স্বদেশ ডেস্ক:
বলিউড অভিনেতা দিলীপ কুমারের সত্যিকারে নাম যে মোহাম্মদ ইউসুফ খান তা অনেকেই জানেন না। রূপালী পর্দায় দিলীপ কুমার নামেই নিজের পরিচয় গড়েন এই কিংবদন্তি। তবে এখানে ঘটেছে উল্টোটাই। উপমহাদেশের সুরসম্রাট খ্যাত এআর রহমান ক্যারিয়ার শুরু করেন দিলীপ কুমার নামে। সে সময় তিনি সনাতন ধর্ম পালন করতেন। শুরুতে অনেকের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। বাতিল হয়ে যায় তার অনেক জিঙ্গেল।
পরে বাবা তামিল সংগীত পরিচালক আরকে শেখরের মৃত্যুর কয়েক বছর পরে ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি। ইসলামের ছায়াতলে এসে নিজের নাম নিজেই রাখেন আল্লারাখ্খা রহমান বা সংক্ষেপে এআর রহমান। এরপর পরই যেন সাফল্যের সিঁড়িটা তার পায়ে এসে ঠেকে।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই রহমান যখন নিজে এবং তার পুরো পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, তখনই মুক্তি পায় সিসেমা ‘রোজা’। আর সেই সিনেমার সংগীত পরিচালক ছিলেন এআর রহমান। রাতারাতি তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ভারতের পর বিশ্বজুড়ে।
তুমুল জনপ্রিয়তা পায় রোজার সব গান। টাইম ম্যাগাজিনের সর্বকালের ‘১০ সেরা সাউন্ডট্র্যাক’-এ তালিকাভুক্ত হয়। অ্যালবামের তামিল এবং হিন্দি সংস্করণ ভারতে ৩ মিলিয়ন ইউনিট বিক্রি করে।
এককথায় রহমানের কেরিয়ারের মোড় ঘোরানো সিনেমাই হলো রোজা। তার তৈরি যেসব জিঙ্গেল একসময় বাতিল হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো গ্রহণযোগ্যতা পেতে থাকে। জনপ্রিয়তাও পায়।
সে সময় ধর্মান্তর নিয়ে কথা উঠলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এআর রহমান বলেছিলেন ইসলাম তাকে মানসিক শান্তি দেয়।
তিনি বলেছিলেন, ‘কেউ আমাকে ইসলামের পথে আসার জন্য বলেনি। আমিই অনেক শান্তি পেতাম। মনে হচ্ছিল, সব যেন ঠিক মতো চলছে। মনের ভেতরে কিছু বিশেষ অনুভূতি কাজ করত। যে জিঙ্গেলগুলি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, প্রার্থনার পর সেগুলোই কবুল হয়ে যেতে থাকল। ’
ইসলাম নিয়ে এ অস্কারজয়ী সুরকার জানান, ‘আধ্যাত্মিক গুরুরা, সুফি সাধকরা আমাকে, আমার মাকে যা শিখিয়েছেন সেটা অনন্য। আসলে প্রতিটা বিশ্বাসেই কিছু অনন্যতা রয়েছে। আমি যা বেছে নিয়েছি তার প্রতি আমার আজীবন আস্থা থাকবে। ’
রহমানের কথায়, ‘আমার যেমন হয় আমি নামাজ আদায় করব তাই আমার সাথে খারাপ কিছু হতেই পারে না। অন্য ধর্মের মানুষরাও তাই করে থাকেন। এটাই মানসিক শান্তি দেয়। আমার মনে হয় এটা থাকাই সবচেয়ে বেশি দরকার। ’
এরআর রহমানের পর পর মাসহ তার গোটা পরিবারই ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে।
এ বিষয়ে এ ভারতীয় সুর সম্রাট জানিয়েছেন, বিষয়টি পরিবারের কারও উপর জোর করে চাপিয়ে দেননি তিনি। ইসলামের মহিমায় আচ্ছন্ন হয়েই তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এআর রহমান বলেন, ‘আপনি কিছুই চাপিয়ে দিতে পারেন না। আপনি আপনার সন্তানদের বলতে পারেন না ইতিহাস পড় না, কারণ এটা বোরিং। বলতে পারেন না অর্থনীতি বা বিজ্ঞান নিয়ে পড়। এটা তাদের ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর নির্ভরশীল। ’
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ৪টি জাতীয় পুরস্কার, ১৫টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেন এআর রহমান। সে বছর ১৩৮টি নমিনেশনের মধ্যে ১১৭টিতেই পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন তিনি। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে তিনিই প্রথম কোনো সংগীত পরিচালক যিনি একই বছর দুটি অস্কার জিতেছিলেন।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস