পরাগ মাঝি: গুপ্তধন খুঁজে পাওয়া মানে হঠাৎ অনেক ধনসম্পদের মালিক বনে যাওয়া। তাই অসংখ্য মানুষ গুপ্তধনের সন্ধানে ছুটে বেড়ায় দিগি¦দিক। অনেক গুপ্তধনের কথাও প্রচলিত থাকলেও সেসবের খোঁজ এখনো জানে না কেউ। পৃথিবীর এমন বিখ্যাত কয়েকটি গুপ্তধন সম্পর্কে এখানে তুলে ধরা হলো:-
রেইনল্ডস গ্যাং লুট: কেউ কেউ বলেন, রেইনল্ডস গ্যাংয়ের সদস্যরা ছিলেন আমেরিকার কনফেডারেট যোদ্ধা। ১৮৬১ সালে দাসনির্ভর ১২টি অঙ্গরাজ্য ও মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে এই গৃহযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। আবার কেউ কেউ মনে করেন, গ্যাংটি ছিল কিছু নিষ্ঠুর মানুষের সংগঠন, যারা তাড়াতাড়ি বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। জানা যায়, কুখ্যাত রেইনল্ডস গ্যাংয়ের সদস্যরা ১৮৬৪ সালে কলোরাডো রাজ্যে বেশ কয়েকটি ট্রেন ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিল। এই লুটতরাজের মধ্য দিয়ে তারা বিপুল পরিমাণ সোনা ও নগদ অর্থ আহরণ করে। কথিত আছে, ডাকাতি করা সম্পদ মাউন্ট লগান পর্বতের কোনো অংশে লুকিয়ে রেখেছে তারা। গ্যাংয়ের নেতা জন রেইনল্ডস শেষ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। ১৮৭১ সালে নিহত হওয়ার আগে তিনি তার পার্টনার অ্যালবার্ট ব্রাউনের কাছে লুকিয়ে রাখা সোনার স্থান সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন। বর্ণনা অনুযায়ী, কলোরাডোর জেনেভা গিরিখাত অভিমুখে দির গিরিখাতে গিয়ে একটি পুরনো খাদে লুকিয়ে আছে ওই গুপ্তধন। গুপ্তধনের গর্তটি একটি প্রাচীরযুক্ত, এছাড়াও সেখানে একটি গাছের মধ্যে কসাইয়ের একটি ছুরি দিয়ে গুপ্তধনের গর্তটিকে নির্দেশ করা হয়েছে।
গুপ্তধন রাখার বর্ণনাটি অনেক সহজ হলেও সেখানে ঘটে গেছে আরেক কা-। জানা যায়, অ্যালবার্ট ব্রাউন ওই গুপ্তধনের খোঁজে গিয়ে দেখতে পান, নির্দেশক গাছটির কোনো অস্তিত্ব সেখানে নেই। খুব সম্ভবত দাবানলে পুড়ে গেছে ওই গাছ। এছাড়াও ওই অঞ্চলটিতে ভূমিধসের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ফলে গুপ্তধনের নিশানা থেকে শুরু করে এর অবস্থানও বদলে গেছে। অনেকেই সেখানে গুপ্তধনের খোঁজে গেলেও আজ পর্যন্ত কেউ সফল হয়নি। ফলে গুপ্তধনটি এখনো ওই এলাকার কোথাও লুকিয়ে আছে মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে।
দ্য লেক মিশিগান গোল্ড: গুপ্তধনের আরেকটি সম্ভাব্য স্থান হলো লেক মিশিগান। এই লেকের পানির নিচে কোনো এক স্থানে লুকিয়ে আছে অসংখ্য সোনার বার। হ্যাকলি ন্যাশনাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ আলেকজান্ডার অ্যাবোটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রায় এক ওয়াগন সোনার বার লুকিয়ে আছে লেক মিশিগানে। ১৮৯০-এর দশকে এই লেক পাড়ি দেওয়ার সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে একটি ফেরিডুবির ঘটনা ঘটে। ফেরিতে