ক্রিকেটীয় পরিবারেই বেড়ে ওঠা। ইংল্যান্ডের হয়ে ১১ টেস্ট ও ৯ ওয়ানডের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের চেয়ে বেশি পরিচিত নিজের ক্লাব ওরস্টারশায়ারের কোচ ও প্রশাসক হিসেবেই। তারপরও গত বছরের জুনে যখন বাংলাদেশের হেড কোচ হিসেবে স্টিভ রোডসের নাম ঘোষণা করা হয়, অনেকেই কপাল কুঁচকেছিলেন।
অথচ সেই রোডসই ধীরে ধীরে হয়ে উঠছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের গূরুত্বপূর্ণ চরিত্র। প্রথম কোনো ত্রিদেশীয় সিরিজ জিতে তো ইতিহাসেই নাম লিখিয়ে ফেলেছেন।
”আমি হয়তো তালিকার নিচের দিকেই ছিলাম। অন্যরা দায়িত্ব নেয়নি বলে আমার কপাল খুলেছে। আমিও শুরুতে ভালো কোচ ছিলাম না। ধীরে ধীরে আমি পরিণত হয়েছি।’-সরল স্বীকারোক্তি রোডসের। কথা বার্তার মতো আচরণেও এরকম সরল ৫৪ বছর বয়সী রোডস। মুখে স্মিত হাসি লেগেই আছে। চশমা চোখে রীতিমতো প্রফেসর মনে হয়। তবে ক্লাসরুমের বদলে ক্রিকেট মাঠে থাকলেও চলাফেরায় একেবারেই ধীর স্থির। ক্রিকেটারদের ছাত্রের চেয়ে বন্ধুই মনে করেন বেশি।
‘দেখুন ফুটবল ম্যানেজাররা হয়তো হাফটাইম অনেক কিছু ছুঁড়ে মারেন। তবে সবসময় আপনি এমনটা করতে পারেন না। এর কোনো মূল্য নেই। আমার দর্শন হল খেলোয়াড়দের বোঝা। কারো হয়তো পিঠে হাত বুলাচ্ছি আবার কারো সাথে প্রয়োজনে একটু কঠোর হচ্ছি। যে মূহুর্তে দলের জন্য যেটা দরকার।’
এই শান্তশিষ্ট মানুষটিও অবশ্য বিশ্বকাপ ঘিরে নিজের হৃদস্পন্দন ঠিকই টের পাচ্ছেন।
তার ক্রিকেটারদের কিভাবে প্রস্তুত করছেন তিনি?
‘বিশ্বকাপ বিশাল ব্যাপার। কিন্তু আমি নিজেকে সবসময় শান্ত রাখছি। কারণ এখানে অন্য যেকোন ওয়ানডে ম্যাচের মতো শেষ পর্যন্ত বেসিকটাই ভালো করতে হয়। খেলোয়াড়দেরও রিল্যাক্স রাখার চেষ্টা করছি, খুব বাড়তি কিছু করছি না। কারণ বেশিরভাগ সময় ক্রিকেটাররা খুব বেশি কিছু করতে গেলেই সমস্যা তৈরী হয়।’
আপাতত নিজের দীর্ঘদিনের ইংলিশ অভিজ্ঞতা মাশরাফি-সাকিবদের ঢেলে দিচ্ছেন স্টিভ রোডস। লর্ডস, ওভাল, প্রতিটি ভেন্যু তার নখদর্পণে। ক্রিকেটারদের নানা কৌতুহলও প্রতিনিয়ত মিটিয়ে চলেছেন। বিশ্বকাপ ঘিরে বাংলাদেশের সমর্থকদের প্রত্যাশার পারদটা ঠিকই টের পাচ্ছেন। নিজের উপরও একটা চাপ আছে বৈকি। তবে সবাইকেই বাস্তববাদী হবার আহবান রোডসের।
‘এখানে যেটা ভালো লাগে, সবাই সেরা ফলফলটা চায়, জিততে চায়। আমি জানি বিশ্বকাপে আমার পারফরম্যান্সও মূল্যায়ন হবে। সেটাই নিয়ম। এই দেশে ক্রিকেট নাম্বার ওয়ান। তবে সবাইকে বাস্তববাদী হতে হবে। বাংলাদেশের ভালো সম্ভাবনা আছে, একবার সেমিতে গেলে যেকোন কিছুই হতে পারে।’
পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটারের উপরই কি আস্থাটা বেশি রাখছেন তিনি?
রোডস অবশ্য প্রবল আপত্তি তোলেন এখানে! সাকিব, তামিম, মাশরাফি, মুশফিক, রিয়াদের সাথে মুস্তাফিজকে ঢুকিয়ে তালিকাটা ৬ জনের করতে চান।
‘সাকিবের অনেক কিছু প্রমাণ করা বাকি। আইপিএলে এবার একটু ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। সে পারফরম্যান্সের জন্য ক্ষুধার্ত থাকবে।’
মাশরাফিও সফল হতে চাইবে। সে এখন এমপি। হয়তো এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। মুশফিক, রিয়াদ, তামিম প্রত্যেকেই সেরা ফর্মে আছে, তাঁদের অভিজ্ঞতা ভীষণ কাজে দেবে।
স্টিভ রোডসের ব্যক্তিগত লক্ষ্যও আছে
বিশ্বকাপে ১০ দলের মধ্যে তিনিই একমাত্র ইংলিশ হেড কোচ। আবার কোচ হিসেবেও এটাই তার প্রথম বিশ্বকাপ। আর সেটাও ইংল্যান্ডের মাটিতেই।
‘এটা ভীষণ গর্বের। খুবই উত্তেজনাকর। আর এ কারণেই আমি নিজেকে প্রতিনিয়ত শান্ত রাখার চেষ্টা করছি।’
কিন্তু ৮ জুন কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে নিজেকে কি করে শান্ত রাখবেন তিনি?
‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার অনুভূতি আমি এখনো জানি না। তারা হট ফেভারিট। আর আমি আন্ডারডগ থাকতেই পছন্দ করি। হারানোর কিছু নেই। আবার যদি জিতে যাই তাহলে সেটা বড় দলের কাছ থেকে কোনো কিছু ছিনতাই করে নেয়ার মতো ব্যাপার।’
‘দেখুন আমি আপাদমস্তক ইংলিশ হলেও বাংলাদেশের হয়ে তাদের হারাতে চাইবো।’
২০১৫ বিশ্বকাপে অবশ্য সেই অভিজ্ঞতা আগেই হয়েছে টাইগারদের।
পাখির চোখ দক্ষিণ আফ্রিকা
তবে আপাতত স্টিভ রোডস সব নজর রাখছেন দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে। বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ, তার বিশ্বকাপ অভিষেক।
‘দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ম্যাচটা কঠিণ হতে যাচ্ছে নি:সন্দেহে। আমাদের ছেলেরা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তবে দারুণ হবে যদি বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপে ফেলতে পারে।’
সবশেষে দর্শকদের জন্যও বার্তা দিলেন রোডস।
‘আশা করছি দারুণ টুর্নামেন্ট হবে। তবে আমাদের দর্শকদের একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমরা হয়তো খুব টাইট কোন ম্যাচ হেরে যাব, আবার কিছু জিতবো। তবে সেরাটাই দিবো আমরা। সূত্র : বিবিসি।