বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৬:৩২ অপরাহ্ন

বিশ্বকাপ মানেই বাংলাদেশের ইতিহাস সৃষ্টি

বিশ্বকাপ মানেই বাংলাদেশের ইতিহাস সৃষ্টি

সাদা জার্সিতে একদিনের আন্তর্জাতিক সেই ম্যাচটার কথা মনে আছে? যে দিন মিনহাজুল-আকরাম খানরা বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য অর্জন বয়ে নিয়ে এসেছিলেন সুদূর মালয়েশিয়া থেকে। ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ আইসিসি ট্রফির ফাইনালে কেনিয়াকে দুই উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

শুরুটা হয়েছিল সেখান থেকেই। কুয়ালামপুরের কর্দমাক্ত মাঠ আর মেঘ জমা আকাশের নিচে খেলেই কষ্টের ও একই সঙ্গে স্বস্তির জয় নিয়ে এসেছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। সেদিনকার আকরাম খান থেকে শুরু করে আজকের মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা কিংবা স্পিনার অলরাউন্ডার রফিক থেকে শুরু করে আমাদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। বিশ্বজয়ের স্বপ্নবীজটা সেদিনই বোনা হয়ে গিয়েছিল টিম বাংলাদেশের।

এর পরের ইতিহাস একটু ফিকে। আইসিসি ট্রফির জয়ের পর তেমন কোনো ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ। আর যেগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে তার ফলাফল ভালোও নয়। দিন-মাস-বছর ঘুরে আসে ১৯৯৯ সাল। বিশ্বকাপের ৭ম আসরে সবুজ-হলুদ জার্সিতে অংশগ্রহণ করে আমিনুল ইসলাম বুলবুল বাহিনী। দলে ছিলেন- আকরাম খান, এনামুল হক মনি, ফারুক আহমেদ, হাসিবুল হোসেন শান্ত, খালেদ মাহমুদ সুজন, খালেদ মাসুদ পাইলট, মোহাম্মদ রফিক, মেহরাব হোসেন, নাঈমুর রহমান দুর্জয়সহ আরও কজন। সেদিন থেকেই ইতিহাস সৃষ্টি করছে বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটি তারা খেলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। দ্বিতীয় ম্যাচের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হেরে যায় টিম বাংলাদেশ। হার দিয়ে শুরু করলেও জয় আসে তার পরেই। তৃতীয় মাচে অপেক্ষাকৃত সবল দল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় তুলে নেয় নবাগত বাংলাদেশ।

২২ রানের জয় তুলে নেওয়া বাংলাদেশ সেবার রান করে মাত্র ১৮৫। ৯ উইকেট হারিয়ে মাঠ ছাড়ার পর বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ আনেন শান্তরা। জবাবে স্কটল্যান্ড সংগ্রহ করতে পারে ১৬৩ রান।

ম্যাচটিতে ১৮৫ রান তোলার আগে খেই হারান বুলবুলরা। ২৬ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে সামাল দেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এবং নাইমুর রহমান দুর্জয়। ৫৮ বলে ৩৬ করে দুর্জয় সাজঘরে ফেরার পর আবারও বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিজে টিকে ছিলেন নান্নু। লোয়ার অর্ডার নিয়ে পুরো ৫০ ওভার খেলেন তিনি। ১১৬ বলে ৬৮ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। বলা হয় ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে প্রথম অর্ধ শতক করেন নান্নু।

বোলিংয়ে এসে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন হাসিবুল হোসেন ও মঞ্জুরুল ইসলাম। ৮ রানেই স্কটল্যান্ডের ৩ উইকেট তুলে নেন এই দুই বোলার। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় স্কটল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ১৬৩ রানে অলআউট হয় দলটি। বাংলাদেশও বিশ্বকাপের প্রথম জয় নিয়ে রচনা করে নতুন ইতিহাসের।

সেই জয়ের পরই ফুলেফেঁপে উঠেছিল বাংলাদেশ দল। আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও মোহাম্মদ রফিকদের। একই টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে।

১৯৯৯ সালের ৩১ মে নর্দাম্পটনে পাক অধিনায়ক ওয়াসিম আকরামের দলটি এতটাই ব্যালেন্সড ছিল, জয় পাওয়া ভাবনার বাইরেই ছিল বাংলাদেশের। পাক ক্রিকেট দলে ছিলেন সে সময়কার সেরা সেরা বোলার। ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আখতার ও আজহার মেহমুদ ছাড়াও খোদ ওয়াসিম আকরামও ছিলেন রেকর্ডধারী। তাদের বোলিং তোপে নড়বড়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২২৩ রান।

