স্বদেশ ডেস্ক:
নাগরিকত্ব নিয়ে নিরাপদে মিয়ানমারে নিজ গ্রামে ফেরার দাবিতে কক্সবাজারের উখিয়া শিবিরে সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে উখিয়া লম্বাশিয়া ১ নম্বর ক্যাম্পে এ সমাবেশ হয়। শিশু-কিশোরসহ হাজারো রোহিঙ্গা সমাবেশে অংশ নেয়।
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা জানান, মিয়ানমারে গণহত্যার শিকার হয়ে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তাদের দাবিগুলো পূরণে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তারা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) নেতা ও রোহিঙ্গা শরণার্থী মাস্টার মো. রফিক, মাস্টার মো. কামাল।
এ সময় রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মো কামাল বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। আমরা আর রিফিউজি জীবন চাই না। নিজ দেশে গিয়ে বাকি জীবন কাটাতে চাই। কারণ আমরা বাংলাদেশের নাগরিক নই, আমরা মিয়ানমারের নাগরিক। আমরা আমাদের নাগরিকত্ব, রোহিঙ্গা স্বীকৃতি আর নিজ গ্রামের ভিটেমাটি ফেরত দিলেই ফিরে যাব।’
টেকনাফ ২৬ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা বজলুর রহমান বলেন, আমরা চরম দুর্ভাগা। বিশ্ব শরণার্থী দিবসের ভিকটিম হয়ে অন্য দেশের বোঝার মতো বসবাস করছি। বিশ্বনেতাদের কাছে বলছি- আমরাও মানুষ। নাগরিকত্ব ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচার অধিকার আমাদেরও আছে।’
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ রফিক বলেন, পৃথিবীর সব দেশের মানুষ নিজ দেশে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে চায়। আমরা রোহিঙ্গা জাতি, আমাদেরও দেশ আছে, যেখানে আমাদের পূর্বপুরুষরা কবরস্থ হয়েছেন। আমরা সে দেশে থাকতে চাই। শরণার্থী হিসেবে আর জীবন কাটাতে চাই না। বিশ্ব সম্প্রদায় উদ্যোগ নিক, আমরা আমাদের দেশে ফিরতে চাই- এটাই আমাদের একমাত্র দাবি।
বিশ্ব শরণার্থী দিবসে আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করতে দুপুর থেকে শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মো. মিজানুর রহমান বলেন, বাস্তুচ্যুত এ বিপুল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গেও অব্যাহত রয়েছে আলোচনা।
এ রোহিঙ্গা শিবিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশিদ জানান, শরণার্থী দিবস উপলক্ষে রোহিঙ্গারা দুটি স্থানে সমাবেশ করেছে। সেখানে পাঁচ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অংশ নেয়। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে সাড়ে ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অবস্থান করছেন। ২০১৮ সালে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে এ পর্যন্ত বাছাই করেছে মিয়ানমার। কিন্তু এখনো কোনো রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সরকার ফেরত নেয়নি। পরে মিয়ানমার সরকারের নানা কৌশলে তারা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এড়িয়ে গেলেও বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতা ও আন্তর্জাতিক মহল চাপ অব্যাহত রেখেছে।