স্বদেশ ডেস্ক:
বর্তমান সরকারের এই মেয়াদের অন্যতম নির্বাচনী এজেন্ডা ছিল গ্রামকে শহর বানানো। অর্থাৎ গ্রামে শহরের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছানোর মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা।
সে উদ্যোগ জাতীয় বাজেটের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু হলেও এবার বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে নতুন আর্থিক পাঁচসালা পরিকল্পনায়। আগামী পাঁচ বছরে বাস্তবায়নের জন্য তৈরি হচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এতে বিশেষ গুরত্ব পাচ্ছে গ্রামীণ রূপান্তর। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্যও নিয়ে আসা হবে। পরিকল্পনাটি তৈরি করছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যেই একটি ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে। তার ওপরই পুরো পরিকল্পনাটি তৈরি করা হবে। উত্তম পরিবহন সেবা এবং তথ্য-প্রযুক্তি সেবা গ্রাম ও শহরের মধ্যে ব্যবধান কমাতে সাহায্য করছে।
রূপান্তরের এই গতিকে আরও ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ পরিকল্পনায় দুটি মূল বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছি। একটি হচ্ছে, ত্বরান্বিত সমৃদ্ধি এবং অন্যটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি। তবে ইতিমধ্যেই উভয় ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। চলমান এ গতিকে আরও ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে সরকারের যে লক্ষ্য রয়েছে তা পূরণের প্রচেষ্টা থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সামনে কবে এই ধারণাপত্রটি উপস্থাপন করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিগগিরই একটি দিনক্ষণ ঠিক করার বিষয়ে আবেদন করা হবে।
জিইডির ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, দ্রুত প্রবৃদ্ধি মাথাপিছু আয়ের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। নগর ও গ্রামাঞ্চল উভয় ক্ষেত্রেই আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। রেমিটেন্সের ব্যাপক প্রবাহের পাশাপাশি বণিজ্য, পরিবহন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেবা খাতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেক গ্রামেই অ-কৃষি খাতে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কৃষিতে কর্মসংস্থান দিন দিন কমে যাচ্ছে। কৃষি শ্রমিকদের মজুরি আগের তুলনায় বেড়েছে। নগর ও গ্রাম উভয় ক্ষেত্রেই দারিদ্র্য দ্রুত হারে কমছে। এছাড়া ক্রমবর্ধমান আয় বৃদ্ধির কারণে গ্রামীণ রূপান্তর চলমান রয়েছে।
ধারণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধান অঙ্গীকার ছিল আমার গ্রাম, আমার শহর। প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ। চলমান গ্রামীণ রূপান্তরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল গ্রামীণ আয়ের বৈচিত্র্যময় উৎস। রেমিটেন্স এবং অকৃষি খাত থেকে প্রাপ্ত আয় এই রূপান্তরের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখছে। তবুও জাতীয় শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ এখনও কৃষি খাতের সঙ্গে জড়িত, যা গ্রামীণ আয়ের এবং গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি প্রধান উৎস হিসেবে রয়ে গেছে।
ফলে জাতীয় উৎপাদন কাঠামোয় প্রয়োজনীয় কাঠামোগত রূপান্তরের অংশ হিসেবে কৃষির আপেক্ষিক অবদান হ্রাস পাবে। যদিও অষ্টম পরিকল্পনায় উৎপাদন বৈচিত্র্য করার মাধ্যমে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়নের কারণে জমির পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। তাই গবেষণা, সম্প্রসারণ ও কৃষি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভূমির উৎপাদনশীলতার ওপর আরও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এছাড়া খামারভিত্তিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার জন্য উচ্চ মূল্যের পণ্য উৎপাদনের ওপরও বেশি জোর দেয়া হবে পরিকল্পনায়।
বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা আয়, আন্তঃজেলা পরিবহন সংযোগ, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এবং তথ্য-প্রযুক্তি সেবার মান বৃদ্ধির ফলে ইতিমধ্যেই গ্রামীণ অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। অষ্টম পরিকল্পনায় গ্রামীণ উন্নয়নের এই মাধ্যমগুলোকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে এবং এগুলোর ভূমিকা জোরদার করার উপায়গুলো সন্নিবেশ করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ খুব ভালো করেছে এবং আরও ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে।