শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ইসরায়েল ফিলিস্তিন: কোন দেশ কার পক্ষে?

ইসরায়েল ফিলিস্তিন: কোন দেশ কার পক্ষে?

স্বদেশ ডেস্ক:

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন ‘হামাস’ ৭ অক্টোবর (শনিবার) ইসরায়েলের ভিতরে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা শুরু করেছে। এতে দু’টি ভূখণ্ডে গত কয়েক দশকের চলমান উত্তেজনা পুনরায় রূপ নিয়েছে যুদ্ধে। যা বিশ্বকে কার্যত দু’টি শিবিরে ভাগ করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছে। কেউ সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে, আবার কেই ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলছে। আবার কারো বক্তব্যে ফুটে উঠেছে ‘নিরপেক্ষ অবস্থানের’ কথা।

বিভিন্ন দেশের সরকার কিংবা রাষ্ট্র প্রধানের কাছ থেকে যেসব বক্তব্য-বিবৃতি এসেছে সেগুলোর ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি তাদের দৃঢ় ও অটুট সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। শনিবার হামলার পরই বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করে ইসরায়েলের প্রতি তাদের এই প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করেন।

ইসরায়েলের সমর্থনে বিমান বহনকারী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড ও মিসাইল ক্রুজার যুদ্ধবিমান ও চারটি মিসাইল বিধ্বংসী যান ইসরায়েলের কাছে ভূমধ্যসাগরে পাঠানো হয়েছে।

সামনের দিনগুলোতে ইসরায়েলকে আরো অস্ত্র সহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে হোয়াইট হাউজ।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে তাদের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য নতুন গোলাবারুদ সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

ইসরায়েলের পাল্টা হামলার বিষয়ে হোয়াইট হাউজে বাইডেন বলেন, ‘ইসরায়েলের নিজেদের রক্ষা করার অধিকার আছে, এটাই শেষ কথা।’

তিনি জোরালোভাবে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াবে’ এবং যা কিছু প্রয়োজন তা দেবে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বৃহস্পতিবার ইসরায়েলে যান। ব্লিঙ্কেনের পরিষ্কার বার্তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সাথে রয়েছে-সেটা আজ, আগামীকাল এবং ভবিষ্যতেও।

তবে ব্লিঙ্কেন কোনো যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাননি। বরং তিনি হামাসের বিরুদ্ধে জোরদার এবং দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন।

ইরান
ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর ইরানের শীর্ষ নেতারা ফিলিস্তিনের ওই সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।

তবে এই হামলার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে ইরান।

শনিবারের হামলার পর ইরানের টেলিভিশনে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনি বলেন, ‘এই বিপর্যয়ের জন্য ইহুদিবাদী শাসকদের নিজস্ব কর্মকাণ্ড দায়ী।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন অনুসারে তিনি বলেন, ‘যারা ইহুদিবাদী শাসকদের উপর হামলার পরিকল্পনা করেছে আমরা তাদের হাতে চুম্বন করি।’

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দোল্লাহিয়ান সাম্প্রতিক এই সহিংসতাকে ‘বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা অপরাধ আর হত্যার সমুচিত প্রতিক্রিয়া‘ বলে আখ্যা দিয়ে শনিবার তার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তব্যে এই ঘটনাকে ‘ফিলিস্তিনি সেনা ও সব ফিলিস্তিনি দলের বিজয়‘ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এরপর ১১ মে রাইসি ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মধ্যে টেলিফোনে ‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ বন্ধের প্রয়োজনীয়তা‘ বিষয়ে আলোচনা হয়।

তেহরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এই খবর প্রকাশ করেছে।

হামলার পর হামাসের মুখপাত্র গাজি হামাদ বিবিসিকে জানিয়েছেন, যে তারা ইরানের সমর্থন ও সহায়তায় এই হামলা চালিয়েছে।

চীন
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চীন নিজেদের নিরপেক্ষ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে দেশটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে।

দেশটি সরাসরি কোন পক্ষ সমর্থনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে তারা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে ‘শান্ত’ থাকতে এবং শিগগির যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানায়।

মধ্যপ্রাচ্যে চীনের বিশেষ দূত ঝাই জুন এরই মধ্যে মিশরকে প্রস্তাব দিয়েছেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সঙ্ঘাত নিরসনের জন্য চীন মিশরের সাথে সমন্বয় করে মধ্যস্থতা করতে চায়।

ফিলিস্তিনে ক্রমশ অবনতি হতে থাকা নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জুন বলেন, ‘ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা অপরিহার্য।’

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ হয়েছে।

তিনি জানান, ‘চীন যুদ্ধবিরতি এবং সহিংসতার অবসানে তাদের প্রচার অব্যাহত রাখবে এবং মানবিক সঙ্কট থেকে উত্তরণে সাহায্য করবে, শান্তির জন্য সক্রিয়ভাবে আলোচনাকে এগিয়ে নেবে এবং ফিলিস্তিন প্রশ্নে একটি পূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত এবং দীর্ঘস্থায়ী নিষ্পত্তির জন্য গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে।‘

এদিকে ৮ অক্টোবর জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার লড়াই বন্ধে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের কথা বলেছেন।

এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত স্থায়ী শান্তির উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানায় বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তবে বেইজিংয়ের ইসরায়েলি দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউভাল ওয়াকস বলেন, তার দেশ চীনের কাছ থেকে হামাসের বিরুদ্ধে ‘কঠোর নিন্দা‘ আশা করছিল।

রয়টার্সের খবরে রোববার ওয়াকস সাংবাদিকদের বলেন, ‘যখন মানুষকে খুন করা হয়, রাস্তায় গলা কাটা হয়, তখন সেটা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আহ্বান জানানোর সময় নয়।’

মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা চাক শুমার, সোমবার শির সাথে বৈঠকের সময় চীনের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তার হতাশা প্রকাশ করেন। সিএনএন-এর খবরে এমনটা বলা হচ্ছে।

শুমার বলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন ‘আমি সম্মানের সাথে বলছি যে এই দুঃখজনক সময়ে ইসরায়েলি জনগণের প্রতি কোনো সহানুভূতি বা সমর্থন না দেখিয়ে চীন যে বিবৃতি দিয়েছে তা হতাশাজনক।’

উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের সাথে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তারা শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে আসছে।

সৌদি আরব
সৌদি আরবের অঘোষিত শাসক ক্রাউন প্রিন্স যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন থাকার কথা জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে ফোনালাপে যুবরাজ মোহাম্মদ বলেন, ‘তার দেশ ফিলিস্তিনি জনগণের একটি স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার রক্ষা, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি অর্জনের জন্য সবসময় তাদের পাশে থাকবে।’

মঙ্গলবার সরকারি সৌদি প্রেস অ্যাজেন্সি এই তথ্য জানিয়েছে।

তিনি মাহমুদ আব্বাসকে আরো বলেন, যে তিনি সংঘর্ষের ‘বিস্তৃতি’ রোধ করতে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক পক্ষের সাথে কাজ করেছে।

রিয়াদ ও তেল আবিবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য ইসরাইল, সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা চলছে, সেই প্রেক্ষাপটে এটি সৌদি আরবের ভিন্নমুখী অবস্থান। তাই ফিলিস্তিনিদের প্রতি সৌদি আরবের সমর্থনকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

হামাসের হামলার পর শনিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সৌদি আরব এই উত্তেজনার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে।

সৌদি আরব জানিয়েছে, যে এটি ‘ফিলিস্তিনে অব্যাহত দখলদারিত্ব, সেখানকার মানুষদের বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং এর তাদের ধর্মীয় অনুভূতির ওপর বারবার আঘাতের কারণে সেখানকার পরিস্থিতি বিস্ফোরণ-মুখি হয়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে বারবার সতর্ক করা হয়েছে।’

রাশিয়া
চীনের মতো প্রায় একই অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির ওপর জোর দিয়েছে, সেইসাথে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে এই সহিংসতার পেছনে মার্কিন নীতির ব্যর্থতাকে দুষছে মস্কো।

রয়টার্সের খবর অনুযায়ী দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির সাথে আলাপকালে বলেন, যে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সহিংসতার যে বিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে তা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির ব্যর্থতার উদাহরণ।

মার্কিন নীতিতে ফিলিস্তিনিদের চাওয়া-পাওয়ার তোয়াক্কা করা হয়নি তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের স্বার্থকে অর্থাৎ স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করছে।

তার মতে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রচেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে কার্যকরী সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।

পুতিনের মুখপাত্র, দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ক্রেমলিন যুদ্ধরত উভয়পক্ষের সাথে যোগাযোগ করছে এবং বিরোধ সমাধানে ভূমিকা পালনের আগ্রহ দেখিয়েছে।’ তবে সেটা কিভাবে তা নির্দিষ্ট করে বলেনি মস্কো।

দেশটি ২০০২ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করতে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসঙ্ঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে কাজ করছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দোল্লাহিয়ানের সাথে ফোনালাপে দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।

এছাড়া সোমবার আরব লীগের প্রধান আহমেদ আবুল ঘেইতের সাথে সংবাদ সম্মেলনে লাভরভ বলেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সমাধান হলো একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র তৈরি করা।‘

যুক্তরাজ্য
ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাজ্যের অবিচল সমর্থনের কথা জানিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

হামলার পরদিন সুনাক ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে টেলিফোনে আলাপকালে বলেন, ব্রিটেন ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে’ ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বিশ্ব যেন এক সুরে কথা বলে সেজন্য কাজ করছে লন্ডন।

এদিকে নটিংহ্যামশায়ারে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে সুনাক ইসরায়েলকে শক্তিশালী মিত্র হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তিনি ইসরায়েলকে সব ধরনের সমর্থন দিয়ে যাবেন।

