স্বদেশ ডেস্ক:
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, যারা ক্ষমতায় আছেন তারা নিজেরাই মুক্ত নন। তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে বন্দী আছেন। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপি কেন ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালায় কতদিন বলেছেন? যিনি মূল দায়িত্বে আছেন, তাকে গ্রেফতার করে রেখেছেন তাহলে কাউকে তো ভারপ্রাপ্ত বানাতেই হবে। আর আপনাদের যারা আছেন তারা কি গ্রেফতার হয়েছেন? আচ্ছা আপনারা বলেন তো যুবলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের নামে কি মামলা? স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারির নামে কি মামলা? কোন মামলা আছে? তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে কেউ জানেন? বলে বেড়াচ্ছেন আমরা শুদ্ধি অভিযান করছি। গত ১০ বছরে যে সকল অশুদ্ধ কাজ হয়েছে সেগুলো শুদ্ধ করবেন তো? যদি মনে করেন যারা টাকা খেয়েছে, দুর্নীতি করেছে, ঘুষ খেয়েছে, দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গিয়েছে একটা তদন্তও তো করেননি।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে’ অপরাজেয় বাংলাদেশ আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। অপরাজেয় বাংলাদেশের সহসভাপতি ভিপি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সিরাজীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক সুলতানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য অর্পনা রায়, তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বাদল।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, লাখো লোক শেয়ারবাজারের লুটপাটের কারণে নিঃস্ব হয়ে গেছে। ব্যাংকার ইব্রাহিম খালেদ এই বিষয়ে তদন্ত করেছেন এবং তিনি একটি রিপোর্ট দিয়েছিলেন। সেই রিপোর্ট আজও পর্যন্ত কেউ দেখেনি। কারণ অভিযুক্তদের মধ্যে ছিল সরকারের আশ্রিত, মদদকৃত লোকজন। তারা শেয়ারবাজার ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, শেয়ার মার্কেটে নিঃস্ব হয়ে কতগুলো লোক আত্মহত্যা করেছেন, এতগুলো লোক জীবন দিয়েছে। অথচ যারা মানুষকে নিঃস্ব করার জন্য শেয়ারবাজারকে ধ্বংস করেছে এবং হত্যাকাণ্ডের জন্য তাদের একজনের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এটা কি সত্যি শুদ্ধি অভিযান? বেসিক ব্যাংক লুট, সোনালী ব্যাংকের টাকা লুট, হলমার্কের টাকা লুট, ব্যাংকগুলো ধ্বংস করার পরও সরকার ব্যাংকগুলোকে ঠিক করার চেষ্টাও করেনি। ব্যাংকের টাকা যারা যারা লুট করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়নি।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, পাঁচ বছর আগে যাদেরকে রিকশায় চড়ে যেতে দেখেছি আজ তারা বিরাট পাজারোতে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর টাকা পেলেন কোথায়? সেই ব্যাপারে কোনো বক্তৃতা নাই, পুরো ঘটনা হচ্ছে- আসলে কোনো শুদ্ধি অভিযান নেই। যা হচ্ছে তা হলো- দলের মধ্যে গোলমাল, নেতৃত্ব নিয়ে ঝগড়া। যুবলীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, একমাস পরে যে সংগঠনের সম্মেলন হবে, কেনই বা একমাস আগেই তার প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি বদলে দিতে হয়? সম্মেলনে বদলাতে পারতেন না? সম্মেলনে কমিটি বদলায় না? এক মাস অপেক্ষা করতে পারেন নাই। তার মানে দলের মধ্যে গোলমাল সামলে নেয়ার চেষ্টা করছেন, আর মানুষকে বলছেন শুদ্ধি অভিযান চলছে।
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, আপনারা কোন শুদ্ধ পদ্ধতিতে ক্ষমতায় এসেছেন? ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোট হয়েছে ২৯ তারিখ রাতেই। ভোটের আগের রাতেই ভোট লুট করে নিয়ে নেয়া হয়েছে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, যারা বলতে চান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছেন, তাহলে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি তো গত বছরের ডিসেম্বরের ২৯ তারিখ রাতে হয়েছে, সেটার ব্যাপরে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন?
নুসরাত হত্যার রায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ৬ মাসের মাথায় আপনারা বিচারের রায় দিয়েছেন, আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু নুসরাত হত্যায় অভিযুক্ত ওসি মোয়াজ্জেমের বিষয়ে কি রায় হলো? সে কিভাবে এর ফাঁকফোকর দিক দিয়ে বের হয়ে গেল? পুলিশ বলে সে বের হয়ে গেলো? কারণ সে ২৯ ডিসেম্বরের রাতে ভোট ডাকাতি করতে সহযোগিতা করেছিলো।