বিশ্বের বৃহৎ স্মার্টফোন বাজার চীন। অথচ দেশটিতে স্মার্টফোন উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক হ্যান্ডসেট জায়ান্ট স্যামসাং। চীনে বাজার দখল কমে ১ শতাংশের নিচে নেমে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। খবর রয়টার্স।
গত বছর ডিসেম্বরে চীনের তিয়ানজিনে একটি সেলফোন উৎপাদন কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল স্যামসাং। দেশটিতে স্থানীয় সাশ্রয়ী ডিভাইস নির্মাতাদের কারণে তীব্র প্রতিযোগিতা এবং বিক্রি কমে যাওয়ায় কারখানাটি বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এর ছয় মাস পর কার্যক্রম চালু থাকা বাকি একটি মাত্র স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানার উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিল স্যামসাং।
চীনে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন বিক্রি ৪০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু এর আগে টানা তিন প্রান্তিকে দেশটিতে ডিভাইস বিক্রির ক্ষেত্রে বড় ধরনের পতন দেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। চীনের বাজারে নাজুক অবস্থানে থাকলেও বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের শীর্ষস্থান এখনো দখলে রেখেছে স্যামসাং। ডিভাইস বাজারে চীনা প্রতিদ্বন্দ্ব্বীদের অংশীদারিত্ব ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। যে কারণে স্মার্টফোন ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীরা তুলনামূলক কম দামে হ্যান্ডসেট বিক্রি করায় দেশটিতে চাহিদা কমেছে স্যামসাং ডিভাইসের। বর্তমানে চীনের স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাংয়ের দখল ১ শতাংশের নিচে নেমেছে। অথচ পাঁচ বছর আগেও দেশটিতে এর দখল ছিল উল্লেখযোগ্য। হুয়াওয়ের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে বাজার দখল হারিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে চীনের স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাংয়ের দখল ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানটির বাজার দখল সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশটিতে অ্যান্টি দক্ষিণ কোরিয়া মনোভাবের কারণে স্যামসাং ডিভাইস কমেছে বলে মনে করা হয়।
গত বুধবার এক বিবৃতিতে স্যামসাং জানিয়েছে, তাদের স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানাগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলমান, তা সত্ত্বেও তাদের একটি কঠোর সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হয়েছে। চীনের তিয়ানজিন স্যামসাং ইলেকট্রনিকস টেলিকমিউনিকেশন নামে ফোন উৎপাদন কারখানার কার্যক্রম স্থগিতের পর বিদ্যমান একটি মাত্র কারখানারও উৎপাদন কমাতে যাচ্ছে।
গত বছরের ডিসেম্বরের ঘোষণা অনুযায়ী, স্যামসাং তাদের তিয়ানজিন কারখানার ২ হাজার ৬০০ জন কর্মীকে নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ দেয়ার পাশাপাশি অন্য স্যামসাং কারখানায় কাজের সুযোগ করে দিয়েছে।
চীনে ডিভাইস উৎপাদন এখন ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। যে কারণে ভিয়েতনাম ও ভারতের মতো ডিভাইস উৎপাদন ব্যয় কম, এমন দেশগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে স্যামসাং। চীনে প্রতিষ্ঠানটির দুটি উৎপাদন কারখানার একটি বন্ধ করা হলেও গুয়াংডং রাজ্যের হুইঝু কারখানা এখন পর্যন্ত চালু রাখার পক্ষে মত দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে উৎপাদন কমিয়ে আনা হচ্ছে।
হুইঝু কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা কিংবা কর্মী সংখ্যা নিয়ে মন্তব্য করেনি স্যামসাং। উৎপাদন কমানো হলে কর্মী ছাঁটাই করা হবে কিনা, সে বিষয়েও কোনো তথ্য দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের তিয়ানজিন কারখানায় বছরে ৩ কোটি ৬০ লাখ ইউনিট সেলফোন উৎপাদন করত স্যামসাং। অন্যদিকে হুইঝু কারখানায় বছরে উৎপাদন হয় ৭ কোটি ২০ লাখ ইউনিট। অথচ ভিয়েতনামের দুই কারখানায় বছরে ২৪ কোটি ইউনিট সেলফোন উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি।
শুধু স্যামসাং নয়, যেকোনো স্মার্টফোন নির্মাতার জন্যই চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। স্যামসাংয়ের মতো ডিভাইস জায়ান্টরা দেশটির মোবাইল চিপ শিল্পের প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক নীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভিয়েতনাম ও ভারতের সেলফোন উৎপাদন কারখানায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছে স্যামসাং। নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে এসব কারখানায় উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর ভারতের নয়ডায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেলফোন উৎপাদন কারখানা চালু করেছে স্যামসাং। এটিকে রফতানি হাব হিসেবে বর্ণনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।