স্বদেশ ডেস্ক: “আমি যা বলছি সেটাই ঠিক। তুমি কিস্যু জানো না।”
“ডিনারে কোন রেস্তরাঁয় যাবে? চাইনিজ খাব না। চলো, থাই খেতে যাই।”
স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে এমন আলাপ বেশ পরিচিত। কথাগুলোয় বেশ কর্তৃত্ব প্রকাশ পায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দাম্পত্য বা প্রেমের সম্পর্কেই কেউ না কেউ লিডার। কিন্তু সব ব্যাপারে আমিত্বের ঢাক পিটিয়ে খবরদারি করা এক ধরনের মানসিক সমস্যা। সহজ কথায় বললে, নার্সিসিম মানসিকতা। এই ধরনের ব্যবহার যখন অভ্যাসে পরিণত হয় তখনই শুরু হয় সঙ্গী বা সঙ্গিনীর উপর মানসিক নির্যাতন। অনেকে আবার পার্টনারের এমন অত্যাচারকে নিছক স্বভাব বলে ধরে নিয়ে সব সহ্য করতে থাকেন। আর যখন সব সীমা পেরিয়ে যায় তখন ঘটে বিস্ফোরণ। পরিণতি সম্পর্কে ছেদ। ডির্ভোসের অন্যতম কারণ স্বামী-স্ত্রীর ‘আমিত্বে ভোগা’ বা ‘নিজেকে জাহির’ করা রোগ।
এমন সম্পর্কগুলো জোর করে টিকিয়ে না রেখে কীভাবে সুন্দর করে তোলা যায় তা নিয়ে গবেষণা করছেন আমেরিকা, স্লোভেনিয়ার মতো উন্নত দেশগুলির মনোবিদরা। স্লোভেনিয়ার সাইকোথেরাপিস্ট কাটারিনা ভালেন্তিনির কথায়, মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা বেশি নার্সিসিস্ট হয়। তাদের এই স্বভাবের জন্য বহু সংসার ভাঙছে। অনেক সময় নার্সিসিস্টরা এমন ব্যবহার করেন যাতে পার্টনার দ্বিধায় ভোগেন। পার্টনারের এই আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতা দাম্পত্য সম্পর্ককে দমবন্ধ করে তোলে।
কীভাবে বুঝবেন আপনার জীবনসঙ্গী নার্সিসিস্ট কি না? সাইকোথেরাপিস্টরা কয়েকটি লক্ষণ দেখে চিনে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁদের মতে, নার্সিসিস্টরা সাধারণত পার্টনারের সমস্ত মনোযোগ শুধুমাত্র তার উপরেই সব সময় থাকুক এমন চান। তাঁর ইচ্ছা, প্রয়োজনের গুরুত্ব দেওয়া হোক, তা চান। এত গুরুত্ব পাওয়ার পরও পার্টনারের কাছে ন্যূনতম কৃতজ্ঞ থাকেন না। একইসঙ্গে এঁরা সব সময় নিজেদের বেশি জ্ঞানী মনে করেন। তিনি যা বলছেন সেটাই ঠিক। পার্টনারের সঙ্গে আলোচনা করে কোনও সিদ্ধান্ত নেন না। কারও মতামতকে পাত্তা দেন না। নিজের সিদ্ধান্ত জীবনসঙ্গীর উপর চাপিয়ে দিতে থাকেন। এছাঙাও এঁরা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করে যে কোনও কলহের সময় পার্টনারকে দোষী প্রমাণিত করার চেষ্টা করেন। মনোবিদদের ব্যাখ্যা, নার্সিসিস্টরা ইমোশনাল ইনসিকিওরিটিতে ভোগেন। নিজেদের বক্তব্যে অটুট থাকার জন্য তাঁরা পাঁচ বছরের বাচ্চার মতো জেদ করেন। সব সময় দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে সমস্যা এডড়য়ে যাওয়াই নার্সিসিস্টদের স্বভাব। এঁদের সহ্য করতে করতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় পার্টনারদের। যার প্রভাব পড়ে সম্পর্কের উষ্ণতাতেও। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমেই নার্সিসিস্টদের স্বভাব বদলানো সম্ভব বলে দাবি ভালেন্তিনির। একইসঙ্গে তাঁর মত, পার্টনারের এমন ব্যবহার দেখলে আগে তাঁকে অকারণ সহ্য করবেন না। এই ধরনের স্বভাবে মদত দিলে সমস্যা দিন দিন আরও বাঙবে।