মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ১২:৩১ অপরাহ্ন

শিগগিরই কাশ্মির স্বাধীনতা লাভ করবে : হুররিয়াত প্রধান

শিগগিরই কাশ্মির স্বাধীনতা লাভ করবে : হুররিয়াত প্রধান

স্বদেশ ডেস্ক:

কাশ্মিরের সর্বদলীয় হুররিয়াত কনফারেন্সের (এপিএইচসি) প্রধান সাইয়েদ আলি গিলানি বলেছেন, স্বাধীনতার জন্য কাশ্মিরের যুবক, তরুণ, বৃদ্ধসহ শিশুরা পর্যন্ত নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিচ্ছে, এ আত্মত্যাগ ব্যর্থ হতে পারে না। খুব শিগগিরই স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য উদিত হবে।

গত সোমবার গৃহবন্দী অবস্থা থেকে কাশ্মিরি জনগণের প্রতি লেখা এক চিঠিতে ভারতের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। কাশ্মিরিদের উদ্দেশে এ হুররিয়ত নেতা বলেন, নিজেদের অধিকার রক্ষায় আপনারা ত্যাগ স্বীকার করছেন, এ ত্যাগ কখনো নিষ্ফল হবে না। সাইয়েদ আলি গিলানি আরো বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, শিগগিরই কাশ্মির স্বাধীনতা লাভ করবে। নিজেদের আত্মপরিচয়, ধর্ম ও জাতীয়তার বিষয়ে কোনো সমঝোতা করা যাবে না। আমাদের লক্ষ্য অর্জনে জম্মু, কাশ্মির ও লাদাখের প্রতিটি নাগরিককে সীসাঢালা প্রাচীরের মতো এক থাকতে হবে।

কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুই ভাগ করে ফেলার পর থেকেই গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছেন হুররিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি। এর আগে ভারতীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ ও কাশ্মিরের স্বাধীনতার ডাক দিয়ে পাঁচ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন তিনি।

গিলানির ওই পাঁচ দফা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ভারতীয় নৃশংসতার বিরুদ্ধে জম্মু-কাশ্মিরের নাগরিকদের সাহসিকতার সাথে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ, নিজেদের আত্মরক্ষার্তে সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশের প্রতিবাদ, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা কাশ্মিরিদের দূত হিসেবে কাজ করা, কাশ্মিরিদের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রতিবেশী পাকিস্তানের এগিয়ে আসা এবং জম্মু ও লাদাখের বাসিন্দাদের নিজস্ব পরিচয় ধরে রাখা।

এদিকে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার প্রায় দুই মাস পর জম্মুর গৃহবন্দী সব রাজনীতিককে মুক্তি দিয়েছে ভারতীয় প্রশাসন। কিন্তু কাশ্মির উপত্যকার রাজনীতিকদের বন্দিত্ব বজায় রাখা হয়েছে।

ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জম্মুর যেসব নেতা গৃহবন্দী ছিলেন তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আরোপ করা বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগে পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থার দ্বিতীয়পর্যায় ব্লক উন্নয়ন কাউন্সিলের নির্বাচন ঘোষণা করেছেন জম্মু ও কাশ্মিরের প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা, এই কারণেই স্থানীয় রাজনীতিকদের মুক্তি দেয়ার এই সিদ্ধান্ত। আগামী ২৪ অক্টোবর ৩০০টি ব্লক উন্নয়ন কাউন্সিলের নির্বাচন। ওই দিনই গণনা হবে। ২৬ হাজার পঞ্চায়েত সদস্য ভোট দেবেন। সরকারি সূত্রগুলো এনডি টিভিকে বলেছে, জম্মু অঞ্চলটি শান্তিপূর্ণ হওয়ায় ওই নির্বাচনের আগে রাজনীতিকদের মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জম্মুর মুক্তি পাওয়া নেতাদের মধ্যে দেভেন্দ্রর সিং রানা, রমন ভল্লা, হার্শদেব সিং, চৌধুরি লাল সিং, ভিকর রাসুল, জাভেদ রানা, সুরজিত সিং সøাথিয়া ও সাজ্জাদ আহমেদ কিচলু উল্লেখযোগ্য।

ন্যাশনাল কনফারেন্সের দেভেন্দ্রর রানা এনডি টিভিকে বলেছেন, ‘আমার চলাচলে কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না বলে গত সন্ধ্যায় এক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন।’ জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে একে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই রাজ্যটিকে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বন্দী করে ফেলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এর অংশ হিসেবেই জম্মু ও কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লাহ ও ফারুক আবদুল্লাসহ প্রায় ৪০০ রাজনীতিককে আটক অথবা গৃহবন্দী করা হয়।

এদিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ার পর গত দুই মাসে কাশ্মির থেকে ১৪৪ শিশুকে আটক করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ৯ থেকে ১১ বছর বয়সী ওই শিশুদের বিভিন্ন হোমে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিশেষ কমিটিকে জম্মু-কাশ্মির প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হয়েছে। তবে এদের কাউকেই বেআইনিভাবে আটক করা হয়নি বলে দাবি সরকারের। রাজ্য প্রশাসনের যুক্তি, পাথর ছোড়া, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধানো এবং সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি নষ্টে যুক্ত থাকায় আটক করা হয়েছে ওই শিশুদের।

গত ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করে জম্মু-কাশ্মির এবং লাদাখ, দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সেই থেকে উপত্যকার সাথে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গোটা ভারতসহ গোটা বিশ্বের। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং সমাজসেবামূলক সংগঠনের পক্ষ থেকে দমন-পীড়নের অভিযোগ তোলা হয়। এই দমননীতি থেকে শিশুদেরও ছাড় দেয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ ওঠে নানা মহল থেকে।

এমন অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন সমাজকর্মী এনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায় এবং শান্তা সিংহ। তাদের অভিযোগ, উপত্যকায় বেআইনিভাবে ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে আটক করছে নিরাপত্তাবাহিনী। সমাজকর্মীদের এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জম্মু-কাশ্মির হাইকোর্টের জুভেনাইল জাস্টিস কমিটিকে নির্দেশ দেন শীর্ষ আদালত।

মঙ্গলবার বিচারপতি এনভি রমণ, আর সুভাষ রেড্ডি এবং বি আর গাবাইয়ের ডিভিশন বেঞ্চে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেয় বিচারপতি আলি মহম্মদ মাগ্রের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের ওই কমিটি। তারপরই বিষয়টি সামনে এসেছে। কমিটির তাদের রিপোর্টে কার্যত নিজেদের মতামত পেশ করেনি। শুধু পুলিশের মতামত উদ্ধৃত করে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। পুলিশের মতামত অনুযায়ী, বেআইনিভাবে কোনো শিশুকে আটক করা হয়নি। বরং কোনো নাবালক আইন বিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে জানা গেলে, আইন মেনেই তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সূত্র : পাকিস্তান টুডে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877