স্বদেশ ডেস্ক:
‘ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যাবে না’- এমনটা মেনে নিয়েছে ৮৯ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ ৮৯ শতাংশ মানুষ ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছে। আর ঘুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কোনো ফল পাওয়া যায় না, তাই ঘুষ দেওয়াকে জীবনেরই অংশ বলে মনে করে ৭৫ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে দেশের ৬০ ভাগ মানুষের ধারণা শাস্তি দিয়ে সমাজ থেকে দুর্নীতি কমানো যাবে না। তথ্য অধিকার আইন নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানম-িতে টিআইবি কার্যালয়ে ‘তথ্য অধিকার আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ : আইনের প্রথম দশকের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়।
টিআইবি জানায়, নানা সেবা পেতে ঘুষ দিয়েছে এমন ১৬ হাজার মানুষকে নিয়ে গবেষণা করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষই ঘুষকে জীবনের একটা অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছে। বাকি ২৫ শতাংশ মানুষ অভিযোগ করলেও ইতিবাচক কোনো ফল পায়নি। তারা মনে করে, অভিযোগ করলে লাভের চেয়ে উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভুক্তভোগীদের সিংহভাগই মনে করে, ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না। তাদের সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয় সরকারি সনদ (জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন) নিতে। গবেষণায় দেখা গেছে, লোকজনের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা সরাসরি ঘুষ চেয়েছে। ৪০ শতাংশ কর্মকর্তা একটু গোপনে অর্থ দাবি করে। আর বাকি ১০ শতাংশ কর্মকর্তা সেবা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অফিসের বাইরে গিয়ে অর্থ দাবি করেছে।
দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের শাস্তির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে যারা সেবা পেতে ঘুষ দেন তাদের ৬০ শতাংশ জানায়, শাস্তি দিয়ে দুর্নীতি কমানো যাবে না। আইন করলে হবে না, এর প্রয়োগ যথাযথ থাকা দরকার। আর ২০ শতাংশ মানুষ মনে করে, যারা শাস্তি দেবে তারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। ১৫ শতাংশ মনে করে, শাস্তির দেখা মিলবে না দুর্নীতির কারণে। আর ৫ শতাংশ মনে করে, দুর্নীতি বিষয়ে শাস্তি দিতে গেলে ঝামেলা তৈরি হবে আরও বেশি।
আলোচনায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি কমাতে সামাজিক আন্দোলন তৈরি করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন রাজনৈতিক পদক্ষেপের চেয়ে শক্তিশালী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইন জানা ও এ আইনের প্রয়োগ। তথ্য অধিকার আইন যথাযথ বাস্তবায়ন হলে দুর্নীতি কমে আসবে। আমাদের দেশের তথ্য অধিকার আইন অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, জার্মানিসহ আরও অনেক উন্নত রাষ্ট্র থেকে সমৃদ্ধ। বিশ্বের ১২৪টি দেশের র্যাংকিংয়ে ২৬তম। আমাদের দেশের তথ্য অধিকার সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এর বাস্তবায়ন না হওয়ায় দুর্নীতি বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আলোচনায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তথ্য অধিকার আইনে বেসরকারি খাতে তথ্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি এ আইনের একটি বড় দুর্বলতা। তার চেয়ে বড় দুর্বলতা রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা। কারণ দেশের কোনো মেগা দুর্নীতি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়া ছাড়া সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা তথ্য কমিশন। মানুষের তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে এই কমিশন উল্টো নানাভাবে হয়রানি করে থাকে।