স্বদেশ ডেস্ক:
এবার ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে নিজের ভাতিজাকে জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভর্তি জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের দাবি, নিজের ভাতিজা মো. শোভনকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে প্রক্সি জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারিরীক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের গ্রুপ-১ এর ভর্তি পরীক্ষায় তার মেধাক্রম ছিল-২২।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জালিয়াত চক্রের সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিবরিয়া ভাইয়ের ভাতিজার নাম শোভন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস সায়েন্সে পড়েন। তার ভর্তি পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড দেখলেই বোঝা যাবে জালিয়াতি করা হয়েছে, সেটা তন্ময়ের (জালিয়াতি অভিযোগে বহিষ্কৃত রাবি শাখা ছাত্রলীগ নেতা) মাধ্যমে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক জালিয়াত চক্রের সদস্য বলেন, ‘কিবরিয়া নিজেই তার আপন ভাতিজাকে ভর্তি করাইছে একটা এক্সপার্টের মাধ্যমে।’
বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়ের মাধ্যমে এই জালিয়াতি করা হয়েছে কী না জানতে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘এটা মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ। এ বিষয়ে কিছু গণমাধ্যমে আমাকে জড়িয়ে সংবাদও প্রচার করা হয়েছে। যারা এসব জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত তারা নিজেরা বাঁচাতে আমাকে জড়িয়ে এটা করাচ্ছেন।’
অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে শোভনের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কী না এ বিষয়ে শারিরীক শিক্ষা ও ক্রিড়া বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভর্তির সঙ্গে বিভাগ জড়িত না। প্রত্যেক ইউনিটের চিফ কো-অর্ডিনেটর থাকেন। ওনাদের এবং অনুষদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে বিভাগে আসেন। সুতরাং, এ বিষয়ে আপনাদের অনুষদের প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
এ বিষয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক শাহেদ জামান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখনও কিছু জানি না। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসলে অবশ্যই সেটা তদন্ত করে দেখতে হবে।’
পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কী না জানতে চাইলে মতিহার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, ‘এটা আসলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাশসনের বিষয়। ওনারা যদি কোনো অভিযোগ বা মামলা আমাদের কাছে করে, তাহলে আমরা সেটা নিব।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে, জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়া অন্য বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, ওই ছাত্রের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো শিক্ষার্থীই আমাদের কাছে বিশেষ কেউ না। সবাই আমাদের কাছে সমান।’
উল্লেখ্য, ভর্তি জালিয়াতিতে জড়িত থাকা ও চুক্তি অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করার অভিযোগ ওঠার পর গত ১৯ আগস্ট রাবি ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের কারণ হিসেবে বহিষ্কৃতদের বিরুদ্ধে সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা-পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার বিষয় উল্লেখ করা হয়।