স্বদেশ ডেস্ক:
প্রতিবাদী সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ঠিক এক বছর পূর্ণ হলো আজ। এমন সময়ই তার হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন করে আলোচনা উঠেছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা প্রবাহে। একটি মার্কিন সংস্থাকে (পিবিএস) দেওয়া সাক্ষাৎকারে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। তবে তিনি যে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন তা অবশ্য স্বীকার করেননি।
এর পরই সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে সম্প্রচারিত একটি ডকুমেন্টারিতে এক অডিও বার্তা প্রকাশ হয়। বিবিসি জানায়, অডিও টেপটি শুনেছেন জাতিসংঘের তদন্তকারীরাও।
খাসোগিকে হত্যার আগে থেকে শুরু করে হত্যার পর পর্যন্ত ৪৫ মিনিটের একটি গোপন অডিও ক্লিপে প্রকাশ পেয়েছে, খুনিরা সাবলীলভাবে পরস্পরের সঙ্গে কৌতুক আর হাস্যরসের মেতে উঠেছিল। খাসোগি সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের আগ থেকেই খুনিদের কথোপকথন রয়েছে গোপন ওই অডিও ফাইলটিতে, যা জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের কাছে সরবরাহ করেছে তুরস্ক।
ব্রিটিশ আইনজীবী হেলেনা কেনেডি খাসোগি হত্যাকাণ্ডে জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের অন্যতম সদস্য অ্যাগনেস ক্যালামার অডিওটি ইতিমধ্যে শুনে এ নিয়ে কথাও বলেছেন। একজন ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট খাসোগির দেহ কেটে টুকরা করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কেনেডি বলেন, ‘অডিও রেকর্ডে একটি আলোচনা চলছিল যেখানে বলা হচ্ছিল, ব্যাগে মরদেহ ঠিকভাবে ঢোকানো যাবে কি না। এরপর হাসাহাসির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এক সময় কেউ একজন বলে ওঠে, বলি দেয়ার যোগ্য জানোয়ারটা কি এসেছে?’
অডিওটিতে শোনা যায়, খাসোগি কনস্যুলেটে প্রবেশের আগে তাকে নিয়ে খুনিরা নানান হাস্যরস আর মজা করছিলেন। তাদের মধ্যে একজন খাসোগিকে ‘কোরবানির পশু’ বলে হাসাহাসি করেন। এছাড়া খাসোগিকে পাকড়াও করে ফেলার পর খুনিরা তাকে ইনজেকশন দেয়। মৃত্যুর আগে খাসোগি বলেছিলেন, ‘তোমরা কি আমাকে ইনজেকশন দিচ্ছো?’
কেউ একজন জবাব দিলেন, হ্যাঁ। এরপরই একটি গোঙানির আওয়াজ, যেন কারও মাথা প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে মুড়ে ফেলা হলে লোকটির দম বন্ধ হয়ে আসার শব্দের মতো।
নিঃসন্দেহে পেশাদার এসব খুনিরা ওপরের মহলের নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে মন্তব্য করে কেনেডি বলেন, খুনিদের কেউ একজন বলে । ‘দাও। তাকে কাটতে দাও।’ তারপরই একজন উচ্চস্বরে বলেন, ‘শেষ শেষ’!
এছাড়া খাসোগির মরদেহ মেঝেতে শুইয়ে টুকরো করা হয়েছিল বলেও দাবি করেন কেনেডি।
খাসোগির লাশ কাটা প্যাথলজিস্টকে বলতে শোনা যায়, ‘মাটিতে শুইয়ে জীবনে প্রথমবার লাশ কাটছি। এমনকি কসাইরাও পশু কাটার সময় সেটিকে ঝুলিয়ে নেয়।’
এসময় ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ কাটাছেঁড়া করার সময় আমি সাধারণত গান শুনি। কখনও আমার হাতে এক কাপ কফি এবং একটি সিগারেটও থাকে।’ এভাবেই তারা হাস্যরসের মধ্য দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট ও দেশপ্রেমিক এ সৌদি সাংবাদিককে।