বহন করা হচ্ছিল বিপুল পরিমাণ সোনা। আলেকজান্ডার অ্যাবোট ১৯২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুশয্যায় শুয়ে এক বাতিঘর রক্ষকের কাছে তথ্যটি বলে গিয়েছিলেন অ্যাবোট। পরে ওই লোক আরেকজনের কাছে ঘটনাটি বলেন। এভাবে কানে কানে বহু মানুষের কাছে তথ্যটি ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এই তথ্যের ওপর নির্ভর করে এখনো অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে কেভিন ডিকস্ট্রা এবং ফ্রেডরিখ মনরো নামে দুই ডুবুরি। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিপুল পরিমাণ ওই সোনা চুরি করেছিলেন জেনারেল রবার্ট এইচ. জি. মিন্টি। তিনি ছিলেন অ্যাবটের শ্যালক।
তবে, মার্কিন গৃহযুদ্ধ সম্পর্কিত ঐতিহাসিকরা এই তত্ত্বে ভরসা রাখতে নারাজ। তারা এই তত্ত্বের বেশ কিছু ঐতিহাসিক অযথার্থতা উপস্থাপন করেছেন। ডিকস্ট্রা এবং মুনরো ২০১৪ সালে এই গুপ্তধন সম্পর্কে বেশ কয়েকবার শিরোনাম হয়েছিলেন। সে সময় থেকেই মূলত তারা তাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেন। অনুসন্ধান করে তারা একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া জাহাজের কিছু অংশও উদ্ধার করেছিলেন। যদিও পরে জানা যায়, ১৬৭৯ সালে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজের অংশ ছিল সেগুলো।
দ্য রিচেস অব দ্য কপার স্ক্রল: ১৯৫২ সালে অন্তত হাজারখানেক প্রাচীন ইহুদি গ্রন্থ আবিষ্কৃত হয়। এই গ্রন্থগুলোকে ডেড সি স্ক্রলও বলা হয়ে থাকে। এই গ্রন্থগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ‘৩ছ১৫’ নামে একটি গ্রন্থ। এটাকেই বলা হয় কপার স্ক্রল। প্যাপিরাসের বদলে পাতলা ধাতুর ওপর লেখা ছিল এর কথাগুলো। এখানে কোনো ধর্মীয় কথা লেখা না থাকলেও অন্তত ৬৪টি স্থানের নাম উল্লেখ ছিল। এসব স্থানে সোনা রুপা থেকে শুরু করে অনেক রতœ পাথর লুকিয়ে রাখা আছে। সম্মিলিতভাবে এই গুপ্তধনগুলোর মূল্য কয়েক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। যত দূর জানা যায়, ওই গুপ্তধনগুলোর কোনোটিই এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। অন্তত আধুনিক সময়ে এ সম্পর্কে কেউ সফলতার দাবি করতে পারবে না। তবে, কিছু কিছু ঐতিহাসিক দাবি করেন, বর্ণিত গুপ্তধনগুলোর হদিস পেয়ে গিয়েছিল রোমানরা। পরে ইহুদি-রোমান যুদ্ধের সময় রোমানরা এসব গুপ্তধন মাটির নিচ থেকে ওপরে তুলে আনে।
রবার্ট আইজম্যান নামে এক ঐতিহাসিক দাবি করেন, প্রথম ক্রুসেডের সময় নাইট সভ্যরা এসব গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছিলেন। অনেকে এও দাবি করেন, গ্রন্থসমূহে যেসব জায়গায় গুপ্তধনের বর্ণনা দেওয়া আছে সেই জায়গাগুলো পরিবর্তিত হয়ে গেছে।
