স্বদেশ ডেস্ক:
ঢাকার অস্থির আন্ডারওয়ার্ল্ডে চলছে নতুন মেরুকরণ। দীর্ঘ দিনের পলাতক ও দেশান্তরি সন্ত্রাসীরাই এখন ঢাকার নিয়ন্ত্রণে। আগের মতোই তারা আবারো বিভিন্ন এলাকায় মহড়া শুরু করেছে। চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে তাদের পুরনো অনুসারীদের সক্রিয় করে তুলছেন। ঢাকা দক্ষিণের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জিসান, শর্টগান সোহেল ও মানিকের অনুসারীরা। জিসান দুবাইয়ে গ্রেফতারের আগে কানাডার মন্ট্রিলে এই তিনজনের একটি মিটিং হয়। যে মিটিংয়ে সরওয়ার্দী নামের আরো এক সন্ত্রাসী উপস্থিত ছিল বলে জানা গেছে।
ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্যতম হলো জাফর আহম্মেদ মানিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট ফ্রিডম পার্টির সদস্য কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবনে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করে। এ ঘটনার অন্যতম সদস্য জাফর আহম্মেদ মানিক ও মুরাদ। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই নাজমুল মাকসুদ ওরফে মুরাদকে (৪৮) গ্রেফতার করে। পরে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ মুরাদকে এ দেশে পাঠায়। শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুরাদ। ১৯৯৬ সালে দেশ ছাড়ার আগ পর্যন্ত ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে মানিক-মুরাদ জুটি হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি ছিল। রামপুরা, শাজাহানপুর, কমলাপুর ও বাসাবো এলাকায় রীতিমতো ত্রাস ছিলেন মানিক-মুরাদ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহর থেকে গত বুধবার গ্রেফতার হয় দেশের তালিকাভুক্ত পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ। ভারতীয় পাসপোর্ট বহনকারী জিসান দুবাইয়ে ব্যবসা করছিল। সেখানে তার নাম বলা হয়েছে আলী আকবর চৌধুরী।
একসময় রাজধানীর গুলশান, বনানী, বাড্ডা, মতিঝিলসহ বেশ কিছু অঞ্চলে তার একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করত সে। ইন্টারপোল তার নামে রেড অ্যালার্ট জারি ছিল। ২০০৩ সালে মালিবাগের একটি হোটেলে দু’জন ডিবি পুলিশকে হত্যার পর আলোচনায় আসে জিসান। এর পরই গা ঢাকা দেয়। ২০০৫ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে সে দেশ ছাড়ে। পলাতক থেকেও রাজধানীতে বিক্ষিপ্তভাবে সে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাউসার হত্যার আরেক পলাতক আসামি শর্টগান সোহেল। স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মতি-মহসিন কমিটির সদস্য, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো: কাউসার আলীকে ২০০৮ সালের ৪ মার্চ রাজধানীর শাহজাহানপুরে দিনেদুপুরে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর নিহতের চাচা মো: আমির আলী মতিঝিল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশের তদন্তে কাউসার আলী হত্যার মূল ঘাতক হিসেবে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাহজাহানপুরের সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শর্টগান সোহেলের নাম প্রকাশ পেলে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে কানাডায় আশ্রয় নেন।
ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড এখন এরা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। ঢাকায় শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর মন্ট্রিলে এই সন্ত্রাসীরা মিটিং করে। সেখান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকার সন্ত্রাসীদের সাথে তারা কথা বলে। এখানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য সহযোগীদের নির্দেশ দেয় ওই পলাতক সন্ত্রাসীরা। যাদের ওপর ঢাকা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা হলো কাউসার হত্যার আরেক আসামি ও শান্তিনগরের সাদা হত্যার আসামি আলী নেওয়াজ রানা, রিফাত, অপু, মোহাম্মদ আলী ওরফে চাঁদাবাজ আলী, কমলাপুরের শ্যামল, জিতু ও শরীফকে। এর পরই রানা, অপু, মোহাম্মদ আলী, রিফাত ও জিতু শাহজাহানপুর থানা পরিবহন সেক্টর এবং কমলাপুর রেলওয়ে এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দেয়। কমলাপুরের রেলওয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তারা হুমকি-ধমকি দিয়েছে বলে জানা যায়। মোহাম্মদ আলী ওরফে চাঁদাবাজ আলী কমলাপুরের টিকিট বুকিং সহকারী খুনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। আলী নেওয়াজ রানাকে এর আগে পাঁচটি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছিল র্যাব।
সূত্র জানায়, ওই মিটিংয়ের পর মানিক-জিসান ও সোহেলের লোকজন মতিঝিল, শাহজাহানপুর, রামপুরা, সবুজবাগ, পল্টন, রমনাসহ বিভিন্ন এলাকা এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে।