স্বদেশ ডেস্ক: কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিবেচনায় বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম বলে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড এসএমই ফোরাম। আর এসএমই প্রতিষ্ঠানের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম। কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা শিল্প সংখ্যায় বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া জায়গা হয়নি দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশের। রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে আয়োজিত এক কর্মশালায় এ তথ্য তুলে ধরে প্রিজম। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পটি এসএমই খাতের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য নিরসন বিষয়ে কাজ করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে এসএমই খাতে কর্মসংস্থানের পরিমাণ ৭৩ লাখ। ৩ কোটি ৮২ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এ তালিকায় সবার শীর্ষে জাপান। এসএমই খাতে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি কর্মসংস্থান রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের।
কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পঞ্চম স্থানে থাকা বাংলাদেশ এসএমই শিল্পসংখ্যায় বিশ্বে সপ্তম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে এ খাতে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮ লাখ ৫০ হাজার। ৪০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প নিয়ে শীর্ষে রয়েছে উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো। এসএমই শিল্পসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা অন্য দেশগুলো হলো দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, জাপান, ঘানা ও যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে এসএমই খাতের তথ্য পর্যালোচনা করে প্রিজম জানায়, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান ২৫ শতাংশ হলেও দেশে শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশের জোগান দিচ্ছে এসএমই। এ খাতের ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, ঋণ পাওয়া তাদের জন্য বড় সমস্যা। এসএমই খাতে ঋণের ঘাটতির পরিমাণ ১৮৪ বিলিয়ন ডলার। প্রতি এসএমইতে গড়ে ঋণের ঘাটতি রয়েছে ২২৮৮ ডলার।
দেশে ৭০ লাখ ৮১ হাজার শিল্পের মধ্যে ৬০ লাখ ৮০ হাজার কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প ১ লাখ ১০ হাজার, ছোট শিল্প ৮ লাখ ৫০ হাজার, মাঝারি শিল্প ৭১ হাজার ও ৫২ হাজার বৃহৎ শিল্প রয়েছে। এসএমই খাতে বিভিন্ন দেশের বিতরণ করা ঋণের চিত্র তুলে ধরে প্রিজম জানায়, ২০১৭ সালে জিডিপির অনুপাতে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে ঋণ দিয়েছে ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ। কম্বোডিয়ায় এটি ১৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ ও থাইল্যান্ডে ২৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় আমাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। বৃহৎ শিল্প যতই হোক না কেন, এসএমই একটি দেশের অর্থনীতির মূল শক্তি। তাই এসএমইর বিকাশে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বিসিককে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে এসএমই খাতের বিকাশ ঘটাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা আইটি ফ্রিল্যান্সারদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে কাজ করছি। আগামী জানুয়ারির মধ্যে ৬-৭ লাখ ফ্রিল্যান্সারকে নিবন্ধনের আওতায় আনা গেলে এ খাতে বছরে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করা সম্ভব হবে। ফ্রিল্যান্সারদেরও ব্যাংকঋণ পাওয়া সহজ হবে। তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের বিকাশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা যে তৈরি পোশাক রপ্তানি করি, তার মধ্যে ৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয় এক্সেসরিজ। পোশাকের সঙ্গে জিপার, বোতাম, হ্যাঙ্গারসহ এ ধরনের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এর বাইরেও এসব এক্সেসরিজ সরাসরি চীন, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করছে বাংলাদেশ। শিল্পসচিব আবদুল হালিম বলেন, বর্তমানে জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ। ২০৪১ সালের মধ্যে তা ২৮ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ওই সময় জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান হবে ৪০ শতাংশ। সাভার ট্যানারিপল্লী সম্পর্কে তিনি বলেন, এক সময় ভেবেছিলাম হয়তো প্রকল্পটি ব্যর্থ হয় কি-না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা এ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পর কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে সিইটিপি পুরোপুরি চালু হবে। এটি হলে ২০২৪ সালের মধ্যে চামড়া খাত থেকে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। এখন এ খাত থেকে আয়ের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা বেশি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা হাসান জানানÑ যশোর, টাঙ্গাইল, খুলনাসহ কয়েকটি জেলায় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব শিল্পনগরীর আয়তন হবে ২০ হাজার একর। এগুলো হলে ২০৩০ সালের মধ্যে এক কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বেজা, বেপজা ও বিডার মতো বিসিকও ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করে উদ্যোক্তাদের হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করবে বলেও জানান তিনি।