স্বদেশ ডেস্ক:
ইসরায়েল বলেছে, গত ছয় দিনে গাজায় হামাসের স্থাপনা লক্ষ্য করে চার হাজার টন ওজনের প্রায় ছয় হাজার বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে।
দেশটির বিমানবাহিনী বলেছে, বিমান হামলায় মোট ৩৬ হাজারের বেশি স্থাপনায় আঘাত হেনেছে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির পার্লামেন্টে যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘কঠিন সময় আসছে।’
জাতিসঙ্ঘ বলেছে, গাজায় ‘শোচনীয়’ অবস্থা চলছে কারণ খাবার এবং পানি দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্রায় ৫০ হাজার গর্ভবতী নারী প্রয়োজনীয় কোনো সেবা গ্রহণ করতে পারছে না।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, গত শনিবার থেকে এ পর্যন্ত ১১ জন স্বাস্থ্যকর্মী গাজায় নিহত হয়েছে।
ইসরায়েল প্রতিশোধ হিসেবে বিমান হামলা শুরু করার পর থেকে গাজায় এ পর্যন্ত এক হাজার চার শ’ মানুষ নিহত হয়েছে। আরো তিন লাখ ৩৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
শনিবার ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পর নিহতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার তিন শ’ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আরো ১৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের তথ্যমন্ত্রী গালিত ডিস্টেল আটবারিয়ান পদত্যাগ করে বলেন, তার মন্ত্রণালয়ের অর্থ অন্য কোনো খাতে যাতে ব্যবহার করা হয়।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন শুক্রবার ইসরায়েল সফর করবেন। এ সময় তিনি হামাসের হামলায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানাবেন।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনও শুক্রবার ইসরায়েল সফর করার কথা রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ইসরায়েল সফরের পরের দিনই তিনি দেশটি সফর করছেন।
সাদা ফসফরাস বোমা ব্যবহার?
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজা ও লেবাননে বিতর্কিত সাদা ফসফরাস বোমা ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে।
অতি দাহ্য এই রাসায়নিক অনেক সময় সামরিক বাহিনী তাদের সীমান্ত নির্ধারণের জন্য ব্যবহার করে। কিন্তু এটা মানুষকে মারাত্মকভাবে পুড়িয়ে দিতে পারে। আর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হলে বিশেষ করে গাজার মতো এতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যবহার করা হলে এটি প্রচণ্ড মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, ‘বর্তমানে গাজায় সাদা ফসফরাসযুক্ত অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে তারা সচেতন নন।’ তবে লেবাননের বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) বলছে, তারা গাজা এবং লেবাননে ধারণকৃত ভিডিও দেখে তা বিশ্লেষণ করে সাদা ফসফরাসযুক্ত আর্টিলারি শেল বিস্ফোরিত হতে দেখেছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি’র তোলা ছবিতেও এর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। ছবিতে উঠে এসেছে, গাজায় বিস্ফোরিত হওয়ার সময় সাদা রেখা তৈরি হয়েছে।
সাদা ফসফরাস বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসলে তা ঘন সাদা ধোঁয়া তৈরি করে।
এক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্থাটি বলে, ‘গাজায় অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সাদা ফসফরাসের ব্যবহার বেসামরিক নাগরিকদের ঝুঁকি অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয় এবং তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন যেখানে বেসমারিক নাগরিকদের বিনা কারণে ঝুঁকি বাড়ানোর বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে।’
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, সাদা ফসফরাসের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় হয়নি কারণ এর বৈধ ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু মানুষের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে এর ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ২০০৮-০৯ সালে গাজায় সহিংসতার সময় ধোঁয়ার স্ক্রিন হিসেবে সাদা ফসফরাস ব্যবহার করেছিল। ওই সময় অনেক মানবাধিকার সংস্থা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছিল।
সামরিক বাহিনী ২০১৩ সালে বলেছিল, ছদ্মবেশের জন্য এই রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধ করে দেবে তারা।
ভূমধ্যসাগরে গ্রিসের যুদ্ধ জাহাজ
ব্রাসেলসে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াব গ্যালান্ট ন্যাটোভূক্ত পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করেছেন।
ন্যাটো জোট হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়ে একে ‘অযৌক্তিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। একই সাথে ইসরায়েলের প্রতি তারা ‘সমানুপাতিক’ হারে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘সঙ্ঘাত শুরু হয়ে গেলে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাটা জরুরি। কারণ যুদ্ধের নিয়ম রয়েছে।’
সহায়তার প্রশ্নে ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলো জানায়, তারা ইসরায়েলকে বাস্তবিক সহায়তা দিচ্ছে।
একটি গ্রিক যুদ্ধ জাহাজ পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করার খবর পাওয়া গেছে। যুদ্ধ জাহাজটি ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত অবস্থান নেয়ার কথা রয়েছে।
জার্মানি বলেছে, তাদের দু’টি সশস্ত্র যুদ্ধ ড্রোন ইসরায়েলি বাহিনী এরই মধ্যে ব্যবহার করেছে।
ইসরায়েল মূলত গাজায় অভিযান চালানোর আগে কূটনৈতিক সমর্থন যোগানোর চেষ্টা করছে। আর ন্যাটো জোটভুক্ত মিত্রদের কাছ থেকে তারা সেটা পেয়েছেও।
জাতিসঙ্ঘের সহায়তা আহ্বান
জাতিসঙ্ঘের কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যান অ্যাফেয়ার্স বিভাগ ফিলিস্তিনি মানুষদের জন্য ‘অতি জরুরি প্রয়োজন‘ উল্লেখ করে ২৯৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তার জরুরি আহ্বান জানিয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, এই অর্থ ১২ লাখ মানুষের সহায়তায় ব্যবহার করা হবে।
বৃহস্পতিবার গাজায় ৮৪ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।
সংস্থাটি বলছে, এই সংখ্যা মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় চার লাখ ২৩ হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।
সংস্থাটি বলছে, ‘গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ বাসিন্দার এখন খাবার পানি বা গৃহকাজে ব্যবহারের জন্য কোনো পানি সরবরাহ নেই।’
ওই এলাকায় কমপক্ষে ৫০ হাজার নারী গর্ভবতী। যাদের মধ্যে কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ হাজার জন্য আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সন্তান প্রসব করবে। ‘প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা কারণ স্বাস্থ্যকর্মী, হাসপাতাল এবং ক্লিনিক-সব জায়গাতেই হামলা চালানো হয়েছে।’
এর আগে জাতিসঙ্ঘ বলেছিলো, ২০২৩ সালে ফিলিস্তিনে ত্রাণ সহায়তার জন্য ৫০২ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। তবে এর অর্ধেকও এখনো পূরণ হয়নি।
সূত্র : বিবিসি