শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ অপরাহ্ন

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা : বিবিসির বিশ্লেষণ

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা : বিবিসির বিশ্লেষণ

স্বদেশ ডেস্ক:

পেনসিলভানিয়া রাজ্যে সমাবেশে গুলিতে আহত হওয়ার পর স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে নিউ জার্সির বাড়িতে ফিরেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টায় গুলি চালানো হয়েছে।

মুখের এক পাশে ও কানে রক্ত নিয়ে সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের সহায়তায় বেরিয়ে আসার পর ট্রাম্প বলেন, তার কানের ওপরের অংশের চামড়া ভেদ করে বুলেট চলে গেছে।

মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই ট্রাম্পের ওপর হামলার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেছে। সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের গুলিতে নিহত হওয়া ২০ বছর বয়সী ওই হামলাকারীর নাম থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস।

ট্রাম্প ও তার মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প সিক্রেট সার্ভিস ও অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। তার ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষার জন্য লড়াই করা ট্রাম্প বন্ধ করবেন না।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকরা ছাড়াও বিশ্বনেতারা তীব্র নিন্দা জানান।

এ ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস, রাজনীতি ও নভেম্বরের নির্বাচনে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে বিবিসির কয়েকজন সাংবাদিক।

নির্বাচনী প্রচারণার ধরনকে বদলে দেবে
বিবিসির নর্থ আমেরিকা এডিটর সারাহ স্মিথ লেখেন, মুখে রক্ত নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প মুষ্টিবদ্ধ হাত ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন এবং সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা তাকে মঞ্চ থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন- এ ছবি শুধু ইতিহাস বানায়নি, বরং এগুলোই নভেম্বরের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে।

এই রাজনৈতিক সহিংসতার নিঃসন্দেহে প্রভাব পড়বে নির্বাচনী প্রচারণায়।

ছবিটি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন ট্রাম্পের ছেলে এরিক ট্রাম্প, আর ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘এই সেই যোদ্ধা যাকে যুক্তরাষ্ট্রের দরকার।’

ঘটনার পরপর একটি টেলিভিশনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, এ ধরনের সহিংসতার জায়গা যুক্তরাষ্ট্রে নেই। তিনি তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং রাতে তিনি তার সাথে কথা বলবেন বলেও জানান।

বাইডেনের নির্বাচনী প্রচার-দল সব ধরনের রাজনৈতিক বিবৃতি বন্ধ রেখেছে এবং দ্রুতই টেলিভিশন বিজ্ঞাপনগুলো না দেয়ার জন্য কাজ করছেন। কারণ তাদের বিশ্বাস, ট্রাম্পের ওপর হামলার এই সময়ে এগুলো মানানসই হবে না। বরং যা ঘটেছে তার নিন্দা জানানোর দিকে মনোযোগ দেয়াই হবে শ্রেয়।

সব মতের রাজনীতিকরাই এক হয়ে বলছেন, গণতন্ত্রে সহিংসতার জায়গা নেই।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন ও জিমি কার্টার দ্রুতই এ সহিংসতার তীব্র নিন্দা করেন এবং ট্রাম্প গুরুতর আহত হননি শুনে তারা কতটা স্বস্তি পেয়েছেন প্রকাশ করেন।

কিন্তু ট্রাম্পের কিছু ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সমর্থকরা সহিংসতার জন্য ইতোমধ্যেই বাইডেনকে দোষারোপ করা শুরু করেছেন। একজন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রেসিডেন্টকে অভিযুক্ত করেছেন ‘হত্যাকাণ্ডের উস্কানি দেয়ার জন্য’।

সিনেটর জেডি ভান্সকে মনে করা হচ্ছে ট্রাম্পের সম্ভাব্য ভাইস প্রেসিডেন্টদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় আছেন। তিনি বলেন, বাইডেনের প্রচারণাই সরাসরি এ ঘটনার দিকে নিয়ে গেছে।

