সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১০:১৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মুরগির খোঁয়াড়ে মাকে রেখেছিল সন্তানরা, ঈদ করছেন বৃদ্ধাশ্রমে

মুরগির খোঁয়াড়ে মাকে রেখেছিল সন্তানরা, ঈদ করছেন বৃদ্ধাশ্রমে

শাহেরা বেগম ( ছদ্ম নাম)। বয়স আনুমানিক ৯৫ বছর। স্বামী ছিলেন এক সময়ের সাবেক ক্ষমতাশালী পুলিশ সুপার (এসপি)। স্বামী সন্তানদের নিয়ে খুব ভালোভাবেই চলছিল শাহেরার সংসার। সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করে সুন্দর ভবিষৎ গড়ে দিয়েছিলেন মা-বাবা। বেশ কয়েক বছর আগে স্বামী চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এরপর থেকেই সংসারে বোঝা হয়ে গিয়েছিলেন মা শাহেরা বেগম। সন্তানদের কাছে এতটাই অবহেলিত ছিলেন মা শাহেরা যে, সন্তানেরা তাকে মুরগির খোঁয়াড়ে রেখেছিল। মুরগীর সঙ্গে থাকা-খাওয়া, ঘুমানোই ছিল শাহেরার জীবন। এখন তার আশ্রয় হয়েছে একটি বৃদ্ধাশ্রমে।

রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকায় অসহায় ও আশ্রয়হীন বৃদ্ধদের জন্য ‘চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি বৃদ্ধাশ্রমে কয়েক মাস যাবত থাকছেন শাহেরা বেগম। এবারের ঈদও বৃদ্ধাশ্রমেই কাটালেন শাহেরা বেগম। বয়সের ভারে অসুস্থ এই নারীর সব রকমের দেখাশোনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এই বৃদ্ধাশ্রমের মূল পরিচালক মিল্টন সমাদ্দার।‘নার্সিং এজেন্সি’ নামে একটি এজেন্সি রয়েছে মিল্টনের। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সেবা দেয়াই সেই প্রতিষ্ঠানের কাজ। আর ওই প্রতিষ্ঠানের আয়ের টাকাতেই চলে মিল্টনের বৃদ্ধাশ্রমটি। সেখানে তাকে সব সময় সহযোগিতা করেন স্ত্রী মিঠু হালদার।

শাহেরা বেগম সম্পর্কে মিঠু হালদার দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে বলেন, ‘এই মা হলেন একজন সাবেক এসপির স্ত্রী। কিন্তু স্বামী মারা যাবার পরে, তার সন্তানরা তাকে এমনভাবে রেখেছিল যা আসলে বর্ণনা করে বলা যায় না। তাকে মুরগি রাখার খোঁয়াড়ে রেখেছিল। সেখানেই মুরগির ময়লা , বিষ্ঠার মধ্যেই থাকতেন তিনি। বিক্রমপুর এলাকায় তাদের বিশাল এক বাড়ি। কিন্তু বাড়ির কোনো ঘরেই জায়গা হয়নি এই মায়ের।’

মিঠু হালদার আরও বলেন, ‘আমরা যখন এমন একটি খবর পেলাম, তখন আমরা ঢাকা থেকে তিনটা গাড়ি নিয়ে ওই বাড়িতে যাই। আমাদের যাওয়ার খবর পেয়ে বাড়ির সবাই পালিয়ে ছিল। কারণ তারা ভেবেছিল তিনটা গাড়ি নিয়ে মনে হয় সঙ্গে পুলিশও এসেছে। এই ভয়ে কেউ বাড়িতে ছিল না। আমরা পরে স্থানীয় মানুষ ও প্রশাসনের সহায়তায় তাকে আমাদের বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে এসেছি। আমরা এখানে এনে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। এখন তিনি মোটামুটি সুস্থ আছেন।’

‘লন্ডনি’ আন্টিও এখন বৃদ্ধাশ্রমে

শুধুমাত্র শাহেরা বেগম নন, তার মতো এমন ৩২ জন নারী রয়েছেন এই বৃদ্ধশ্রমে। যারা প্রত্যেকই ঘর সংসার থেকে বিতাড়িত। ছেলে-মেয়ের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে এখন তাদের ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। তেমনি একজন ৭০ বছর বয়সী লন্ডনি আন্টি। সবাই তাকে এই নামেই ডাকেন। কারণ তিনি জীবনের দীর্ঘ সময় স্বামী-সন্তানসহ লন্ডনে কাটিয়েছেন।

লন্ডনি আন্টি দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে বলেন, ‘আমারদের গ্রামের বাড়ি খুলনার রাতল গেবা গ্রামে। লন্ডনেই আমার জন্ম, ওখানেই বিয়ে, ওখানেই ছেলে-মেয়ে ওখানেই সবই। এখন তারা সবাই লন্ডনে থাকেন। আমারে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’

ঈদ আসছে, ছেলে-মেয়ে বা পরিবার কারো কথা আপনার মনে পড়ছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ আমার কারো কথাই মনে রাখার দরকার নাই। তারা কেউ আমাকে মনে রাখেনি, আমিও কাউকে মনে রাখতে চাই না।’

‘চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ এর মালিক মিল্টন সমাদ্দার দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি বরিশালের উজিরপুর। এই যুগে অনেক সন্তানরা নিজের পিতা মাতাকে সময় দিতে চায় না। যান্ত্রিক সভ্যতা ও নিজেদের ব্যস্ততার কারণে অনেকেই ভুলতে বসেছে তাদের আপনজনদের।

অসহায় ও আশ্রয়হীন এমন বৃদ্ধদের খুঁজে বের করাটা এখন আমার নেশা ও পেশা হয়ে গেছে। নিজের ব্যবসা থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া বৃদ্ধদের ভরণপোষণ করি আমি। একই সঙ্গে মৃত্যৃর পর তাদের দাফন-কাফনের দায়িত্বও আমরা পালন করে থাকি। আমার স্ত্রী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চাকরি করেন। তার চাকরির অর্থও এখানেই ব্যয় করা হয়।’

মিন্টন বলেন, ‘আমি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বৃদ্ধাশ্রমটি শুরু করেছিলাম। এখানে মোট ১৬টি রুমে ৫৫ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৩ জন বৃদ্ধ বাবা ও ৩২ জন বৃদ্ধ মা রয়েছেন।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877