসব বর্ণনা দিচ্ছেন সেগুলো মর্মান্তিক। সাধারণ ফ্রি ভিসার নামে গিয়ে এক নিয়োগকর্তার বদলে আরেক জায়গায় কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লে অনেক লোক ফেরত আসতো। কিন্তু এবার অনেকেই বলছেন, তাদের আকামা থাকার পরেও ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিশেষ করে যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই অনেককে ফিরতে হচ্ছে যারা খরচের টাকার কিছুই তুলতে পারেননি। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে এই দায় নিতে হবে। পাশাপাশি নতুন করে কেউ যেন সেখানে গিয়ে এমন বিপদে না পড়ে সেটা নিশ্চিত করতে হবে বলেও জানান শরিফুল হাসান।