ডা. মহসীন কবির লিমন
এখন প্রায় প্রতিটি মানুষই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন গ্রাহক ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোন যতটা কার্যকরী আবার এটির অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের জন্য ঠিক ততটাই ঝুঁকিপূর্ণ। আর এটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে আমাদের ঘুমের ওপর। এক গবেষণায় গবেষকরা বলছেন, মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত কথা বলা এবং একটানা দীর্ঘ সময় কম্পিউটার ব্যবহারে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। সুইডেনের ইউনিভার্সিটি অব গুটেনবার্গের গবেষক সারা থমি বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের সময় স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে এর স্বাস্থ্যকর ব্যবহার জানতে হবে। সারা তার সঙ্গীদের নিয়ে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের ওপর কয়েকটি গবেষণা চালান। গবেষকদের চারটি দলে ভাগ করেন তিনি। প্রথম দলটি মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারকারী ও দ্বিতীয় দলটি স্বাভাবিক ব্যবহারকারীদের ওপর পর্যবেক্ষণ করেন। তৃতীয় দলটি অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহারকারী এবং চতুর্থ দলটি স্বাভাবিক ব্যবহারকারীদের পর্যবেক্ষণ করে। সারা বলেন, প্রায় এক বছর পর্যবেক্ষণের পর দেখা যায়, যারা অতিরিক্ত কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে আর এ সংখ্যা তরুণদের মধ্যেই বেশি। তিনি জানান, যারা মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত কথা বলেন এবং কম্পিউটার ব্যবহার করেন তাদের অনিদ্রসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয় এবং তারা বেশি মাত্রায় বিষণœতায় ভোগেন। অনেকেই আবার এ বিষণœতার কারণে আত্মহননসহ নানা ধ্বংসাত্মক কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়েন। যারা রাত জেগে একটানা দীর্ঘ সময় কম্পিউটার ব্যবহার করেন বা মোবাইল কোনো কথা বলেন তাদের রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। গবেষণা শেষে গবেষকরা প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণকে সতর্ক করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি আমাদের যেমন প্রয়োজন আবার প্রযুক্তির অতিরিক্ত আসক্তি সমাজ ও শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আসুন, আমরা নিজেরা মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে বিরত থাকি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অন্যকেও এর অতিরিক্ত ব্যবহারে সচেতন করে তুলি। মনে রাখতে হবে, কোনো কিছুর অতিরিক্ত আসক্তি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
ডা. মহসীন কবির লিমন
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, লেখক ও গবেষক