বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন

প্রথম আলোর বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ

প্রথম আলোর বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ

স্বদেশ ডেস্ক:

মানহানিকর ও সাংবাদিকতার নীতিবহির্ভূত সংবাদ প্রকাশের কারণে উকিল নোটিশ পাঠানোর পর এবার দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক মোহাম্মদ মোস্তফার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার প্রেস কাউন্সিল আইন-১৯৭৪-এর অধীনে এই অভিযোগ করেন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেড ও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. নূর আলীর পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. আবু তালেব। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক ও প্রেস কাউন্সিলের অন্য সদস্য বরাবর এ অভিযোগ দাখিল করা হয়।

অভিযোগে ওই সংবাদ প্রকাশ পেশাগত অসদাচরণ ও সাংবাদিকতার নীতিমালার লঙ্ঘন হিসেবে কেন ঘোষণা করা হবে না, কেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির আর্জি জানানো হয়। আইনজীবী মো. আবু তালেব বলেন, প্রাথমিক শুনানির পর প্রেস কাউন্সিল অভিযোগটি আমলে নিয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, গত ১ জুন প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ‘সরকারি জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল’ শিরোনামের সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও পক্ষপাতদুষ্ট। ওই সংবাদ প্রকাশ করায় বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেড ও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. নূর আলীর সামাজিক সুনাম ও মর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে। এ ছাড়া মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ওপর প্রথম আলো কালিমা লেপন করেছে, যা সাংবাদিকতার নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থি।

এ অবস্থায় প্রথম আলোর সংবাদটিকে কেন দুরভিসন্ধিমূলক অসদাচরণ ও সাংবাদিকতার নীতিমালা লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হবে না এবং এই কারণে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে নাÑ তার কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির জন্য প্রেস কাউন্সিলের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে অভিযোগপত্রে। আগামী দুই দিনের মধ্যে প্রথম আলোর অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংবাদটি অপসারণের আবেদনও জানানো হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিশের শুনানি ও বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত যা বলবৎ থাকবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ৭ মে রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের ৪৪ নম্বর প্লটে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের চুক্তি সম্পাদিত হয় ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) এবং বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের মধ্যে। চুক্তি অনুযায়ী, সরকারি সব নিয়ম ও বিধিবিধান মেনে নিয়েই সেখানে হোটেল শেরাটন ভবন নির্মাণ করে বোরাক রিয়েল এস্টেট। এটি বোরাক রিয়েল এস্টেট ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের যৌথ মালিকানাধীন প্রকল্প।

ভবনটি নির্মাণে ২০০৭ সালের ২৫ জুন ঢাকা সিটি করপোরেশনের তৎকালীন অথরাইজড অফিসার (প্রধান প্রকৌশলী) কর্তৃক ৩০তলা ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০০৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বুয়েট কর্তৃক ৩০তলার স্ট্রাকচারাল নকশা ভেটিংসাপেক্ষে ভবনটি নির্মিত হয়েছে। এর পর ২০০৭ সালে সিটি করপোরেশন কর্তৃক বিভিন্ন সংস্থা থেকে ৩০তলার ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয় (সিটি করপোরেশন, ডিএমপি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, তিতাস, পরিবেশ অধিদপ্তর, ডেসকো, ঢাকা ওয়াসা প্রভৃতি)। সিটি করপোরেশনের আরএফপি অনুসারে ৬০ কাঠা জমির ওপরই ভবন নির্মাণের জন্য ২০০৪ সালের ১০ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল।

এরপর ২০১১ সালের ২৭ নভেম্বর ডিএনসিসির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ১৫ থেকে ৩০তলা ভবন নির্মাণের বিষয়টি মেয়র কর্তৃক অনুমোদন হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার সচিবকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করেন। তৎকালীন মেয়র প্রয়াত আনিসুল হক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং বোরাক রিয়েল এস্টেটকে ২০১৫ সালের ৩১ মে লিখিতভাবে তা অবহিত করেন।

বোরাক রিয়েল এস্টেট তাদের প্রাপ্য শেয়ারের নিজ জায়গায় হোটেলটি স্থাপন করেছে, যা ১২-২৮তলা পর্যন্ত অবস্থিত। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অংশ সংরক্ষিত রয়েছে, যা ৪-১১তলা পর্যন্ত অবস্থিত। ডিএনসিসির প্রাপ্য অংশে শেরাটনের কোনো কিছুই অবস্থিত নয়।

প্রকল্পটির ১৫ থেকে ২৮তলার শেয়ার বণ্টন প্রক্রিয়াটি দুই পক্ষের মধ্যে ইতোমধ্যে মেয়রের সভাপতিত্বে ডিএনসিসির বোর্ডসভায় তাদের অনুকূলে ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ৪০ শতাংশ শেয়ার অনুমোদিত হয়েছে।

১৪তলা পর্যন্ত শেয়ার বণ্টন নিয়ে কোনো দিনই কোনো প্রশ্ন ছিল না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ওই সিদ্ধান্ত চিঠির মাধ্যমে ২০২৩ সালের ২ মার্চ স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে অবহিত করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন তাদের প্রাপ্য ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৪ থেকে ১১তলা পর্যন্ত তাদের প্রাপ্য অংশ যে কোনো সময় বুঝে নিতে পারে।

প্রেস কাউন্সিলে দাখিল করা অভিযোগপত্রে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিষয়ে বলা হয়, বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেড দেশের স্বনামধন্য একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান; বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ে অগ্রপথিক। প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীতে প্রচুর আইকনিক ভবন নির্মাণ করে চলেছে। সবার কাছে একনামে এটি পরিচিত। উপরন্তু বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. নূর আলী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এ ছাড়া তিনি ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেডেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পর্যটন, সিরামিক শিল্প, বিদ্যুৎকেন্দ্র, জনশক্তি রপ্তানি, ব্যাংকিংসেবা, গৃহনির্মাণ খাতে অর্থায়ন ও বিনিয়োগ, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টসহ আরও নানাবিধ উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে তিনি সুনামের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। মোহা. নূর আলী খ্যাতনামা ইউনিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি উদ্যোক্তা, যিনি বেসরকারি খাতে পাঁচতারকা হোটেল (দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা) প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। শুধু তা-ই নয়, মোহা. নূর আলী বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সদস্য, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877