পাকিস্তান দলে সে সময় ছিলেন বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান সাঈদ আনোয়ার, ইজাজ, ইনজামাম, সেলিম মালিক। ২২৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে সেই নড়বড়ে বাংলাদেশের বিপক্ষেই খেই হারান তারা। ৪৪.৩ ওভারে তারা অলআউট হন মাত্র ১৬১ রানে। ৬২ রানে জয় নিয়ে বিশ্বকাপে কোনো টেস্ট দলের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো জয়ের স্বাদ নিয়ে আরও একটি ইতিহাস রচনা করেন বুলবুলরা।

২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্শ্বিকাপ মোটেও ভালো যায়নি বাংলাদেশ দলের। পুরো টুর্নামেন্টে ধুকে ধুকে খেলতে হয়েছে টিম বাংলাদেশকে। কানাডার মতো নতুন ও দুর্বল দলের সঙ্গে হারতে হয়েছিল খালেদ মাহমুদ সুজনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দলকে। ছিল না কোনো নিদর্শন। পাইলটদের হার হলেই কমেন্ট্রি বক্সে আওয়াজ হতো; ১৯৯৯ সালের দুটি জয় বাংলাদেশ জিতেছিল ভাগ্য জোরে।

পুরো ভঙ্গুর একটি দল ফিরে আসে দেশে। নতুন উদ্যমে গড়ে উঠতে থাকে নতুন-পুরানের মিশেলের একটি দল।

২০০৭ বিশ্বকাপে নতুন কিছু খেলোয়াড় নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত নবম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ। সেবার গ্রুপ ‘বি’তে ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলতে হয় বাংলাদেশকে।

মাঠে নামার আগেই সেবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের আওয়াজ শুনতে হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু তা হয়নি। গেরুয়া শিবিরে আঘাত করে সামনে বাড়ছিল টিম হাবিবুল বাশার। দলে ছিলেন শাহরিয়ার নাফিস, আফতাব আহমেদ, জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লু, মো. আশরাফুল, ফরহাদ রেজা, মোহাম্মদ রফিক। প্রথমবারের মতো সেবার বিশ্বকাপ খেলতে যান আজকের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ দলের বর্তমান রান মেশিন মুশফিকুর রহিম, ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল খান।

আফতাব, আশরাফুল, ফরহাদের সঙ্গে আরও নতুন ছিলেন রাজিন সালেহ, তাপস বৈশ্য, শাহাদাত হোসেন, সৈয়দ রাসেল এবং বাংলাদেশ দলের বর্তমান কাণ্ডারি মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা।

প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামে টিম টাইগার। ১৯১ রানে গেরুয়া বাহিনীকে আটকে ফেলে বাংলাদেশ। দলের হয়ে টাইগার মাশরাফি একাই নেন ৪ উইকেট। এখানেও সৃষ্টি হয় নতুন আরেক ইতিহাস।

ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে অভিষিক্ত তামিম, মুশফিক এবং সাকিবের ফিফটিতে ম্যাচ জয় করে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে নেমে তামিম খেলেন ৫৩ বলে ৫১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। এ ছাড়া মুশফিক ৫৬ এবং সাকিব ৫৩ রান করে দলের ঐতিহাসিক জয়ে ভূমিকা রাখেন। ৫ উইকেটে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো লঙ্কানদের সঙ্গে গ্রুপ রানার্স আপ হয়ে সেরা আটে ওঠে বাংলাদেশ।

সেবার বিশ্বকাপে খেলতে এসেছিল বারমুডা। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে হারানোর আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামে হাবিবুলের দল। কিন্তু লঙ্কানদের বিপক্ষে বিশাল ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ।

তবে শেষ ম্যাচে দারুণ জয়ে দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত করেন মাশরাফিরা। বৃষ্টিবিঘ্নিত ওই ম্যাচে ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।

