ভারতে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসা ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) যোগ দিয়েছেন জনপ্রিয় বাংলা সিনেমা ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র নায়িকা অঞ্জু ঘোষ। এরপরই তাকে নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল তাকে বাংলাদেশি বলে আখ্যায়িত করেছে। আর তৃণমূলের জবাব দিতে অঞ্জু ঘোষের ভারতীয় নাগরিকত্বের একাধিক প্রমাণ দিয়েছে বিজেপি। তবে বিজেপির এসব প্রমাণে বিভিন্ন অসংগতি ধরা পড়েছে।
তৃণমূলের তরফে অঞ্জু ঘোষের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, ‘তিনি আসলে বাংলাদেশের নাগরিক এবং কারসাজি করে তাকে ভারতের নাগরিক বানানো হয়েছে।’
একজন বিদেশি কীভাবে ভারতের একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দেন, সেই প্রশ্ন তুলছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল। তবে বিজেপি দাবি করেছে অঞ্জুর ঘোষের বাবা বাংলাদেশের মানুষ ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার জন্ম-কর্ম, সবই কলকাতায়।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের উপস্থিতিতে বুধবার দলে যোগ দেন অঞ্জু। তার নাগরিকত্বের বিষয়ে দিলীপ বলেন, ‘ওর জন্মের সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড-সবই আমরা দেখেছি। তার বাবা বাংলাদেশের মানুষ ছিলেন, তিনি আর জীবিত নেই। কিন্তু মা এখানকার মানুষ। তিনি সল্ট লেকে থাকেন বহু বছর ধরে। সব নথিই আমরা সামাজিক মাধ্যমে তুলেও দিয়েছি। এ নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।’
এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে একটি সংবাদ সম্মেলন করে রাজ্য বিজেপি। সেখানে দলের নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার যেসব নথি পেশ করেছেন, সেগুলো বিজেপির ‘মিডিয়া সেল’ সাংবাদিকদের দিয়েছে। সেই নথিতে অঞ্জু ঘোষের দুটি পৃথক জন্মতারিখ পাওয়া গেছে।
কলকাতা পুরনিগমের জন্ম রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, আধার কার্ড আর ভারতীয় পাসপোর্ট অনুযায়ী তার জন্মের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৬। জন্ম রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটটি ইস্যু করা হয়েছে অবশ্য অনেক পরে- ২০০৩ সালের ২২ ডিসেম্বর।
আবার আয়কর দপ্তরের পার্মানেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর (যা মোটামুটিভাবে প্রতিটি আর্থিক লেনদেন এবং ব্যাংকের কাজে প্রয়োজন হয়) সেখানে লেখা আছে জন্মতারিখ ৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৭।
দেওয়া হয়েছে অঞ্জু ঘোষের ভোটার পরিচয়পত্রও। সেখানে ২০০২ সালের পয়লা জানুয়ারিতে তার বয়স লেখা রয়েছে ৩৫ বছর অর্থাৎ জন্মসাল ১৯৬৭। তার দুটি পৃথক জন্মতারিখ কীভাবে হলো, বিজেপি অবশ্য এখনো পর্যন্ত তার ব্যাখ্যা দেয়নি।
অন্যদিকে তৃণমূল আবারও বলছে, কোথাও একটা কারসাজি করে অঞ্জু ঘোষকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
দলের নেতা রাহুল চক্রবর্তীর ভাষ্য, ‘২০০২ সালে তার ভোটার কার্ড ইস্যু হয়, আর তিনি পাসপোর্ট পান ২০১৮ সালে! এটা হয় নাকি? আমরা নিঃসন্দেহ যে ২০১৮ সালের আগেও তিনি বাংলাদেশে গেছেন, থেকেছেন, কাজ করেছেন! কীভাবে গেলেন তাহলে? আমরা এখনো বলছি, অঞ্জু ঘোষ বাংলাদেশের নাগরিক। একটা কারসাজি করা হয়েছে কোথাও।’
একজন বিদেশি নাগরিককে কীভাবে দেশের ক্ষমতাসীন দলের সদস্য করা হয়, সেই প্রশ্নও তুলছেন তিনি।
লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে দারুণ ফলাফল করার পরে বিজেপিতে নানা পেশার মানুষের, নানা দলের নেতাকর্মীর যোগদান করার ধুম লেগেছে। এর জন্য বিজেপি রীতিমতো যোগদান মেলারও আয়োজন করছে। এর ফলে গত দুই সপ্তাহে বিতর্কও তৈরি হয়েছে বারবার।