এদিকে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানাতে বুধবার দেশটিতে সফর গিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব জেমস ক্লিভারলি। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের জন্য যুক্তরাজ্য সমর্থন দেবে বলে তিনি জানান।

সোমবার সন্ধ্যায় লন্ডনে ইহুদিদের প্রার্থনালয় সিনাগগে সুনাক তার বক্তব্যে বলেন, ‘যারা হামাসকে সমর্থন করে তারা এই ভয়াবহ হামলার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী। তারা যোদ্ধা নয়, তারা সন্ত্রাসী।’

তুরস্ক
গাজায় ইসরায়েল যেভাবে বিমান হামলা চালাচ্ছে সেটিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান।

এরদোগান বলেন, হামাস ইসরায়েলে যে হামলা চালিয়েছে সেটির জবাবে ইসরায়েল মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করছে গাজায়।

এর আগে এরদোগান বলেন, ইসরায়েলের সমর্থনে আমেরিকা যেভাবে বিমানবাহি রণতরী পাঠিয়েছে সেটি গাজায় ‘গণহত্যা’ উস্কে দেবে।

এদিকে তুরস্ক সঙ্ঘাত নিরসনে মধ্যস্থতার আগ্রহ দেখিয়েছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান সঙ্ঘাতের অবসান ঘটাতে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিস্থিতি শান্ত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে তুরস্ক।

আনাদুলু অ্যাজেন্সির খবর অনুযায়ী, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান সোমবার প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে ফোনালাপে এ কথা বলেন।

এর আগে তিনি সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ওপর জোর দেন। তার দেশ ইসরায়েল ও গাজার সঙ্ঘাতে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরোধের মধ্যস্থতাকারী দেশের মধ্যে তুরস্ক অন্যতম।

উত্তর-কোরিয়া
ফিলিস্তিনের গাজায় রক্তপাতের জন্য এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হামাস’-এর সাথে বিরোধ ঘনীভূত করার পিছনে ইসরায়েলকে ‌দায়ী করেছে উত্তর-কোরিয়া।

দেশটির দাবি, ইসরায়েলের একের পর এক অপরাধমূলক পদক্ষেপের কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এর সমাধানের একমাত্র উপায় হিসেবে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছে পিয়ংইয়ং।

উত্তর-কোরিয়ার সিনমুন পত্রিকায় ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির মুখপাত্র রোডং-এর বরাত দিয়ে রয়টার্স মঙ্গলবার এই খবর প্রকাশ করেছে।

ভারত
ইসরায়েলের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

হামলার দিন শনিবার নরেন্দ্র মোদি তার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করেন, ‘ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলার খবরে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত..এই কঠিন সময়ে আমরা ইসরায়েলের পক্ষে আছি’

এদিকে মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে ফোনালাপে মোদি পুনরায় বলেন, এই কঠিন সময়ে ভারতবাসী দৃঢ়ভাবে ইসরায়েলের পাশে রয়েছে।

ভারতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত নাওর গিলনও ইসরায়েলের প্রতি ভারতের সমর্থনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন।

অথচ ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে ও পরে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরোধিতা করেছে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসেছে।

এক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত যে সম্পূর্ণ আলাদা, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ তারই ইঙ্গিত বহন করে।

বাংলাদেশ
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে গাজায় ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের উপর যে বর্বরতা চালাচ্ছে ইসরায়েল, তা বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলকে বলবো, এখনই উদ্যোগ নিন।’

এর আগে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতি এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয়কে সংযত হতে এবং নিরীহ মানুষদের ক্ষতি এড়াতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাই।’

‘ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অধীনে বসবাস এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জোরপূর্বক বসতি স্থাপন এই অঞ্চলে শান্তি আনবে না। জাতিসঙ্ঘের ২৪২ এবং ৩৩৮ নম্বর প্রস্তাবনা অনুসরণ করে দখলমুক্ত স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের পাশাপাশি অবস্থান এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে পারে।’ বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ শুরু থেকেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে এবং ইসরায়েলের ‘অবৈধ দখলদারিত্ব’ নিরসনের কথা বলে আসছে।

অন্যান্য
হামাসের হামলার দ্ব্যর্থহীন নিন্দা করে বিবৃতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি এবং জার্মানির নেতারা।

মূলত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে ফোনে কথোপকথনের পর এসব দেশের যৌথ বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘হামাসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কোনো যৌক্তিকতা নেই, কোনো বৈধতা নেই এবং অবশ্যই সর্বজনীনভাবে এই হামলার নিন্দা করা উচিত।’

ফিলিস্তিনিদের সাথে সঙ্ঘাত বাড়িয়ে তোলার জন্য এবং চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য এককভাবে ইসরায়েলকে দোষারোপ করেছে কাতার এবং কুয়েত। সহিংসতার মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে মিশর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877