সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০২:৪৯ অপরাহ্ন

ঢাকাও কিন্তু বড় ঝুঁকিতে

ঢাকাও কিন্তু বড় ঝুঁকিতে

স্বদেশ ডেস্ক:

জাতিসংঘের বিজ্ঞানীদের একটি প্যানেল হুশিয়ার করেছে, মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের পরিণতিতে অতীতের যে কোনো সময়ে চেয়ে বর্তমানে দ্রুত সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এবং বরফ গলছে। মেরু অঞ্চলে বরফের আচ্ছাদন বিলীন হওয়ার কারণে কার্বন নিঃসরণের মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। আবাসস্থল বদলাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তুর।

এই পরিস্থিতি দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। আইপিসি বা জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্যানেলের সাম্প্রতিক একটি বিশেষ রিপোর্টে এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গত এক বছরের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এটি তাদের তৃতীয় রিপোর্ট।

এর আগে বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেছেন, এই শতকের শেষ ভাগে যদি বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫ শতাংশ বেড়ে যায়, তার পরিণতি কী হতে পারে। সর্বশেষ এই রিপোর্টেও দেখানো হয়েছে, তাপমাত্রার বাড়ার কারণে সমুদ্র এবং বরফে আচ্ছাদিত অঞ্চলের ওপর তার প্রভাব কী হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা এবার যা পেয়েছেন, তা আগের রিপোর্টগুলোর তুলনায় অনেক বেশি ভীতিকর। এতে বলা হয়েছে, সাগরপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে এবং বরফ গলছে দ্রুতহারে; আর এর প্রভাব পড়ছে

পুরো প্রাণিজগতের ওপর। রিপোর্টটির প্রণেতা ড. জ্যঁ পিয়ের গুত্তুসো বলেন, আমাদের এই নীল গ্রহ এখন মহাসংকটে। বিভিন্ন দিক থেকে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এবং এর জন্য আমারাই দায়ী।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনো সন্দেহ নেই যে সাগর-মহাসাগরে উষ্ণতা ১৯৭০ সাল থেকে অব্যাহতভাবে বাড়ছে। মানুষের নানা কর্মকা-ের ফলে পরিবেশে যে বাড়তি তাপ তৈরি হচ্ছে, তার ৯০ শতাংশই শুষে নিচ্ছে সাগর। ১৯৯৩ সাল থেকে শুষে নেওয়ার এই মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে। সেই সঙ্গে গলছে গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকার বরফ। বাড়ছে সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যে হারে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলেছে তার আগের ১০ বছরের তুলনায় তা তিনগুণ। বিশেষ করে আন্দিজ, মধ্য ইউরোপ এবং উত্তর এশিয়ায় যেসব হিমবাহ রয়েছে, সেগুলোর বরফ ২১০০ সাল নাগাদ ৮০ শতাংশ গলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর বরফ গলা এই পানি গিয়ে পড়ছে সাগরে। ফলে আগামী দশকগুলোয় সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা আরও বাড়বে।

আইপিসিসির নতুন এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২১০০ সাল নাগাদ সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা ১.১ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, যা আগের ধারণার চেয়ে অন্তত ১০ সেন্টিমিটার বেশি। এতে মহাঝুঁকির মুখে পড়বে বিশ্বের ডজনের বেশি বড় বড় শহর। ড. গাত্তুসো বলছেন, নিচু জায়গাগুলোয় সাগরের উচ্চতা বাড়ার পরিণতি হবে ব্যাপক। ৭০ কোটি মানুষ এ রকম নিচু উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করে। ফলে বিষয়টি খুবই উদ্বেগের।

বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন, কার্বন নির্গমন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা যদি বেশি হয়, তা হলে নিউইয়র্ক বা সাংহাইয়ের মতো বিত্তশালী নগরগুলোও সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে ঝুঁকিতে পড়বে। আইপিসির রিপোর্টে সাবধান করা হয়েছে, সাগরে তাপ বাড়ার ফলে আবহাওয়া দিন দিন বিপজ্জনক আচরণ করবে। ঘূর্ণিঝড় বেশি হবে, জলোচ্ছ্বাস বাড়বে। বিধ্বংসী জলোচ্ছ্বাসের নজির ইতিহাসে খুবই কম। শত বছরে গড়ে একটি করে এ রকম দুর্যোগ হয়।

কিন্তু নতুন এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের বেশকিছু জায়গায় খুব বড় আকারের জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। আইপিসিসি প্যানেলের অধ্যাপক ডেরা রবার্টস বলেন, আমরা নজিরবিহীন কিছু বিপদের ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি। আপনি যদি স্থলভাগের খুব ভেতরেও বসবাস করেন, তা হলেও সাগর এবং পরিবেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিরাপদে থাকতে পারবেন না। বন্যায় ক্ষতির মাত্রা দুই থেকে তিনগুণ বাড়তে পারে। সাগরের তাপমাত্রা বাড়ার ফলে ৯০ শতাংশ প্রবাল বিলীন হয়ে যেতে পারে। আর সাগরের তাপমাত্রা প্রভাব ফেলবে মাছ এবং জলজ উদ্ভিদের ওপরও। মাছের শরীরের ভেতর পারদের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

তবে আইপিসির রিপোর্টে কিছু বিষয়ে আশাবাদও ব্যক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাগরের ভবিষ্যৎ এখনো আমাদের হাতে রয়েছে। কিন্তু তার জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে এখনকার তুলনায় কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমপক্ষে ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে। আইপিসিসি প্যানেলের চেয়ারম্যান হোসুং লি বলেন, কার্বন নির্গমনের মাত্রা অনেক কমালেও চরম ঝুঁকির মধ্যে থাকা মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা চ্যালেঞ্জিং হবে। এর জন্য রাজনীতিকদের ওপর জনগণের চাপ বাড়ানো খুব জরুরি। খবর বিবিসির।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877