রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন

তিন মাসে সরকারের ঋণ ২৮হজার কোটি টাকা….?

তিন মাসে সরকারের ঋণ ২৮হজার কোটি টাকা….?

স্বদেশ ডেস্ক: সঞ্চয়পত্র বিক্রি ব্যাপক হারে কমে যাওয়া ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় সন্তোষজনক না হওয়াসহ নানা কারণে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার হার বেড়েই চলেছে৷ ফলে পুরো অর্থবছরের জন্য ব্যাংকিং খাত থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে তার ৬১ শতাংশই অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে নিয়ে ফেলেছে সরকার৷ চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা৷ কিন্তু জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসেই এ খাত থেকে ২৮ হাজার ৭১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার৷ বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে৷ অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, আর্থিক খাতে অভ্যন্তরীণ ঋণপ্রবাহে উল্টো গতি বিরাজ করছে৷ অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেশি হারে বাড়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না৷ বরং গত বছরের তুলনায় কমেছে৷ অর্থাত্ বেসরকারি খাতের চেয়ে সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেশি মাত্রায় বেড়েছে৷ এতে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, মূলত: রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী না হওয়ায় এবং সঞ্চয়পত্র থেকে গ্রাহক মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় বিক্রি ব্যাপক হারে কমে গেছে৷ ফলে, অনেকটা বাধ্য হয়েই এখন ব্যাংকিংখাত থেকে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে৷ ব্যাংকিংখাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়া বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে দেশে অভ্যন্তরীণ ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ২.০৩ শতাংশ৷ গত অর্থবছরে একই সময়ে বেড়েছিল ০.৯৫ শতাংশ৷ সামগ্রিকভাবে ঋণপ্রবাহ বাড়লেও এর বড় অংশই যাচ্ছে সরকারি খাতে৷ গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছিল ৭.১৬ শতাংশ৷ চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ২২.১৬ শতাংশ৷ অন্যদিকে, গত বছরের জুলাই-আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছিল ০.২৯ শতাংশ৷ চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ঋণপ্রবাহ তো বাড়েইনি, বরং গত অর্থবছরের ওই সময়ের তুলনায় কমেছে ০.২৮ শতাংশ৷
সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায় বাড়লে সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার তেমন প্রয়োজন পড়ত না৷ বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা যেতো৷ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)৷ এনবিআরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুলাই-আগস্ট মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা৷ কিন্তু আদায় হয়েছে ২৯ হাজার ৬২০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা৷ অর্থাত্ এই দুই মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা৷ অন্য দিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩.৩৫ শতাংশ৷ কিন্তু বাজেটে এই রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ধরা রয়েছে ১৬.শতাংশ৷ সঞ্চয়পত্র বিক্রি কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে অত্যাধিক কড়াকড়ি আরোপ এবং কর বৃদ্ধির কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে গ্রাহকরা অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন৷ এ জন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রিও কমে গেছে৷ চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৩ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে; যা গত বছরের একই সময়ের ৩ ভাগের ১ ভাগ৷ জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ১১ হাজার ৩০৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে৷ এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৭ হাজার ৬৪৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা৷ এ হিসাবে এই ২ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা৷ গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই সময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৫৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা৷
অর্থনীতিবিদরা জানান, বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকার মূলত দুইভাবে ঋণ নিয়ে থাকে৷ একটি হচ্ছে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এবং অন্যটি হচ্ছে, সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে৷ যেহেতু সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে৷ তাই বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকেই বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে৷ যদি রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব না হয়৷ তবে বছর শেষে বাজেটে প্রক্ষেপিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ঋণ সরকারকে ব্যাংক থেকে নিতে হবে৷
ব্যাংকিংখাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকার ব্যাংকিংখাত থেকে ঋণ নিয়েছে ৩০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা৷ এর আগের অর্থবছরে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এর পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা৷ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকার ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেছে ১৮ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং খাতে যে উদ্বৃত্ত তারল্য দেখানো হচ্ছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার কিছুটা পার্থক্য রয়েছে৷ তিনি বলেন, কিছু কিছু ব্যাংকের বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে বাড়তি তহবিল রয়েছে৷ কিন্তু ওই সব ব্যাংক ইচ্ছা করলেই অতিরিক্ত ঋণ দিতে পারে না৷ তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবেই খারাপ অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকিং খাত৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ঋণ আদায় বাড়ছে না৷ বর্তমান অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে এর ভবিষ্যত্ কী- এমন এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই গভর্নর জানান, এর ভবিষ্যত্ মোটেও সুখকর নয়৷ ব্যাংকিং খাতের সমস্যার অর্থ হলো, এটি পুরো অর্থনীতির জন্য সমস্যা হয়ে দেখা দেবে৷ এতে যে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে, তা কাগজে-কলমে অর্জন হবে, বাস্তবে অর্জন হবে না৷

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877