স্বদেশ ডেস্ক:
সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ।
আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত জানায়।
এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন সমন্বয়ক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, তারা এখনি আন্দোলন স্থগিত করছেন না। রায় পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।
গত ৫ জুন নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট।
কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই রায় দেয়া হয়েছিল।
সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ লিখিত আদেশ না পাওয়ায় শুনানি কয়েকদিন পিছিয়ে বুধবারে ধার্য করা হয়েছিল।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আজ দশম দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যা সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকারি চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ নামক এই কর্মসূচিতে শুরুতে শুধুমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজগুলোর অংশগ্রহণ থাকলেও ধীরে ধীরে তা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এই আন্দোলনের সমন্বয়করা জানিয়েছেন, গতকালের মতো আজও শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টা থেকে শাহবাগ, নীলক্ষেত, বাংলামোটর, সাইন্সল্যাব, কারওয়ানবাজার, শ্যামলী, বকশীবাজার, গুলিস্তান, পল্টন, রামপুরা ব্রিজ, ফার্মগেট, মহাখালীসহ ঢাকার অন্তত ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জড়ো হচ্ছে।
এদিকে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতে শিক্ষার্থীরাও এদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টার মাঝেই অবস্থান নেয়া শুরু করেছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা এই আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবেন না।
সারাদেশের আন্দোলনের চিত্র
বুধবার সকাল ১০টা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা হলের নিজস্ব ব্যানার, এমনকি ডিপার্টমেন্টভিত্তিক ব্যানারে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে জড়ো হয়েছে।
সেখান থেকে তারা মিছিল করে শাহবাগ মোড়ে এসে জড়ো হয়েছে। শাহবাগ ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড় হওয়ায় তার প্রভাব গিয়ে শহরের অন্যান্য স্থানেও পড়েছে এবং যানজট বেড়ে যাচ্ছে।
ঢাকার অন্যান্য পয়েন্টগুলোর চিত্র হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশেপাশের কলেজের শিক্ষার্থীরা মিলে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থান অবরোধ করেছে।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও, তীতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা মহাখালী, ঢাকা কলেজসহ অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা সাইন্সল্যাব, বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীরা শ্যামলী, ব্র্যাক ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজ অবরোধ করবে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে তাদের দাবির কথা জানাচ্ছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যে ৬৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন, তাতে ২৩ জন সমন্বয়ক রয়েছেন।
সেই সমন্বয়কদের একজন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা ‘এক দফা’ দাবিতে সড়ক অবরোধ করলেও ব্লকেড চলাকালীন তারা অ্যাম্বুলেন্স, মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি রোগীর গাড়ি, সাংবাদিক, ফায়ার সার্ভিস ইত্যাদি যানবাহন চলাচলে বাধা দিবে না।
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বরিশাল-পটুয়াখালী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টার মাঝে অবস্থান নিয়েছেন; এমনটাই জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বয়করা।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দেশের সমস্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তো শুরু থেকেই আকাত্মতা প্রকাশ করেছে। এখন ধীরে ধীরে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে শামিল হচ্ছে।’
সূত্র : বিবিসি