শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
উজরা জেয়ার সফর নিয়ে কেন চীনের ক্ষোভ

উজরা জেয়ার সফর নিয়ে কেন চীনের ক্ষোভ

স্বদেশ ডেস্ক:

ভারত সফর শেষ করে আজ মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন মার্কিন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। এর আগে রোববার ভোরে দিল্লি পৌঁছান তিনি। এরপর তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামার সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে ভারত সফর শুরু করেন তিনি। তার সেই বৈঠক নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চীন।

ওই সাক্ষাতের পর গতকাল সোমবার ভারতে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া ভাষায় বলা হয়, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তারা যেন বিন্দুমাত্র নাক গলানোর চেষ্টা না করে।

ওই বিবৃতিতে দিল্লিতে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ওয়াং সিয়াওজিয়াং বলেন, সিজাংকে (তিব্বত) চীনের অঙ্গ হিসেবে মেনে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা পালন করা উচিত। তিব্বতের দোহাই দিয়ে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো বন্ধ করা হোক। তিব্বতের ভারপ্রাপ্ত তথাকথিত বিশেষ কো-অর্ডিনেটর (উজরা জেয়া) যা করেছেন, তা ‘নির্ভেজাল অপরাধ’। তিব্বতের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টায় তা এক রাজনৈতিক ছক।

দালাই লামার সঙ্গে ওই সাক্ষাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আরও ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, ইউএসএআইডির উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর ও ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেট্টি।

উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লুসহ মার্কিন কর্মকর্তা তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামার সঙ্গে সাক্ষাৎকার করেন

গতকাল সোমবার উজরা জেয়া বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে। টুইট বার্তায় সেই বৈঠকের খবর জানান উজরা জেয়া। এছাড়া ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেট্টির সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেন তিনি। ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডাইভারসিটি, ইকু্ইটি, ইনক্লুশন অ্যান্ড অ্যাকসেসিবিলিটি কাউন্সিল’ (ডিইআইএ)–এর সদস্যদের সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।

ঢাকায় এসেছেন উজরা জেয়া

ভারত সফর শেষে আজ উজরা জেয়ার নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকায় পৌঁছায়। প্রতিনিধিদলে রয়েছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন, ১১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা সফর করবে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি। উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে কথা হবে। তারা আসার পর বাংলাদেশের সঙ্গে কী আলোচনা হবে তখন বোঝা যাবে। এখন পর্যন্ত কোনো এজেন্ডা ঠিক হয়নি।

মার্কিন প্রতিনিধিদলের প্রধান উজরা জেয়ার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন

কেন ঢাকায় উজরা জেয়া

যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র, মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া কেন বাংলাদেশ আসছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে এক বাংলাদেশি সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে আগ্রহ দেখাচ্ছে সেটিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে রাশিয়া, চীন ও ইরান। গত সপ্তাহে রাশিয়া ও চীন এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্কে এর সমালোচনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়।

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে অন্যদের কেন আপত্তি থাকবে সেটি তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে তার প্রতিশ্রুতি বারবার ব্যক্ত করেছেন। ৫০ বছরের বেশি সময় যাবৎ বাংলাদেশের বন্ধু এবং অংশীদার হিসেবে আমরা উভয়েই এই আকাঙ্ক্ষা ব্যক্তি করি।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক বিপরীতে আরেকটি রাজনৈতিক দলকে তারা সমর্থন করেন না। বরং সত্যিকার গণতান্ত্রিক ধারাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র।

উজরা জেয়া এবং ডোলান্ড লুর সফরে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। সেটি পরিষ্কার করে জানানো হয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই সংবাদ সম্মেলনে। সফরে তারা ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে রোহিঙ্গা সংকট, শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, মানবপাচার এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে।

ম্যাথিউ মিলার জানান, এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে মতপ্রকাশের ও সংগঠনের স্বাধীনতা, সুশাসন এবং গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877