ম্যাচটিতে বৃষ্টির কারণে ২১ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করে বারমুডা ৯ উইকেটে ৯৪ রান তুলতে সমর্থ হয়। বাংলাদেশের পক্ষে ২০ রানে ৩ উইকেট নেন আবদুর রাজ্জাক। মাশরাফি এবং সাকিব ২টি করে উইকেট পান যথাক্রমে ৮ ও ১২ রানের বিনিময়ে। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৩৭ রানেই তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর ম্যাচ সেরা মোহাম্মাদ আশরাফুল এবং সাকিবের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। আশরাফুল ৩২ বলে ২৯ এবং সাকিব ৩৫ বলে ২৬ রান করে অপরাজিত থাকেন।

উইকেটের হিসাবে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এখন পর্যন্ত ওই বারমুডার বিপক্ষেই।

২০০৭ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে বাঘের থাবার শক্তি কতো জানান দেন সাকিবরা। প্রথমবারের মতো সুপার এইটে উঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। নিজেদের চেয়েও বড় ও শক্তিশালী প্রোটিয়া দলকে হারিয়ে আরও একটি ইতিহাস রচনা করে টিম টাইগার।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আশরাফুলের ৮৭ রানের সুবাদে ২৫১ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে সৈয়দ রাসেল এবং সাকিবের বোলিং নৈপুণ্যে ১৮৪ রানেই থেমে যান জ্যাক ক্যালিসরা।

অবশ্য এই জয়ের পরে বাংলাদেশও আর সামনে যেতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে দেশে ফিরে আসে লাল সবুজের জার্সিধারীরা।

ঘরের মাঠে যে বার বিশ্বকাপ আয়োজন হয় সেবার বাংলাদেশ দলে আসে পরিবর্তন। পেস বোলিং লাইন আপে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি হয়। কারণ দেশ সেরা পেসার মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাকে সেবার দলে রাখেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম প্রাঙ্গনে সেবার কেঁদেছিলেন মাশরাফি। অনেক সমালোচনা সহ্য করেই খেলতে নামে বাংলাদেশ।

সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে খেলতে নামা তামিম, মুশফিক, জুনায়েদ সিদ্দিকী, নাঈম ইসলাম, শাহরিয়ার নাফিস, ইমরুল কায়েস, রুবেল হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, রকিবুল হাসান, সাইফুল ইসলাম, মো. আশরাফুলরা সেবার নিজেদের মেলে ধরেছিলেন।

বিশ্বকাপ দলে নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সোহরাওয়ার্দি শুভ, নাজমুল হোসেন। তারাও নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে দ্বিতীয় পর্বে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল আরও একবার।

ভারত ও শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশ মিলিয়ে আয়োজিত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচটি খেলতে নামে আগের বার বধ করে আসা ভারতের বিপক্ষে। কিন্তু আগের বারের মতো ম্যাজিক দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলাফল হার।

তবে দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ কামব্যাক করে বাংলাদেশ। ২৭ রানে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় সাকিব বাহিনী।

আইরিশদের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৪৯.২ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২০৫ রান। দলের পক্ষে তামিম সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন। ২০৬ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে আয়ারল্যান্ড ৪৫ ওভারে সব কয়টি উইকেট হারিয়ে ১৭৮ রান করে। দলের পক্ষে শফিউল ইসলাম ২১ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট তুলে নেন। ম্যাচ সেরা হন ওপেনার তামিম।

পরের দুটি ম্যাচ বাংলাদেশ খেলে ইংল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। বাঘা দুটি দলকে জল খাইয়ে দেয় সাকিবের দল। শেষ ম্যাচেও দলীয় দৃঢ়তায় জয় পায় বাংলাদেশ। কিন্তু এবারও ভাগ্যের শিকেতে আঁচ লাগেনি।

আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় পেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ৭৮ রানে আলআউট হয়ে রান রেটে পিছিয়ে পরে বাংলাদেশ। অন্য দিকে রানরেটের গড়পরতায় সমান ৬ পয়েন্ট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চলে যায় দ্বিতীয় রাউন্ডে।

২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বে আসে পরিবর্তন। আগের বিশ্বকাপে বাদ পড়া মাশরাফি এবার দলের নেতৃত্বে আসেন। অবশ্যই এর আগেই বিভিন্ন সিরিজে অধিনায়ক হিসেবেই খেলেন তিনি। দেশের মানুষ দেখতে পায় বদলে যাওয়া এক ক্রিকেট দলকে। সবচেয়ে বড় ইতিহাসের সৃষ্টি হয় এই আসরেই।

