স্বদেশ ডেস্ক:
মানবজাতির চারিত্রিক কিছু গুণ রয়েছে ইতিবাচক, আর কিছু রয়েছে নেতিবাচক। আর নেতিবাচকের অন্যতম একটি হলো দম্ভ বা অহঙ্কার। যা ইতিবাচক গুণ বিনয়ের বিপরীত এক দুঃস্বভাব। আর এই বিনয় যেমন মানুষকে আকাশের উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। ঠিক এর বিপরীত সম্মান, যশ-খ্যাতি, অর্থসম্পদ, প্রভাবপ্রতিপত্তি, বিদ্যাবুদ্ধি ইত্যাদিতে বিন্দুমাত্র অহঙ্কার করলে তখন তাকে নিক্ষেপ করে আরশের উচ্চতা থেকে সাত জমিনের নিচে।
একজন সৎ আদর্শবান ও প্রকৃত মানুষের গুণ কখনোই অহঙ্কার হতে পারে না। কারণ শয়তান এই অহঙ্কারের কারণেই শিক্ষক তথা মাখলুকাতের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও হয়েছেন জঘন্য ও ঘৃণিত।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘সে (শয়তান আদম আলাইহিস সালাতু সালামকে সেজদার মাধ্যমে সম্মান করতে) অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। পরিণতিতে সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত-৩৪)
সুতরাং আল্লাহর কাছে অহঙ্কার ও দাম্ভিক ব্যক্তি অত্যন্ত ঘৃণিত ও অপ্রিয়। আল্লাহ তায়ালা এই মর্মে বলেন- ‘নিঃসন্দেহে তারা যা গোপন করে আর যা প্রকাশ করে তার সবই জানেন। তিনি অহঙ্কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা নাহল, আয়াত-২৩)
অপর এক আয়াতে আরো বলেন- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক-অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা নিসা, আয়াত-৩৬)
এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তিন বস্তু মানুষকে ধ্বংস করে- প্রবৃত্তি বা নফসের পূজা; লোভ ও আত্ম অহঙ্কার।’ তিনি আরো বলেন, ‘অহঙ্কারই মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক।’ (মিশকাত-৫১২২)
অহঙ্কারের ক্ষতি
অহঙ্কার ও প্রবৃত্তির কারণেই মানুষ মানুষের যথাযথ সম্মান করে না। তথা ছোট বড়কে শ্রদ্ধা করে না আর বড় ছোটকে স্নেহ করে না। যা ছিল ইসলামের বড় এক নির্দেশ। রাসূলুল্লাহ সা: এ ব্যাপারে বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের দয়া করে না আর বড়দের শ্রদ্ধা করে না সে আমাদের নয়।’ (তিরমিজি-১৯১৯)
আরেকটি বড় ক্ষতি হচ্ছে, অহঙ্কার প্রবৃত্তি হক ও হেদায়েত গ্রহণে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। কুরআনুল কারিমে এমন অসংখ্য জাতির কথা বলা হয়েছে যারা কেবল অহঙ্কারের বশে ঈমান আনতে ও নবী মানতে অস্বীকার করেছে। যেমন- ফেরাউন ও তার কওমের কাছে যখন মূসা আ: আল্লাহর বাণী নিয়ে এলেন। তখন তাদের অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছিল যে এগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকেই। কিন্তু শুধু অহঙ্কারের কারণে তারা তা মানতে অস্বীকার করে এবং কুফরের ওপর অবিচল থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তারা অন্যায়ভাবে অহমিকাবশত আল্লাহর নির্দেশগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও তাদের অন্তর সেগুলো সত্য বলে ইয়াকিন করে নিয়েছিল।’ (সূরা নাহল-১৪)
জাহান্নামিদের দুর্ভাগ্যের অন্যতম কারণ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তারা এমন ছিল যে, যখন তাদেরকে বলা হতো, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তখন তারা অহঙ্কার দেখাত এবং বলত আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের উপাস্যদের পরিত্যাগ করব?’ (সূরা সাফফাত-৩৫)
অহঙ্কার থেকে মুক্ত থাকতে হলে কী করতে হবে- সে পথও বাতলে দিয়েছে কুরআনুল কারিম। সে পথ হলো শোকর ও কৃতজ্ঞতার পথ। বান্দা যখন শোকর আদায় করবে এবং কৃতজ্ঞতায় সেজদাবনত হবে, আল্লাহর দেয়া সবকিছুকেই তাঁর নিয়ামত অনুগ্রহ মনে করবে, তখন তো অহঙ্কার আসবেই না। শোকর অর্থ আমার যা প্রাপ্তি সবই আল্লাহর দেয়া নিয়ামত ও অনুগ্রহ। আমার এখানে কোনো কৃতিত্ব নেই। এ চেতনা যার মনে থাকবে তার মনে কখনো অহঙ্কার জাগ্রত হতে পারে না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে অহঙ্কারমুক্ত ও বিনয়ী হয়ে জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন।