বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪৬ অপরাহ্ন

গাজার আল-শিফা হাসপাতালে থাকা রোগী ও নবজাতকদের ভাগ্যে কী ঘটছে

গাজার আল-শিফা হাসপাতালে থাকা রোগী ও নবজাতকদের ভাগ্যে কী ঘটছে

স্বদেশ ডেস্ক:

গাজা শহরে গতরাতে সত্যিকার অর্থে কী ঘটেছে- তা জানা কঠিন। তবে কয়েক দফায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং এরপর এলাকাটি অন্ধকারে তলিয়ে গেছে।

বুধবার ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ জানিয়েছে, তারা আল-শিফা হাসপাতালে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে কেন্দ্র করে অভিযান চালিয়েছে।

ওই অভিযানের সময় সেখানে থাকা বিবিসির একজন সংবাদদাতা কমান্ডোদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশের খবর নিশ্চিত করেছিলেন।

এরপর সৈন্যরা প্রতিটি কক্ষে গিয়ে রোগী ও কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তরুণদের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির জন্য পোশাক খুলে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়।

এর প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর সৈন্যদের সেখান থেকে প্রত্যাহারের খবর পায় বিবিসি।

ইসরাইল বারংবার হামাসকে ওই হাসপাতালের নিচে টানেল নেটওয়ার্কে একটি কমান্ড সেন্টার পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত করে আসছে। তবে হামাস বরাবর এটি অস্বীকার করে আসছে।

এদিকে জাতিসঙ্ঘ জানিয়েছে, বৃষ্টি ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে থাকা লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

ওদিকে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো ইসরায়েল গাজা শহরে ২৫ হাজার লিটার তেল সরবরাহ করার জন্য রাফাহ অতিক্রম করার অনুমতি দিয়েছে।

এর বাইরে গত ৭ অক্টোবরে ইসরাইলের হামলার সময় যাদের বন্দী করা হয়েছে তাদের কয়েকজনকে মুক্তির জন্য হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে কাতার মধ্যস্থতা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় ‘অধিকতর মানবিক যুদ্ধবিরতি’র জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তবে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য বিরোধী দলের একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হয়েছে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে।

নবজাতকদের পরিস্থিতি কেমন
আল-শিফা হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ মারওয়ান আবু সাদা বিবিসি আরবি বিভাগের ইথার সালাবিকে ফোনে জানিয়েছেন যে ৩৯টি নবজাতকের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যেই মারা গেছে।

এখন যারা বেঁচে আছে, তাদের আসলে কোনো অভিভাবক বেঁচে নেই। কিংবা যুদ্ধের এই তাণ্ডবের মধ্যে তাদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।

ইসরাইলের গোলাবর্ষণের পর দু’টি শিশুকে একেবারেই একা পাওয়া গিয়েছিল। আর চার শিশুর জন্ম হয়েছিল তাদের মায়েদের মৃত্যুর পর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে।

তেল সঙ্কটের কারণে শিশুগুলোকে ইনকিউবেটর থেকে সরিয়ে হৃদরোগ বিভাগের নবজাতক ইউনিটে রাখা হয়েছে বলে জানান ডাঃ আবু সাদা।

সেখানে একটি বেডে ৮/১০টি শিশুকে রাখা হয়েছে এবং তাদের উষ্ণতার জন্য ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে।

বাবার নাম জানা গেলে শিশুর হাতে ট্যাগে অমুকের ছেলে বা অমুকের মেয়ে উল্লেখ করা হচ্ছে।

পানির স্বল্পতার কারণে ডাক্তারদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডাঃ সাদার আশঙ্কা অপরিচ্ছন্ন অক্সিজেন টিউবের কারণে শিশুদের শরীরে সংক্রমণ থেকে পচন তৈরি হতে পারে।

নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব
জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় অধিকতর মানবিক করিডোর এবং সব বন্দীর মুক্তি আহবান জানিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

পরিষদের ১২টি সদস্য দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল।

জাতিসঙ্ঘে ইসরাইলের দূত গিলাড এরদান বলেছেন এই প্রস্তাব বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অর্থহীন।

তিনি বলেন, ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া অব্যাহত রাখবে এবং তিনি নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ৭ অক্টোবরে ইসরাইলে হামলার বিষয়টি না থাকার তীব্র সমালোচনা করেন।

তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জাতিসঙ্ঘ শাখার ডিরেক্টর লুইস শারব্যুনো নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।

‘এটি ইসরাইল, হামাস ও অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে শক্ত বার্তা দিয়েছে যে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনগুলোকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে,’ বলছিলেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামলা চালায়। এতে প্রায় ১২ শ’ মানুষ মারা যায় এবং বন্দী করা হয় আরো কমপক্ষে দেই শ’ জনকে। পরে ইসরাইল গাজায় অভিযান শুরু করে। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এ পর্যন্ত ইসরাইলের হামলায় প্রায় ১১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার শিশু রয়েছে।

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877