বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ওমরা করতে গিয়ে বাবার সঙ্গে প্রাণ গেল ভাইবোনের

ওমরা করতে গিয়ে বাবার সঙ্গে প্রাণ গেল ভাইবোনের

স্বদেশ ডেস্ক:

সৌদি আরবে পবিত্র মক্কায় ওমরাহ শেষে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হন আরও দুজন। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে সৌদি আরবের আল কাসিম এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- মোবারক হোসেন (৪৮), তার ছেলে তানজিল আব্দুল্লাহ মাহি (১৫) ও মেয়ে মাহিয়া (১৩)। মাহি ওই দেশের নবম শ্রেণিতে ও মাহিয়া সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত।

আহত হন মোবারকের স্ত্রী শিখা আক্তার (৪০) ও বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানা মীম (১৯)। উচ্চ শিক্ষার জন্য চলতি মাসের ২৩ তারিখ মীমের কানাডা যাওয়ার কথা ছিল। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নিহত সৌদি প্রবাসী মোবারক ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার হাজীগঞ্জের গাজিরটেক গ্রামের শেখ মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহন শেখের ছেলে। পাঁচ ভাই আর তিন বোনের মধ্যে মোবারক দ্বিতীয়।

জানা গেছে, গত ৩ আগস্ট ওমরাহ পালনের উদ্দেশে মোবারক স্বপরিবারে মক্কায় আসেন। দুদিন পর ওমরাহ শেষে মোবারক পরিবার নিয়ে ৫ আগস্ট নিজ কর্মস্থল দাম্মাম শহরে ফিরছিলেন। পথে মদিনা থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে রাত ৩টার দিকে আল কাসিম এলাকায় প্রাইভেটকারের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোবারক হোসেন, তার ছেলে তানজিল আব্দুল্লাহ মাহি ও মেয়ে মাহিয়া নিহত হন। আহত হন স্ত্রী শিখা আক্তার ও বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানা মীম।

নিহত মোবারকের পরিবার সূত্রে জানা যায়, পরিবারে অর্থের সঙ্কট কাটাতে ২০ বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান মোবারক। এরপর দুই ভাইকে নিয়েছেন সৌদি এবং এক ভাইকে পাঠিয়েছেন দুবাইয়ে। মোবারক স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে থাকতেন। সেখানে তার কার রিপেয়ার শপ (গাড়ি মেরামতের দোকান) রয়েছে।

এদিকে সন্তান, নাতি-নাতনিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মোবারকের মা বৃদ্ধা মা আলেয়া বেগম। অশ্রুভেজা চোখে তাকিয়ে রয়েছেন ছেলে, নাতি-নাতনির ছবির দিকে।

সরেজমিনে আজ রোববার ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলীর মোবারকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তান, নাতি-নাতনিকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে বসে আছেন বৃদ্ধা আলেয়া বেগম। দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে, কোনো কথা বলতে পারছেন। এদিকে বড় ভাইকে হারিয়ে ভাই-বোনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ।

মোবারকের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘৬ মাস আগে বড়ভাই মোবারক ও তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে দেশে এসেছিলেন। ভাইয়ের বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানা মীমের ২৩ আগস্ট উচ্চ শিক্ষার জন্য কানাডায় যাওয়ার কথা ছিল। এ কারণে স্ত্রী, ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে ওমরাহ করতে যান তিনি। ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক সময় নদী ভাঙনে আমাদের বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়। ভাই সংসারে অর্থিক কষ্ট দূর করতে সৌদি যান। অনেক কষ্ট করে ভাই-বোনদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। দুই ভাইকে সৌদি নিয়েছেন, আরেক ভাইকে দুবাই পাঠিয়েছেন। বোনদের বিয়ে দিয়েছেন। আমাদের বাড়ি করে দিয়েছেন। ভাই শুধু আমাদের দিয়েই গেছেন, আমরা ভাইয়ের জন্য কিছুই করতে পারিনি।’

মোবারক হোসেনের ছোট বোন নাজিয়া আফরোজ রিক্তা বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। ভাই বললেন আমি ওমরাহ করতে যাচ্ছি আমার জন্য দোয়া করিস। বড় ভাই ছিল আমাদের বটগাছ। সব সময় আমাদের সব আবদার পূরণ করতেন। আমার ভাতিজা-ভাতিজি সেখান থেকে আমাকে ভিডিও পাঠিয়েছে, কী খাচ্ছে, কী করছে। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।’

মোবারকের বাবা শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমার মোবারকের জন্যই আজ আমাদের অবস্থার উন্নতি। কী করলে আমরা একটু ভালো থাকব, সব সময় ওর মাথায় এই চিন্তাই থাকত। বলত আব্বা আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, যখন যা লাগবে আমাকে জানাবেন। আমার কোনো কিছুই চাওয়া লাগতো না ওর কাছে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ছোট নাতি-নাতনি আমাকে কতো ভালোবাসত। কিছুদিন আগেই ওরা এসেছিল। আমাকে কী পরলে ভাল লাগে, কী খেতে ভাল লাগে সব সময় শুনতো। ওদের ভুলব কী করে। এই বৃদ্ধ বয়সে আমি সহ্য করতে পারছি না। বাবা বেঁচে থাকতে ছেলের মৃত্যু কীভাবে মেনে নেব। আমার সব শেষ হয়ে গেল।’

তিনি আরও বলেন, ‘খবর পেয়ে আমার ছেলের শ্যালক সৌদি চলে গেছেন। আমার ছেলে, নাতি-নাতনিদের মরদেহ দেশে আনার কথা বলেছি। ওদের এক নজর দেখতে চাই।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877