একই ধরনের বক্তব্য এসেছে আরো কয়েকজন রিপাবলিকান রাজনীতিকের দিক থেকেও। ধারণা করা যায়, এর প্রতিবাদ নিশ্চিতভাবেই তাদের প্রতিপক্ষের দিক থেকে আসবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির বিপজ্জনক এই সময়ে।

আমরা এখনি লড়াইটা দেখতে পাচ্ছি যা সামনে আরো কুৎসিত হয়ে উঠতে পারে, যা আসলে নির্বাচনী প্রচারণার ধরনটাকেই বদলে দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির অন্ধকার ও বিপজ্জনক অধ্যায়
বিবিসির নর্থ আমেরিকা করেসপন্ডেন্ট অ্যান্টনি জার্চার লিখেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলা দেশটির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইনকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে সিকিউরিটি ও সেফটির যে ধারণা গত কয়েক দশক ধরে তৈরি হয়েছে সেটি নাটকীয়ভাবে বিপর্যস্ত হলো।

১৯৮১ সালে গুলিতে রোনাল্ড রিগ্যান গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কোনো প্রেসিডেন্ট বা প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর ওপর এ ধরনের ঘটনা আর ঘটেনি।

যুক্তরাষ্ট্রে যখন কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা হয় তখন রাজনৈতিক মেরুকরণ ও ত্রুটিপূর্ণ কার্যক্রম দেখা যায়। যখন কোনো অস্ত্র কোনো ব্যক্তির ইচ্ছায় ব্যবহৃত হয় তখন এটি ইতিহাসের গতি প্রকৃতি পাল্টে দিতে পারে।

শনিবারের এই ঘটনার প্রভাব যুক্তরাষ্ট্র এবং এর রাজনৈতিক গতি প্রকৃতির ওপর কতটা হবে তা অনুমান করা কঠিন।

কিন্তু এখন একটা বিষয় পরিষ্কার, নির্বাচনী বছরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি একটি নতুন কিন্তু প্রাণঘাতী মোড় নিলো।

আমেরিকার ইতিহাসের দুঃখজনক মুহূর্ত
ওয়াশিংটন করেসপন্ডেন্ট গ্যারি ওডনাহিউ পেনসিলভানিয়া থেকে লেখেন, ‘এটা ছিল কিছুটা ভয়ের। মঞ্চের সামনের দিকে যারা ছিলেন তাদের মতো বিপদের মধ্যে ছিলাম না আমরা, তবে সত্যি বলতে যখন আপনাকে গুলি করতে শুরু করে তখন ভয় চলেই আসে।’

আমরা আরো দেখলাম লোকজন চিৎকার করে বেরিয়ে আসতে শুরু করল এবং আমরা ভেবেছিলাম আবার কাজ শুরু করা কিছুটা নিরাপদ হবে কিন্তু লোকজন ছিলো ভীষণ হতাশ ও ক্ষুব্ধ, খুবই আবেগাক্রান্ত। খুব ক্ষুব্ধ অবশ্যই।

নিরাপত্তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠতে যাচ্ছে। এটা ছিল একটা আউটডোর ভেন্যু এবং সে কারণে এর কিছু প্যারামিটার আছে- কেন নিচু ছাদগুলোতে তাদের কেউ ছিল না? কেন তারা সব ছাদ দেখেনি? কিভাবে একজন মানুষ একটি সেমি-অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে ছাদে গেল এবং সাবেক প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে পারলো?

আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটা দুঃখজনক, দুঃখজনক মুহূর্ত।

ক্ষোভ ছড়িয়েছে সব জায়গায়- সমস্যা হলো কিভাবে এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এবং শুধু নির্বাচন নয়, দেশের ভবিষ্যতের জন্যও এর অর্থ কী দাঁড়াবে।

রাজনৈতিক নেতৃত্ব ঠিক করবেন কিভাবে এটি এগুবে, কিভাবে এগুলোর বাইরে গিয়ে তারা দেশকে এগিয়ে নেবেন এবং এটা সঠিকভাবে না হলে এটি খুব খারাপের দিকেও যেতে পারে।
সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877