শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ ভারতীয় ব্যবসায়ীদের

বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ ভারতীয় ব্যবসায়ীদের

স্বদেশ ডেস্ক:

সারা দেশ যখন পেঁয়াজের ঝাঁঝে অস্থির ঠিক সেই মুহূর্তে সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানীকারকদের কাছে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের মজুদ থাকলেও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের নিকট অসহায় হয়ে পড়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পেঁয়াজ আমদানি শুল্কমুক্ত হওয়ায় অসাধুচক্র ভর করে ঝাঁঝ বাড়িয়ে দিচ্ছে পেঁয়াজের।

সরেজমিন গত বুধবার ভোমরা স্থলবন্দরে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পণ্য খালাসের অপেক্ষায় বন্দরের ওয়্যারহাউসের মধ্যে পেঁয়াজ বোঝাই ১৪টি ভারতীয় ট্রাক গত আট দিন যাবৎ অবস্থান করলেও আমদানীকারক চালানের কাগজপত্র নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে। যার প্রতিটি ট্রাকে সাড়ে ২৫ টন করে পেঁয়াজ রয়েছে বলে জানান ভারতীয় ওই ট্রাকগুলোর চালক সুশান্ত সিং ও ললিন নায়কসহ অন্যরা।

তারা আরো জানিয়েছেন, ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক নিয়ে রাস্তায় পাঁচ দিন ও বন্দরের ওপারে ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় চার দিন এবং ওয়্যারহাউসে আট দিন অবস্থান করছেন তারা।

এদিকে, অনুসন্ধানকালে সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানীকারক বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা সরাসরি এলসি’র মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানী করে আনতে না পারায় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে অনেকটাই অসহায় এবং নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কেননা পেঁয়াজের শুল্কমুক্ত থাকায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশী ট্রান্সপোর্ট এজেন্সী বাদ দিয়ে নিজেরাই দু’একটি প্রতিনিধি ঠিক করে বন্দরে ঘর নিয়ে কমিশনে ব্যবসা করে। ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা যেভাবেই নিয়ন্ত্রণ করছে ঠিক সেই ভাবেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বন্দরের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের চালান প্রেরণ করে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা এলাকার ভুট্টো নামের এক ব্যবসায়ী। একই ভাবে বাংলাদেশের পঙ্কজ, খোরশেদ, আজাদসহ একাধিক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী। এসব ব্যবসায়ীরা ভারতে বসেই ইচ্ছেমতো কলকাঠি নেড়ে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের ইশারাতেই বন্দরে থাকা তাদের প্রতিনিধিরা পেঁয়াজ মজুদ রেখে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিসহ বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

এ বিষয়ে ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, পেঁয়াজ শুল্কমুক্ত পণ্য। যে কারণে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা নিজেরাই প্রতিনিধি ঠিক করে ইচ্ছা-খুশীমতো বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এর হাত থেকে পরিত্রাণের জন্য পেঁয়াজের উপর শুল্ক নির্ধারণ করলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করলে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাছাড়া পেঁয়াজের শুল্ক নির্ধারণ করলে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা কমে আসার পাশাপাশি দেশীয় পেঁয়াজের চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। ফলে দেশীয় চাষীরা পেঁয়াজ উৎপাদনে অধিক উৎসাহিত হবে।

ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা শেখ এনাম হোসেন জানিয়েছেন, পেঁয়াজ আমদানীতে লিখিত কোনো নিষেধাজ্ঞা তিনি পাননি।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামালের নিকট ভোমরা বন্দরে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ থাকার কথা জানানো হলে তিনি জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বন্দরে মজুদকৃত পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করতে। এর ব্যাত্যয় ঘটলে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, মঙ্গলবার গভীর রাতে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে গঠিত টাক্সফোর্স ভোমরা স্থলবন্দরে বিভিন্ন পেঁয়াজের গোডাউনে অভিযান চালিয়েছে। রাত ১২টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ান আকরামুল হকের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়।

গভীর রাতে বন্দরের দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী জানান, টাক্সফোর্সের দল প্রথমে কাস্টমস সংলগ্ন পঙ্কজ বাবুর পেঁয়াজের গোডাউনে হানা দেন। ওই গোডাউনে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ দেখতে পায় টাক্সফোর্সের দল। এরপর কর্তৃপক্ষকে ডেকে এনে সকালে এসব পেঁয়াজ বাজারজাত করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আরো ৫/৬টি পেঁয়াজের গোডাউনে পৌঁছায় টাক্সফোর্স দলটি। সকালের মধ্যে এসব পেঁয়াজ বাজারজাত করা না হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জানিয়েছেন বলে সূত্র জানায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ১টা নাগাদ অভিযান চলছিল বলে জানা যায়।

এদিকে, এই অভিযানের বিষয়ে টাক্সফোর্সের নেতৃত্বাধীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ান আকরামুল হক রাতে আরো বলেন, প্রতিটি গোডাউন প্রশাসনের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আজ সকালেই বাজারজাত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যথাসময়ে পেঁয়াজ বাজারজাত করা না হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877