বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ১০:৫০ পূর্বাহ্ন

ইসলামে উদারতা ও আত্মমর্যাদার ভারসাম্য

স্বদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৯

মাওলানা শিব্বীর আহমদ: আরবের জনমানবহীন ফলফসলহীন এক অনাবাদ অঞ্চলে স্বীয় স্ত্রী হাজেরা আর শিশুপুত্র ইসমাইলকে মহান আল্লাহর নির্দেশে রেখে গিয়েছিলেন নবী ইবরাহিম (আ.)। পরে পুত্র ইসমাইলও নবুয়তপ্রাপ্ত হন। পিতা-পুত্র দুজনে মিলে নির্মাণ করেন মহান প্রভুর ঘর পবিত্র কাবা শরিফ। শুরু হয় হজের ধারা। পবিত্র কোরআনের কত সুন্দর বর্ণনা [ইবরাহিম (আ.) কে মহান আল্লাহর নির্দেশ] ‘তুমি মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার কাছে চলে আসবে হেঁটে হেঁটে, দূরদূরান্ত থেকে গভীর পথ মাড়িয়ে আগত শীর্ণকায় উটের পিঠে চড়ে।’ (সূরা হজ: ২৭)।
নবী ইবরাহিম (আ.) এর ছেলেবেলায় স্বগোত্রের সঙ্গে বিতর্ক হয়েছিল মূর্তির উপাসনা নিয়ে। তাদের অবর্তমানে মূর্তিশালায় ঢুকে মূর্তি গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে কথায় কুলাতে না পেরে তারা সোজা তাকে আগুনে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেয়। আল্লাহর কুদরতে তিনি সেদিন জ্বলন্ত অগ্নিকু- থেকে নিরাপদে বেরিয়ে আসেন। পবিত্র কোরআনে এ ঘটনাও বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। এই নবীর হাতেই নির্মিত পবিত্র কাবাঘর। সেই কাবাঘরে মানুষ হজ করতে আসে। পবিত্র এই ঘর তাওয়াফ করে। কিন্তু কালের আবর্তনে এই কাবাঘরের ভেতরেই স্থান করে নেয় তিনশ ষাটটি মূর্তি। যে মূর্তির উপাসনা নিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন স্বজাতির সঙ্গে, তারই হাতে নির্মিত পবিত্র ঘরটিতেও একটা সময় স্থান করে নিল এই মূর্তির দল। পৃথিবীজুড়ে ‘আল্লাহর ঘর’ বলে পরিচিত এই ঘরটি। অথচ এই ঘরের পড়শিরাই আল্লাহর দ্বীন ছেড়ে মূর্তিপূজায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত!
প্রিয়নবী (সা.) এর এ পৃথিবীতে আগমনকালে আরব সমাজ এ মূর্তিপূজার কৃষ্ণ আবরণে এভাবেই আচ্ছাদিত ছিল। জানা কথা, ইসলাম প্রথমেই মানুষকে আহ্বান জানায় সৃষ্টির উপাসনা ছেড়ে একমাত্র স্রষ্টা মহান আল্লাহর বন্দেগি ও দাসত্ব গ্রহণ করতে। তাই মরু আরবে ইসলামের ঘোষণাই ছিল মূর্তিপূজার মূলে কুঠারাঘাত। অথচ প্রিয়নবী (সা.) এর দাওয়াত গ্রহণ করে যারা মূর্তিপূজার অন্ধকার গলি থেকে উঠে আসছিলেন তাওহিদের আলোকিত রাজপথে, তাদেরই পবিত্র কোরআনে এ বলে সতর্ক করে দেয়া হলো ‘আল্লাহকে ছাড়া যাদের তারা ডাকে, তোমরা তাদের গালি দিও না!’ (সূরা আনআম: ১০৮)। সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এর রহস্য ‘এমন করলে তারাও যে শত্রুতাবশত: আল্লাহকে গালি দেবে!’ (প্রাগুক্ত)। কোনো জটিল সমীকরণ নয়। যিনি আল্লাহ বিশ্বাসী মোমিন, তার কোনো কর্মের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ যদি কেউ আল্লাহকে গালি দিয়ে বসে, তাহলে এর দায় তো স্বাভাবিকভাবেই সে মোমিনের ওপরও বর্তায়। দুর্ভাগ্যবশত যদি কেউ আল্লাহকে গালি দেয় তাহলে সে যেমন অপরাধী, কারও কথা বা কাজের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ যদি এমনটি ঘটে তাহলে সেও এর দায় এড়াতে পারে না। ইসলাম তার অনুসারীদের এভাবেই সচেতনতা শিক্ষা দেয়।
স্বভাবধর্ম ইসলামে সবকিছুতেই ইনসাফকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উপরোক্ত বিষয়েও সযতেœ রক্ষিত হয়েছে এ ইনসাফের শিক্ষা। মূর্তিপূজা আর ইসলাম সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দুটি বিষয়। এ দুয়ের মধ্যে কোনোরকম সমন্বয় কিংবা মূর্তিপূজাকে ছাড় দেওয়ার অবকাশ ইসলামে নেই। ইসলামের মৌলিক যে দাওয়াত এক আল্লাহকে মাবুদ ও উপাস্য হিসেবে মেনে নেওয়ার আহ্বান, এটিই তো শিরিক ও মূর্তিপূজাকে গুঁড়িয়ে দেয়। আবার এ থেকে কেউ যেন আবার কাফেরদের দেবতা বা মূর্তিগুলোকে গালমন্দ করাকে ‘ভালো কাজ’ না বানিয়ে ফেলে, সে জন্য সতর্ক করা হয়েছে। একদিকে মূর্তিপূজার বিপরীতে ইসলামের শাশ্বত বাণীর প্রচার এবং সৃষ্টির উপাসনা ছেড়ে এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বানের আদেশ, সঙ্গে সঙ্গে পরিণতিতে ইসলাম আক্রান্ত হতে পারে এমন সব কাজে নিষেধাজ্ঞাÑ এ সচেতনতাই ইসলামের সৌন্দর্য।
সোজা কথা, ইসলাম একজন মুসলিমকে অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি উদারতা ও মানবিকতা শেখায়,এর আদেশ দেয়। পাশাপাশি এ ব্যাপারেও ইসলাম কঠোর, অন্য ধর্মের কোনো বিশ্বাস ও ধর্মীয় আচারের সঙ্গে যেন কোনো মুসলিম গলা না মেলায় কিংবা নিজেকে বিলীন না করে দেয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো সংবাদ