শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৬ অপরাহ্ন

১ রাতের ব্যবধানে উদ্যমী ব্যবসায়ী হয়ে গেলেন বড় দেনাদার

১ রাতের ব্যবধানে উদ্যমী ব্যবসায়ী হয়ে গেলেন বড় দেনাদার

স্বদেশ ডেক্স: সাত বছর আগে জামালপুর বাজারের পাঁচটি পাটের গোডাইন আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। সেসব ছিলো বাবার হাতে গড়া। সেই ঘটনার এক বছর পরেই মারা যান বাবা। এরপর মায়ের সহযোগিতায় নিজের প্রচেষ্টায় মৃধা বাজারে দোকান নিয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলেন রড, সিমেন্ট, সিরামিক ও টাইলসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ৩০ লাখ টাকার বড় পুঁজি নিয়ে ব্যবসার শুরু। ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বেড়েছে পুঁজি। মায়ের দেয়া পুঁজি আর ব্যাংক ঋণের উপর ভর করে কয়েক বছরেই তার প্রতিষ্ঠানে সবমিলিয়ে প্রায় ৭০ লাখ টাকার মালামালের সমারোহ ঘটেছিল। একে একে তিনটি দোকান নিয়ে ব্যবসা বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু এক রাতের আগুনে আবার যেনো সব শেষ হয়ে গেলো। বাজারের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী রাত পোহাতেই পথে বসে গেলেন একটি আগুনের ঘটনায়।

‘সবকিছু বুঝি শেষ হয়ে গেলো। অনেক পরিশ্রম আর স্বপ্ন নিয়ে গড়ে তুলেছিলাম ব্যবসাটি। কিন্তু এভাবে যে সব স্বপ্ন পুড়ে যাবে ভাবিনি।’ মধুখালী উপজেলার মেগচামী ইউনিয়নের মৃধা বাজারের আল মদিনা ট্রেডাসের স্বত্তাধিকারী তরুণ উদ্যোক্তা সৌরভ মোল্যা এভাবেই আক্ষেপ করছিলেন। মৃধা বাজারের সবচেয়ে বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী ছিলেন তিনি। গত বুধবার রাতের অগ্নিকান্ডের পর এক রাতের ব্যবধানে এখন তিনি সেখানকার সবচেয়ে বড় দেনাগ্রস্ত লোকে পরিণত হয়েছেন।

সৌরভের বাবা সানোয়ার হোসেন সাবু ছিলেন সৌদিপ্রবাসী। চাকরি করতেন সেখানকার রিয়াদ ব্যাংকে। প্রায় ১৫ বছর আগে দেশে ফিরে তিনি পাটের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। আগুনে সেই গুদামগুলো পুড়ে যাওয়ার পর তাদের পরিবারে বড় ধাক্কা আসে। পরের বছরেই মারা যান সানোয়ার হোসেন সাবু। তবে তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম হাল ছাড়েননি। স্কুল পড়ুয়া ছেলে সৌরভকে নিয়ে তিনি নতুন করে সবকিছু গুছিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেন।

২০১৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণের পর সৌরভ ভর্তি হন মধুখালী আইনউদ্দিন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে। ২০১৬ সালে তার এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যবসার কারণে তিনি ওই পরীক্ষা দিতে পারেননি। এবার সেই পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি ছিলো।

সৌরভ জানান, ৩০ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক হতে ১০ লাখ টাকার সিসি ঋণ নিয়েছেন। এছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক হতে ১২ লাখ টাকা, ব্র্যাক এনজিও হতে ১০ লাখ টাকা ও সোনালী ব্যাংক হতে আরো ৩ লাখ টাকার ঋণ নেয়া রয়েছে তার। এছাড়া বাজারে তার প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল বাকিতে দেয়া রয়েছে। এর বাইরে দোকানে প্রায় ৭০ লাখ টাকার মালামাল ছিলো। এর মধ্যে ছিলো রড, সিমেন্ট, সিরামিক, টাইলস ও কমোড জাতীয় পণ্য। একটি মোটর সাইকেলও ছিল। সব পুড়ে গেছে আগুনে।

সকালে আগুনে পোড়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এসে কান্নায় ভেঙে পরেন সৌরভের মা মনোয়ারা বেগম। কান্নাবিজড়িত মানোয়ারা বেগম সাংবাদিকদেরকে পুড়ে যাওয়া মালামাল দেখাচ্ছিলেন আর বিলাপ করছিলেন।

বৃবহস্পতিবার সকালে আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে মধুখালী উপজেলা চেয়ারম্যান বাচ্চু মৃধা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা মানোয়ার তাদের প্রতি সমবেদনা জানান। তারা তাদের পুনর্বাসনে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাবেন বলেও জানান। কিন্তু এই তরুণ উদ্যোক্তা কী আবার ঘুরে দাঁড়ানোর মতো সেই সাহায্যের হাত পাবে কিনা এটি একটি অনিশ্চিত বিষয় এখন।

বুধবার রাতে মেগচামীর মৃধা বাজারের এই আগুনে সৌরভের পাশাপাশি বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হন শফিকুল আলম মোল্যা নামের আরেক ব্যবসায়ী। তার ছিল ফার্নিচার তৈরির কারখানা। এজন্য চীন থেকে এনেছিলেন ৯টি মেশিন উড ফিনিশিং মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি। এর মধ্যে ছিলো ২৭ লাখ টাকা মূল্যের ফল। সব পুড়ে গেছে। সবমিলিয়ে ঘর বাদে তার প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877