শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করল সরকার জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ছাত্রদল ঢাবির হলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, ২ ছাত্র আটক আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ শেখ হাসিনার কী করা উচিত, জানালেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট সাড়ে ২০ লাখ খরচেই চালু হচ্ছে কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার : যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের প্রতি যে আহ্বান জানালো টিআইবি সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানকে অপহরণ ১০ সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
রাউজানের কলেজছাত্রের দেহাবশেষ উদ্ধার, আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা

রাউজানের কলেজছাত্রের দেহাবশেষ উদ্ধার, আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা

স্বদেশ ডেস্ক:

অপহরণের ১৪ দিনের মাথায় আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রামের রাউজানের কলেজছাত্র সিবলী সাদিকের (১৯) দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা অপহরণ মামলার এক আসামিকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করেছে। হত্যার শিকার ওই আসামির নাম উমং চিং মারমা (২৬)। নিহত আসামিকে নিয়ে অপহৃত সিবলীর লাশ উদ্ধার শেষে থানায় ফিরছিল পুলিশ।

রাউজান থানার পুলিশ ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলেজছাত্র সিবলী সাদিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয় তাঁর বাড়ির আট কিলোমিটার দূরে রাঙামাটি উপজেলার কাউখালী ইউনিয়নের দুর্গম বালু পাহাড় থেকে। ওই স্থানে তাঁর দেহাংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। এ সময় পুলিশের সঙ্গে যাওয়া সিবলীর পরিবারের সদস্যরা দেহাবশেষ শনাক্ত করে পরনের প্যান্ট ও গেঞ্জি শনাক্ত করেন।

রাউজান থানার পুলিশ জানায়, ২৮ আগস্ট গভীর রাতে রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের একটি খামার থেকে অপহরণের শিকার হন কলেজছাত্র সিবলী সাদিক। সিবলী ওই খামারের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে চাকরি করতেন। ঘটনার আট দিন পর গত বুধবার অপহরণের মামলা নেয় পুলিশ। এরপর এই মামলার ৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা সবাই সিবলীর সঙ্গে একই মুরগির খামারে চাকরি করতেন। এর মধ্যে গতকাল রোববার চট্টগ্রাম নগরের চানগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি উমং চিং মারমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি পুলিশের কাছে সিবলীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তাঁকে নিয়ে আজ সকালে সিবলীর লাশ উদ্ধারে যায় পুলিশ। ফিরে আসার সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি আটকিয়ে তাঁকে ছিনিয়ে গণপিটুনিতে হত্যা করে।

যে কারণে হত্যা
পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার আসামিরা সবাই সিবলীর সহকর্মী ছিলেন। অপহরণের কিছুদিন আগে সিবলীর সঙ্গে খামারের কাজ নিয়ে ঝগড়া হয় তাঁদের। এর সূত্র ধরে তাঁরা সিবলীকে অপহরণ ও হত্যা করেন বলে তাঁদের ধারণা।
এই মামলায় উং চিং মারমা ছাড়াও গ্রেপ্তার অন্য আসামিরা হলেন রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার মিতিঙ্গাছড়ির সুইংচিং মং মারমা (২৪), একই জেলার কাউখালীর বেতবুনিয়া ইউনিয়নের সাপমারা গ্রামের অংথইমং মারমা (২৫) ও আছুমং মারমা (২৬) ও উক্য থোয়াইং মারমা (১৯)।

যেভাবে আসামি ছিনতাই ও হত্যা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লাশ উদ্ধারের স্থান রাঙামাটির কাউখালীর বালুর পাহাড় থেকে রাউজান থানায় যাওয়ার পথেই পড়ে সিবলী সাদিকের বাড়ি। তাঁর দেহাবশেষ উদ্ধার করে আনা পুলিশের ভ্যানটি সিবলীর বাড়ির কাছাকাছি এলে কয়েক হাজার উত্তেজিত জনতা গাড়িটির গতি রোধ করে। এ সময় সামনে থাকা কয়েক শ নারী ভ্যান থেকে টেনেহিঁচড়ে আসামি উমং চিং মারমাকে নামিয়ে নিয়ে যান। উত্তেজিত জনতা হাতকড়া পরা অবস্থায় তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে।

এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যও আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন (৪৬), উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন (৩৫), এসআই কিশোর কুমার (৩২), এএসআই আজিজুল হাকিম (২৯), এসআই কানু লাল (৪০), এএসআই শাহিদুল ইসলাম (৩৮) ও পুলিশের এক পিকআপ ভ্যানচালক।
গণপিটুনিতে নিহত অপহরণ মামলার আসামি উমং চিং মারমা রাঙামাটি উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের রঙ্গিপাড়া গ্রামের উথোয়াইমং মারমার ছেলে।

পুলিশ জানিয়েছে, আসামি ছিনতাইয়ের সময় দুটি পুলিশ ভ্যানে ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা। পুলিশের ওপর হামলা করে আসামি ছিনতাই ও পিটুনিতে নিহত এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে রাউজান থানা-পুলিশ।

দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েছিল পরিবার
রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামে সিবলীর বাড়ি। তাঁর বাবা মুহাম্মদ শফি পিকআপ ভ্যান চালান। পড়াশোনার খরচ জোগাতে তিনি ওই এলাকার একটি খামারে তত্ত্বাবধায়কের চাকরি নেন। সেখানেই রাতে থাকতেন তিনি। ২৮ আগস্ট সিবলী সাদিক সেই খামার থেকে অপহরণ হন। ২৯ আগস্ট অপহরণকারীরা তাঁর মা নাহিদা আক্তারের মুঠোফোনে ফোন করেন। মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন সিবলীর। তখন ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারীরা। পরে সাড়া না পেয়ে গত ৩১ আগস্ট আবার ফোন করে দুই লাখ টাকা চান। পরদিন ১ সেপ্টেম্বর সিবলীর বাবা দুই লাখ টাকা নিয়ে বান্দরবান জেলা সদরের পূর্বনির্ধারিত জায়গায় গিয়ে দুজন লোকের হাতে টাকা তুলে দেন। তাঁকে বলা হয় ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে চলে যাবে। তবে ১৪ দিন পর তাঁর লাশ পেল পরিবার।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন ঘটনাস্থলে প্রথম আলোকে বলেন, বেলা ১১টার দিকে তাঁরা গহিন পাহাড় থেকে অপহৃত সিবলীর দেহাবশেষ ও আসামি উমং চিং মারমাকে নিয়ে থানার দিকে ফিরছিলেন। এ সময় অপহৃত ছাত্রের বাড়ির কাছে এলে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে হামলা করে শত শত নারী আসামিকে ছিনিয়ে নেন এবং তাঁকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে বিলের মধ্যে ফেলে পালিয়ে যান। উত্তেজিত জনতার হামলায় তিনি নিজেসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। অপহৃত সিবলী সাদিকের লাশের দেহাবশেষ ও প্রধান আসামির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877