ইনকাদের সোনা: স্প্যানিশ যোদ্ধা ফ্রান্সিসকো পিজারো ১৫৩২ সালে পেরুর কাজামার্কায় ইনকা সাম্রাজ্যে আক্রমণ করেন এবং ইনকা রাজা আতাহুয়াপাকে বন্দি করেন। রাজাকে বন্দি করে রাখা ও তার মুক্তিপণ নিয়ে নানা মত প্রচলিত আছে। বন্দি থাকাকালীন ইনকা রাজা আতাহুয়াপা বুঝে গিয়েছিলেন, স্পেনীয় দস্যুরা তাকে জীবিত ছাড়বে না। যদিও প্রাণে মারা হবে নাÑএমন আশ্বাস তাকে দেওয়া হয়েছিল। স্পেনীয় দস্যুরা সত্যি সত্যিই তাকে মর্মান্তিকভাবে হত্যা করে। তাই মৃত্যুর পূর্বেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন সম্রাট আতাহুয়াপা। কোনো মতেই ওই লোভী দস্যুদের হাতে তুলে দেবেন না ইনকাদের পবিত্র সম্পদ। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল সম্রাটের নির্দেশ। লাখ লাখ ইনকা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল। উত্তর কুইটো থেকে দক্ষিণ কাজকো পর্যন্ত, যেখানে যত সোনা, সোনার মন্দির ছিল, সব ভেঙে নিয়ে তারা রওনা হলো অগ্নিদেবতা এলসিঞ্জির পথে। এলসিঞ্জি ছিল বিশাল এক আগ্নেয় পর্বত। গন্তব্যে পৌঁছে তারা সব সোনা ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল, আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি গভীর কোনো খাদে। অলাম্বিয়া থেকে অলিভিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল ইনকা সাম্রাজ্যের এক গুপ্ত বনপথ দিয়েই ইনকারা এই স্বর্ণবহর নিয়ে গিয়েছিল। স্পেনীয় লুটেরা ফ্রান্সিসকো পিজারোর হাত থেকে তাদের স্বর্ণ সম্পদ রক্ষার জন্যই ইনকারা এমন বেপরোয়া কাজটি করে। এসব সোনার মধ্যে ছিলো মন্দিরের সোনার ইট, মূর্তি, ইনকা রাজপরিবারের ব্যবহৃত হাজার হাজার সোনার থালাবাসন। দস্যুদের ভয়ে তারা সবই ফেলে দিয়েছিল এলসিঞ্জির অগ্নিগহ্বরে। সময়ের গ্রোতে লাখ লাখ টন ছাই আর শুকনো পাতার আস্তরে এক সময় চাপা পড়ে গেল সেই মহামূল্যবান সম্পদ। ইনকাদের বিশ্বাস ছিল স্পেনীয় লুটেরারা একদিন চলে যাবে। ছাই আবর্জনার স্তূপ থেকে তারা আবার তুলে আনবে তাদের সমস্ত সোনা। আবার নতুন করে গড়ে তুলবে তাদের সভ্যতা। ইনকাদের গুপ্তধনের রহস্য উদঘাটনের জন্য বিশেষ অবদান ছিল পেরুর একজন পুরোতত্ত্ববিদ ড. কাটওয়ার রাইটারের। যিনি চারশ বছরের পুরনো ইনকাদের খোঁজে দীর্ঘ ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। দানবাকার কুমিরে ভরা অসংখ্য নদী তাকে পেরুতে হয়েছিল। গহিন সব জঙ্গল পেরোবার সময় মানুষখেকো মানুষের খপ্পরেও পড়েছিলেন তিনি।
ভয়ংকর, অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক এই অভিযানে বহুবার তিনি মৃত্যুর একেবারে দোরগোড়া থেকে ফিরে এসেছিলেন। ইনকাদের গুপ্তধনের একেবারে কাছাকাছি গিয়েও সমস্ত আশা ত্যাগ করে ফিরতে হয়েছিল ডা. কাটওয়ান রাইটারকে। কারণ যেখানে তিনি পৌঁছেছিলেন, সেটি ছিল ইনকাদের অগ্নিদেবতা এলসিঞ্জির জ্বালামুখ। ওটার দিকে তার তাকিয়ে মনে হয়েছিল যেন বিশাল জ¦লন্ত এক কড়াই ওঁৎ পেতে বসে আছে। কেউ কাছে যাওয়ার সাহস দেখালেই পুড়িয়ে মারবে তাকে। তাই ইনকাদের গুপ্তধনের সন্ধানে এলসিঞ্জির কাছে যেতে কেউ উদ্যোগ নিলেও পর মুহূর্তে পিছপা হয়ে যায় তারা। কেননা অগ্নিদেবতা এলসিঞ্জি যেন পরম যতেœ পাহারা দিয়ে রেখেছেন ইনকাদের গুপ্তধন। হয়তো চিরকালই তা পাহারা দিয়ে যাবেন।
