শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ১০:৫৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সাইকেলে চড়া কুঁড়েঘরের মানুষটি এখন মন্ত্রী

সাইকেলে চড়া কুঁড়েঘরের মানুষটি এখন মন্ত্রী

বাঁশের তৈরি কুঁড়ে ঘরে থাকেন তিনি। চলাফেরা করেন বাইসাইকেলে। মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল সাধু হওয়ায়। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর সে ইচ্ছে আর পূরণ হয়নি। তবে সাধু না হতে পারলেও মানুষের ভালোবাসায় হয়েছিলেন বিধায়ক। এরপর সেই ভালোবাসা নিয়ে এবার হয়েছেন সংসদ সদস্য। নির্বাচনে জিতে সেই আত্মবিশ্বাস আর সাহসিকতায় জায়গা পেলেন নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায়।

সেই মানুষটির নাম প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গি(৬৪)। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে উড়িষ্যার বালেশ্বর থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শপথ গ্রহণ করেছেন নরেন্দ্র মোদি। সেই মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন সারেঙ্গি। অত্যন্ত সাদাসিদে আর সাহসী এই মানুষটি এবারের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন অটোতে করে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বালেশ্বরের এই সংসদ সদস্য বিজেডি প্রার্থী রবীন্দ্র কুমার জেনাকে ১২ হাজার ৯৫৬ ভোটে হারিয়েছেন। মোদির মন্ত্রিসভায় পেয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পশুপালন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গি উড়িষ্যার মোদি হিসেবেও খ্যাত। মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ায় ফলে আরেক নরেন্দ্র মোদি পেলেন ভারতীয়রা।

মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে নতুর পাঞ্জাবি কিনেছেন সারেঙ্গি। তার নাম যখন ঘোষণা করা হলো, তখন সবচেয়ে বেশি হাততালি পেয়েছেন উড়িষ্যর অখ্যাত এই মানুষটি। লোকসভার সদস্য হওয়ার আগে প্রতাপ সারেঙ্গি উড়িষ্যার নীলগিরি আসন থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন। ২০০৪ ও ২০০৯ সালে বিধানসভা নির্বাচনেও জেতেন তিনি। ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্য বিজেপির সহসভাপতি ছিলেন তিনি। ওড়িষ্যার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যুগ্ম সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। এরপর ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি থেকে নির্বাচন করলেও সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি।

প্রতাপ সারেঙ্গি উড়িষ্যার নীলগিরির গোপীনাথপুর গ্রামে এক গরীব ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন। স্থানীয় ফকিরমোহন কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। তার ইচ্ছে ছিল সাধু হয়ে দেশ আর মানুষের সেবা করবেন। কিন্তু মঠের সন্ন্যাসীরা যখন জানলেন, তার বাবা মারা গেছেন, বাড়িতে মা একা, সঙ্গে সঙ্গে ফেরত পাঠিয়ে দেন মায়ের সেবা করার জন্য। মঠের সাধু না হতে পারলেও, তাদের মতো সাধারণ জীবনযাপনের অভ্যাস কখনো ছাড়েননি প্রতাপ সারেঙ্গি। বিয়েও করেননি।

ওড়িষ্যার বিজেপি নেতা সমীর মোহান্তি জানান, একবার নির্বাচনের আগে তিনি বিজেপির দেওয়া মনোনয়নের নথিটি হারিয়ে ফেলেছিলেন। কারণ তিনি বেসরকারি বাসে যাতায়াত করেন। তাই শেষ পর্যন্ত নির্দলীয় প্রার্থী হিসাবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। পরে যোগ দেন বিজেপিতে। মানুষের সেবা এবং রাজনীতি করতে গিয়ে সাতটি ফৌজদারি মামলায় জড়িত হয়েছেন।

নির্ভেজাল এই মানুষটি নির্বাচনে জেতায় স্থানীয়রা যেমন খুশি, তেমনি খুশি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। তার সঙ্গে প্রতাপের রয়েছে বেশ সখ্যতা। মোদি উড়িষ্যায় গেলে সারেঙ্গির সঙ্গে দেখা করেন।

শুধু বিজেপির রাজনীতিই নয়, তাদের মধ্যে মিল আছে আরেক জায়গাতেও। দুজনেই রামকৃষ্ণ মিশনের সাধু হতে গিয়েছিলেন, দুজনকেই সন্ন্যাসীরা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। পাকাপোক্ত ভাবে গেরুয়া ধারণ না করলেও দুজনেই এখন গেরুয়া শিবিরের সদস্য।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877