স্বদেশ ডেস্ক: একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় একটি গ্রাম্য সালিশে ৫ স্কুলছাত্রের মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে প্রত্যেককে কান ধরে ১০ বার করে উঠবসসহ শারিরীক শাস্তিও দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী ছাত্ররা লজ্জায় বাড়ির বাইরে বের হতে পারছেনা। এ নিয়ে গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থীদের স্বজনদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। উপজেলার জংলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সালিশি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন উপজেলার দুর্গানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আফসার আলী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা সবাই পার্শবর্তী বালশাবাড়ি গ্রামের হাজী আমিনুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। এরা হলো, উপজেলার মধুপুর গ্রামের আবু বক্কার সিদ্দিকীর ছেলে আজাহার আলী (১৪), খোকনের ছেলে রনি (১৪), আলহাজ আলীর ছেলে নাজমুল (১৪), আরদোস আলীর ছেলে রানা (১৪) ও শহীদুল ইসলামের ছেলে বরাত আলী (১৪)। সরজমিন ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্র, তাদের অভিভাবক ও গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, মধুপুর গ্রামের ওই ৫ স্কুল ছাত্র প্রতিদিন সকালে কোচিং করার জন্য জংলীপুর এলাকায় যেত।
একই সময়ে একই রাস্তায় দিয়ে পাশের বালশাবাড়ি গ্রামে কোচিং করতে যেতো জংলীপুর গ্রামের মনছুর রহমানের ছেলে তরিকুল ইসলাম ও তার চাচা মুছা’র মেয়ে সাদিয়া খাতুনসহ ১০ম শ্রেণীর আরও তিন শিক্ষার্থী। যাতায়াতের পথে তাদের মধ্যে কয়েকবার ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে তর্ক-বিতর্কের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে সাদিয়ার বাবা মুছা বাদী হয়ে থানায় মধুপুরের ওই ৫ ছাত্রদের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে স্কুল ছাত্র আজাহারকে আটক করে পুলিশ। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান আফসার আলী সালিশি বৈঠকে বিষয়টি মীমাংসার কথা বলে আজাহারকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। এরপর চেয়ারম্যান আফসার আলী ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে ৫ স্কুলছাত্রকে সমনজারি করে সালিশি বৈঠকে হাজির করান। শুরুতেই নাপিত ডেকে এনে ওই ৫ ছাত্রের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়। এরপর বিষয়টির শুনানী শেষে দ্বিতীয় দফায় তাদের ১০ বার করে কান ধরে উঠবস করানো হয় এবং শারীরিক শাস্তিও দেয়া হয়। উল্লাপাড়া থানার ওসি দেওয়ান কওশিক আহমেদ সোমবার বিকেলে মোবাইলে জানান, আজাহার নামে এক ছাত্রকে আটক করে থানায় আনার পর ইভটিজিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচারের জন্য তাকে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভুমি) কাছে পাঠানো হয়েছিল। তারপর কি হয়েছে আমার জানা নেই। ইউপি চেয়ারম্যান আফসার আলী বলেন, আমি চুলকাটার নির্দেশ দেইনি। ওই ছেলেদের চুলবড় হওয়ায় তাদের চুল কেটে সালিশি বৈঠকে আসতে বলা হয়েছিল। সালিশি বৈঠকের ২য় দফায় কান ধরে উঠবস ও শারীরিক শাস্তির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, এটুকু সাজা না দিলে, কিসের বিচার করলাম।