অ্যাসপারেঞ্জার গুপ্তধন: প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝামাঝিতে প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটারের এমন একটি স্থান রয়েছে যার নাম পালমিরা। বর্তমানে এখানে আমেরিকার একটি বিশেষজ্ঞ দল অবস্থান করছে। ধারণা করা হয়, এখানেই লুকিয়ে আছে জলদস্যুদের বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ।
১৮১৬ সালে পেরু থেকে লুট করা বিপুল পরিমাণ সোনা, রুপা, মহামূল্যবান রতœবোঝাই স্প্যানিশ জাহাজ অ্যাসপারেঞ্জা অ্যান্টিলেসের দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঝড়ের কবলে পড়ে এই জাহাজের মাস্তল ভেঙে যায়। এ অবস্থায় জাহাজটি জলদস্যুদের একটি সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি শেষ পর্যন্ত ডুবে যায়। তবে, ডুবে যাওয়ার আগেই এর সমস্ত ধনসম্পদ জলদস্যুরা তাদের জাহাজে বোঝাই করেছিল। পরে ওই জাহাজও ম্যাকাও যাওয়ার পথে ঝড়ের কবলে পড়ে এবং পালমিরার প্রবাল প্রাচীরময় এলাকায় ধ্বংস হয়ে যায়। তবে, জাহাজের সমস্ত সম্পদ দস্যুরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছিল। এইসব সম্পদের বেশিরভাগই দ্বীপের মধ্যে পুঁতে রাখা হয়। আর জাহাজের ভাঙা অংশ দিয়ে নৌকা তৈরি করে অনেক জলদস্যুই তাদের সম্পদ নিয়ে মূল ভূমিতে ফিরতে চেয়েছিল। যদিও তাদের কেউ শেষ পর্যন্ত ফিরতে পারেনি। ১০ জন ওই দ্বীপে থেকে গিয়েছিল। কিন্তু রসদ ফুরিয়ে এলে তাদের ছয় জন দ্বীপ ছেড়ে মূল ভূমির দিকে অগ্রসর হয়। তাদেরও কেউ বাঁচতে পারেনি শুধু একজন ছাড়া। বেঁচে যাওয়া দস্যু জেমস হাইনস মূল ভূমিতে ফিরতে পারলেও মাত্র এক মাসের মধ্যে তারও মৃত্যু হয়। একটি চিঠিতে ভাগ্য বিপর্যয়ের কাহিনী তিনি লিখে গিয়েছিলেন। দ্বীপে থেকে যাওয়া চারজনের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা আজও অজানা।
ক্যাপ্টেন কিডের গুপ্তধন: সপ্তদশ শতকে ভারত মহাসাগরের আতঙ্ক বলা হতো স্কটল্যান্ডের ভয়ংকর জলদস্যু ক্যাপ্টেন উইলিয়াম কিডকে। সে সময় ভারত মহাসাগর দিয়ে যাতায়াতকারী বিভিন্ন জাহাজের নাবিকদের স্বপ্নের মধ্যে ক্যাপ্টেন কিড এসে হানা দিত। দুঃস্বপ্নে চিৎকার করে ঘুম ভেঙে যেত তাদের। ডাকাতি আর লুটের মাল দিয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছিল কিডের জাহাজ। কিন্তু ভারত মহাসাগর থেকে জলযাত্রা শেষ করে ফেরার পথে জলদস্যুতার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয় ব্রিটেনের আদালত। এরপর ১৭০১ সালের ২৩ মে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হলেও অজ্ঞাতই থেকে যায় লুটের বিভিন্ন বহু মূল্যবান বিভিন্ন জিনিসের খোঁজ।