মাশরাফির অধিনায়কত্ব, সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স, মুশফিকের ব্যাটিং দৃঢ়তা, ক্রাইসিস মোমেন্টে দলকে টেনে নিয়ে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ ও তামিমের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে জন্ম নেয় পঞ্চপাণ্ডবের।

শুধু তারাই নয় দলে যুক্ত হন এনামুল হক, মমিনুল হক, নাসির হোসেন, তাসকিন আহমেদ, আল আমিন হোসেন, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান ও আরাফত সানি নামে নতুন কজন খেলোয়াড়ও। আর পুরোনো রুবেল তো ছিলেনই।

প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। ম্যাচে ১০৫ রানের ব্যবধানে বিশাল জয় তুলে নেয় মাশরাফি বাহিনী। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রানে জয়ের খাতা এই ম্যাচ দিয়েই খোলে বাংলাদেশ।

প্রথমে ব্যাট করে মুশফিকুর রহিমের ৭১ রানের ওপর ভর করে বাংলাদেশ ২৬৭ রানের টার্গেট দেয় আফগানিস্তানকে। জবাবে ৪২.৫ ওভারে ১৬৭ রানেই থেমে যায় আফগান ইনিংস। মাশরাফি ২০ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট নেন।

পরের ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে যায়। পরের ম্যাচে টাইগাররা হারে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

এরপরের ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় নিয়ে প্রথমবারের মতো কোনো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার আশা জাগে বাংলাদেশের।

ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করে ৩১৮ রানের পাহাড় চাপায় স্কটিশরা। বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন আহমেদ ৪৩ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন।

ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ইকবালের ৯৫ রানের ওপর ভর করে জয় অর্জন করে টিম বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে প্রথমবার বড় রান করে ম্যাচ জয় করে বাংলাদেশ। ৬ উইকেটে জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য নাম লেখায় টাইগাররা।

পরের ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। তবে গতবারের মতো আরও একবার দলটিকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের স্বপ্নপূরণ করেন মাশরাফিরা।

এই জয় আসার আগে অবশ্য হোঁচট খেয়েছিল বাংলাদেশ। কারণ, ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটি ক্যাচ ফেলেছিলেন তামিম। কিন্তু সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনেন পেসার রুবেল। পর পর দুটি উইকেট তুলে নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যায় বাংলাদেশ।

ম্যাচটিতে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। রিয়াদের এই ঐতিহাসিক সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ২৭৫ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২৬০ রানে থামে ইংল্যান্ডের ইনিংস। ১৫ রানের জয় নিয়ে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। ৪৯তম ওভারে দুই উইকেট তুলে নেয়ার পাশাপাশি ম্যাচে রুবেল সর্বমোট চার উইকেট পান।

কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনির দলটি সেবার সম্মুখ চুরি করে হারিয়েছিল বাংলাদেশকে। ভারতের দুটি উইকটের ভুল সিদ্ধান্ত দেন পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার। এ ছাড়া বাংলাদেশের একটি আপিল খারিজ করেন দেন তিনি। আবার ভারতের বোলিং ইনিংসে বাংলাদেশের খেলোয়াড় মাহমুদউল্লাহকে ভুল আউটের শিকার করিয়ে একভাবে ভারতকেই জিতিয়ে দেন আলিম দার।

সেবার পুরো পৃথিবী এই চুরি নিয়ে সমালোচনা করেছিল। দেশে ফিরে আসলেও বাহবা পেয়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা।

চরবছর পর আবারও বিশ্বকাপ। এবারও দলের কাণ্ডারি মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। তার বাকি চার পাণ্ডব তো আছেনই। রয়েছেন পুরোনো রুবেল, সৌম্য, সাব্বির। বাদ পড়েছেন তাসকিন, যোগ হয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন মো. মিথুন, আবু জায়েদ রাহী, মেহেদী হাসান, মোসাদ্দেক সৈকত, মো. সাইফুদ্দিন ও লিটন দাস।

ইতিহাসের পর ইতিহাস সৃষ্টি করেই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আজ রোববার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বিকেল সাড়ে তিনটায় লন্ডনের দ্য ওভালে খেলতে নামবে মাশরাফি অ্যান্ড টিম। এবারের দল নিয়ে দারুণ প্রত্যাশা দেশের জনগণের। তারা আশা করে আছেন বিশ্বকাপ শিরোপা নিয়েই দেশে ফিরবে টিম টাইগার্স। হয়ত লেখা হবে নতুন আরেক ইতিহাস।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877