শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

আজ থেকে পেঁয়াজ আমদানি

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশের বাজারে দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা আইপি দেওয়া হবে। গতকাল রবিবার বিকালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের, শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ সব ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় বিগত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ রাখা হয়েছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেবে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর আগে সম্প্রতি পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমদানির অনুমতি (আইপি) প্রদানের ব্যবস্থা নিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ১৪ মে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে সভা করে কৃষি মন্ত্রণালয়। ওই সভায় কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার জানান, উৎপাদন ও মজুদ বিবেচনায় দেশে এই মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। অথচ বাজারে দাম কিছুটা বেশি। কৃষি মন্ত্রণালয় বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। দাম বাড়তে থাকলে শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

পেঁয়াজ আমদানি করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ শাখা থেকে আমদানির অনুমতি বা আইপি নিতে হয়। কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে পেঁয়াজ আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান কৃষি মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। তবে যেহেতু মানুষের কষ্ট হচ্ছে, দাম বেড়ে যাচ্ছে তাই মন্ত্রণালয় আমদানির কথা ভাবে।

দেশের বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়েছে কয়েক গুণ। মাস-দেড়েক আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ক্রেতাদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ প্রায় ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বিক্রেতাদের অভিযোগ, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় দাম বাড়ছে।

জানা গেছে, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুদ আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়।

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ সভায় জানানো হয়, বর্তমানে এক কেজি দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি উন্মুক্ত থাকার কারণে পেঁয়াজ আমদানি বেশি হয়েছিল। তখন দেশি পেঁয়াজের বাজারদর কম ছিল, কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ছিল। কৃষকেরা কম দাম পেয়েছিল। সে জন্য পেঁয়াজ চাষে কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখতে এবার আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে কৃষি মন্ত্রণালয়। যে কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। মাস দেড়েক আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বর্তমানে তা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে গতকাল ঢাকার আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি আমাদের জন্য উভয়সংকটের মতো। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে দাম অনেক কমে যায়, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আর আমদানি না করলে দাম বেড়ে যায়, ভোক্তাদের কষ্ট হয়। সেজন্য সব সময়ই আমরা চাষি, উৎপাদক, ভোক্তাসহ সবার স্বার্থ বিবেচনা করেই আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়ন করছে রোডম্যাপ। এতে ব্যাপক সাফল্য মিলেছে। গত ২ বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টন। দুবছর আগে যেখানে উৎপাদন হতো ২৫ লাখ টনের মতো, এখন উৎপাদন হচ্ছে ৩৫ লাখ টনের মতো।

পেঁয়াজের উৎপাদন ও বিপণনের বর্তমান চিত্র : ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। এ বছর ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। পেঁয়াজের সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে বিভিন্ন ধাপে অপচয় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাদে গত বছর নিট উৎপাদন হয়েছে ২৪.৫৩ লাখ টন। বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬.৬৫ লাখ টন।

ফুলবাড়ীতে পেঁয়াজ ১০০ টাকা : ফুলবাড়ী প্রতিনিধি জানান, বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে ঝাঁজ ছড়াচ্ছে পেঁয়াজ। এর দামে যেন লাগাম টানা যাচ্ছেই না। ভারত থেকে আমদানি বন্ধ ও দেশে ‘সংকট’-এর অজুহাত দেখিয়ে দুদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ১০০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ধীরে ধীরে মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে এ নিত্যপণ্যটি।

জানা যায়, গত শুক্রবার ৭০টাকা, শনিবার ৮০টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা কেজি দরে। আর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। অর্থাৎ দুদিনেই কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩০ টাকা। ফুলবাড়ী পৌর বাজারের খুচরা বিক্রেতা মমতাজ, হারুন বলেন, আমদানি না থাকার অজুহাতে পেঁয়াজের দাম ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দাম নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রায়ই বাগ্বিতণ্ডা লাগছে। তারা বলেন, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে তারাও বেশি দামে বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন।

পৌর বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা উজ্জ্বল হোসেন, বাবু জানান, রমজানে ৩০ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছি। এর পর থেকে কয়েক দফায় দাম বৃদ্ধি পেয়ে ৬৫/৭০ টাকা হয়; কিন্তু মাত্র দুদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি! ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন কৃষকের কাছে পেঁয়াজ নেই, যা আছে আড়তদারদের কাছে। তারাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

এদিকে পৌর পাইকারি বাজারের আড়তদার মেহের হোসেন বলেন, তারা সাধারণত তাহেরপুর, বাগমারা, পাবনা ও ফরিদপুর থেকে ফুলবাড়ীতে পেঁয়াজ আমদানি করেন। এসব এলাকার মোকামেই দেশি পেঁয়াজ প্রায় ৩৫০০ টাকা মণ দরে কিনতে হচ্ছে। মোকামেই পেঁয়াজের দাম বেশি। আমরা কী করব? গত শুক্র ও শনিবার কমদামে আমদানি হয়েছে বলে কমদামে বিক্রি করতে পেরেছি।

এক আড়তদার বলেন, এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি না হলে পেঁয়াজের দাম কমবে না। দেশি পেঁয়াজের মজুদ শেষ হয়ে আসছে, তাই প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।

প্রসঙ্গত, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চলতি বছরের ১৫ মার্চ থেকে সরকার পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ করে দেয়। এর পর দফায় দফায় বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশি পেঁয়াজের দাম।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877