সম্প্রতি মাদাগাস্কার থেকে সেই ক্যাপ্টেন কিডের বহু মূল্যবান গুপ্তধন আবিষ্কারের দাবি করেছিলেন মার্কিন ডুবুরি ব্যারি ক্লিফোর্ড। সমুদ্রের নিচে তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন ৫০ কেজি ওজনের রুপার বার। মাদাগাস্কারের সেন্ট মারি দ্বীপের কাছে সমুদ্রের নিচে ওই বারটি খুঁজে পাওয়া যায়। এটির মধ্যে ক্যাপ্টেন কিডের নামের আদ্যক্ষর খোদাই করা ছিল। ব্যারি ক্লিফোর্ডের ধারণা ওই অঞ্চলে সমুদ্রের নিচে খুঁজলে এ ধরনের আরও মূল্যবান গুপ্তধন পাওয়া যাবে।
ফ্লিগল গ্যাংয়ের গুপ্তধন: ১৯২০-এর দশকে একটি দুর্র্ধষ গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিতেন জ্যাক এবং রালফ ফ্লিগল নামে দুই ভাই। যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসে তাদের আস্তানা হলেও তারা নেব্রাস্কা, কলোরাডো, মিসৌরি এবং ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে অপরাধ করে বেড়াতেন। বিভিন্ন জুয়ার আসর এবং বাজির ক্যাফেগুলোকে টার্গেট করে হামলা চালাতেন। তাদের সবচেয়ে বড় অপারেশনটি তাদের সর্বনাশ ডেকে এনেছিল। ১৯২৮ সালে ফ্লিগল গ্যাং কলোরাডোর লামারে অবস্থিত ফার্স্ট ন্যাশনাল ব্যাংকে ডাকাতি করে। এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে ডাকাতরা ২ লাখ ডলার নিয়ে পালাতে সক্ষম হলেও জ্যাক ফ্লিগল ওই অপারেশনে নিহত হয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই রালফ ফ্লিগলও বাকি সদস্যদের নিয়ে ধরা পড়েন। পরে ১৯৩০ সালে তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। এভাবে পুরো গ্যাংটি শেষ হয়ে গেলে তাদের লুট করা বিপুল পরিমাণ সম্পদ কোথায় লুকিয়ে রাখা ছিল তা নিয়ে শুরু হয় নানা গল্পগাথা। জানা যায়, বিভিন্ন অঞ্চলে লুট করা সম্পদ মাটির নিচে পুঁতে রাখতেন রালফ ফ্লিগল। এসব গুপ্ত ভা-ারের দু’একটির সন্ধান পাওয়া গেলেও সিংহভাগের অবস্থানই এখনো কেউ জানে না।
স্ট্যাকোভিস গুপ্তধন: গুপ্তধন অনুসন্ধানকারীদের কাছে নাজিদের সোনা আরেকটি লক্ষ্যবস্তু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাজি বাহিনী অনেক ধনসম্পদ লুট করে লুকিয়ে রাখে, যা আজও অপ্রকাশিত।
জেনারেল এমিল ক্লেইনের কথাই ধরা যাক। ধারণা করা হয়, যুদ্ধের সময় তিনি যে পরিমাণ সোনা, হীরা এবং গহনা লুট করেছিলেন তার মূল্য অন্তত ৬২ বিলিয়ন ডলার। তিনি এসব সম্পদ জার্মান সীমান্তবর্তী চেক রিপাবলিকের স্ট্যাকোভিচ শহরের কাছাকাছি কোনো এলাকায় মাটির নিচে পুঁতে রেখেছিলেন। ১৯৭০ এবং ৮০’র দশক জুড়ে দেশটির স্বরাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ওই সম্পদের খোঁজে বেশ কয়েকটি অনুসন্ধান অভিযান চালানো হলেও সেগুলো ব্যর্থ হয়। এছাড়াও ওমনিপোল নামে একটি কোম্পানিও বহু বছর ধরে এই সম্পদের অনুসন্ধান করেছে। প্রায় তিন দশক ধরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই সম্পদের অনুসন্ধান করেছেন জোসেফ মুজিক নামে এক অনুসন্ধানকারী।