সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৮:২৭ অপরাহ্ন

নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে উত্তপ্ত হতে পারে রাজনীতি

নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে উত্তপ্ত হতে পারে রাজনীতি

স্বদেশ ডেস্ক:

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর চুপসে যাওয়া বিরোধী রাজনীতি ফের সক্রিয় হচ্ছে। বিএনপি সারা দেশে সমাবেশের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করছে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও নীরবতা ও অভ্যন্তরীণ অভিমান ভেঙে আস্তে আস্তে সোচ্চার হচ্ছে। জানা গেছে, চলতি অক্টোবর ও নভেম্বর জুড়ে ঐক্যফ্রন্ট নানা কর্মসূচি পালন করবে। নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউন করতে চায় তারা। এ জন্য ২৯ অথবা ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে সমাবেশের প্রাথমিক সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, হঠাৎ করে সরকারি দলের নেতাদের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু হয়েছে, এতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের ব্যর্থতার দিকটি সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরাম ইতোমধ্যে সঙ্কট উত্তরণে জাতীয় সরকারের দাবি তুলেছে। এই দাবি আগামী দিনগুলোতে আরো গতি লাভ করবে বলে কেউ কেউ বলছেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ এনেছিল বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। কিন্তু সেই অভিযোগের পরে বিএনপি কিংবা ফ্রন্ট আশ্চর্যজনকভাবে কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেনি। এক ধরনের হতভম্ব অবস্থায় তারা নির্বাচন-পরবর্তী কয়েক মাস অতিবাহিত করেছে। এই সময়ে ফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর মধ্যেও নির্বাচন ইস্যুতে কৌশল নির্ধারণ প্রশ্নে কিছুটা মান-অভিমান দেখা দেয়। হতাশা ও ক্ষোভ প্রদর্শন করে ফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে যায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। জানা গেছে, অভিমান ও হতাশার পর্ব কাটতে শুরু করেছে। ফের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের তাগাদা অনুভব করছেন ফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। গত মাসে ড. কামালের নেতৃত্বে ফ্রন্টের নেতারা ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করেছেন। জানা গেছে, ওই বৈঠকে তারা দেশের চলমান সঙ্কট এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে গতকাল বুধবার দুপুরে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দফতরপ্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু বৈঠকের কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, নাগরিক ঐক্যের ডা: জাহেদ উর রহমান, শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক নেতা জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামী ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে মহাসমাবেশ করবে। এ ছাড়া ১৩ অক্টোবর ঐক্যফ্রন্ট গঠনের এক বছর পূর্তিতেও রাজধানীতে সমাবেশ করবে জোটটি। যেকোনো উন্মুক্ত স্থান অথবা ঘরোয়াভাবে এ সমাবেশ হতে পারে।

বৈঠকে আরো সিদ্ধান্ত হয়েছে, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি, সংসদ বাতিল করে অবিলম্বে জাতীয় সরকার গঠন, ক্যাসিনোর সাথে জড়িত রাঘববোয়ালদের গ্রেফতারের দাবিতে অক্টোবর ও নভেম্বরে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম-সিলেটসহ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে সমাবেশ করা হবে। এসব সমাবেশে ড. কামাল হোসেনসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

বৈঠক প্রসঙ্গে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রহমান জানিয়েছেন, ভোট ডাকাতির নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীতে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হবে ২৯ অথবা ৩০ ডিসেম্বর। এ ছাড়া ১৩ অক্টোবর ঐক্যফ্রন্টের বর্ষপূর্তি উপলক্ষেও রাজধানীতে সমাবেশ করা হবে। আর অক্টোবর-নভেম্বরে চট্টগ্রাম ও সিলেটে সমাবেশ হবে।
জানা গেছে, আগামী ৬ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে। ওই দিন কর্মসূচির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে নতুন আলোচনা : এ দিকে বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। জামিন পেলে বেগম জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন, বিএনপির একজন সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যের পর মূলত আলোচনা ডালপালা মেলেছে।
গত দুই দিনে বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছেন। মঙ্গলবার তিন এমপির সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে হারনুর রশীদ বলেন, চিকিৎসার সুযোগ পেলে বেগম জিয়া অবশ্যই বিদেশে যাবেন। উনি আজকে জামিন পেলে কালকেই বিদেশে যাবেন।
গতকাল আরো চারজন সংসদ সদস্য বেগম জিয়ার সাথে দেখা করেন। সাক্ষাৎ শেষে প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রুমিন ফারহানা বলেন, আমি সরাসরি প্যারোলের বিষয়ে ম্যাডামকে বলেছিলাম। ম্যাডাম আমাকে বলেছেন যে, জামিন আমার হক। দেশের আইন অনুযায়ী আমি এখনই জামিন লাভের যোগ্য। কোনো রকমের কোনো অপরাধ আমি করিনি।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা আবেদন করেও যেখানে দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না, সেখানে হঠাৎ করে সাত এমপির এই সাক্ষাৎ খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো ইঙ্গিত বহন করছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছে। দলের একাধিক নেতার কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে, তারা সুনির্দিষ্ট কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন আইনজীবী জানান, বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে খুব কম সময়ের মধ্যে আবারো আদালতের দ্বারস্থ হবেন তারা।
খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দী রয়েছেন। বর্তমানে তিনি বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকের ছয়তলায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিএনপির অভিযোগ, সুচিকিৎসা না দিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে সরকার।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877