শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১০ পূর্বাহ্ন

ডলার সঙ্কটে কয়লা আমদানি ব্যাহত : বন্ধ হয়ে গেল পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র

ডলার সঙ্কটে কয়লা আমদানি ব্যাহত : বন্ধ হয়ে গেল পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র

  • আশরাফুল ইসলাম

কিভাবে সম্ভব। রাত সাড়ে ১০টায় গেছে, একটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি, এখনো বিদ্যুৎ আসে নাই। দুই সন্তানের জনক আমিনুল নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে বিদ্যুতের এ লোডশেডিংয়ের চিত্র এভাবে তুলে ধরেছেন। মতামতের কলামে শফিক আহমেদ নামক এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘কেউ কথা রাখেনি, মামাবাড়ির মাঝি নাদের আলী বেঁচে থাকলে উত্তর দিতে পারত’। অপর এক ব্যক্তি বলেছেন, ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করা হয়েছে। আরো কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথে। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো আমরা অন্ধকারে থাকছি। অথচ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা বলে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হচ্ছে। বাড়তি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার পেছনে যে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জের নামে জনগণের পকেট থেকে নেয়া হচ্ছে ওই অর্থ দিয়ে জ্বালানি খাতকে শক্তিশালী করলে আজ কয়লার অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করতে হতো না।

বিদ্যুতের লোডশেডিং এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গ্রাম কী শহর কোথাও লোডশেডিংয়ের আওতামুক্ত নেই। সর্বত্রই যেন ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা। রাতের হাহুতাশ আরো বেশি। কাজকর্ম করে সারা দিনের ক্লান্ত শেষে বাসায় যখন মানুষ বিছানায় যায়, তখনই বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ভয়াবহ রূপ আরো বেড়ে যায়। মধ্য রাতেও লোডশেডিং থেকে রেহাই মিলছে না। এমনিতে ভয়াবহ তাপদহ, এর ওপর লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ ঘরেই থাকতে পারছে না। রাতে বিছানা ভিজে যায়। এতে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে শিশুরা ঘামে ভিজে ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

লোডশেডিংয়ের এ মাত্রা আরো বাড়তে পারে। এর অন্যতম কারণ হলো দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা আজ থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ডলার সঙ্কটে সময়মতো কয়লা আমদানি করতে না পারায় দুর্দিনের কাণ্ডারি বলে খ্যাত এ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। কেন্দ্রটির জন্য এখন কয়লা আমদানির জন্য চেষ্টা চলছে। এজন্য কমপক্ষে এক মাস অপেক্ষা করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এ দিকে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, লোডশেডিং পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে গেছে, আমরা দুঃখিত। ‘আমরা দেখছি আমাদের আড়াই হাজার মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং হচ্ছে, এটা থেকে বেরিয়ে আমরা ধীরে ধীরে তা কমিয়ে আনবো। মনে হচ্ছে সেটা আমরা করতে পারব।’ জনগণের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শঙ্কিত হবেন না, এখনো এটি (বিদুৎ পরিস্থিতি) আমাদের কন্ট্রোলে। তিনি বলেছেন, বেশ কিছুদিন ধরে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা লক্ষ্য করছেন, লোডশেডিংয়ের জায়গাটা বেড়ে গেছে। আমরা বারবার বলে আসছি কয়লা ও তেল- এগুলোর জোগান দিতে আমাদের দীর্ঘ সময় লাগছে। এ জন্য আমাদের লোডশেডিংয়ের জায়গাটা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। এখন যে সমস্যাটা দেখা গেছে, এর আকারটা (লোডশেডিং) বেশ খানিকটা বড় হয়ে গেছে। পরিস্থিতি অনেকটা অসহনীয় হয়ে গেছে। এ জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা চেষ্টা করছি অচিরেই এ অবস্থা থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আমরা আশা করব আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে বেরিয়ে আসার। কারণ আমাদের কয়লার জোগান দিতে হচ্ছে, তেলের জোগান দিতে হচ্ছে, গ্যাসের জোগান দিতে হচ্ছে। আবার শিল্পে গ্যাস দিতে হচ্ছে। সব পরিস্থিতি একসাথে এসেছে।

এ দিকে লোডশেডিংয়ে শহর গ্রাম উভয় এলাকাতেই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মানুষ। সারা দিনের পরিশ্রম শেষে রাতে ঘুমাতে গেলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এক ঘণ্টা পর আসে। ঘুম কিছুটা গভীর হওয়ার আগে দুইটার দিকে আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) বলছে, রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ লোডশেডিং হচ্ছে। রাত ১০টার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যায় গড়ে দুই হাজার মেগাওয়াট। স্বাভাবিক সময়ে রাতে বিদ্যুতের চাহিদা কমতে থাকে; কিন্তু কয়েক দিন ধরে এটি তেমন একটা কমছে না। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়ানো যাচ্ছে না, তাই লোডশেডিং বেড়ে গেছে।

সাধারণ গ্রাহকরা জানিয়েছেন, সরকার শুধু উৎপাদন সক্ষমতাই বাড়িয়েছে। কিন্তু এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানোর জন্য প্রাথমিক জ্বালানির ব্যবস্থা করা হয়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি গ্যাস বা কয়লা উত্তোলনের জন্য সমানহারে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অথচ আজ কয়লার অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানোর সাথে সাথে প্রতি বছর ১৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জের নামে জনগণের পকেট থেকে নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই এ অর্থ জনগণের পকেট থেকে চলে যাচ্ছে। অথচ এক বছরের ক্যাপাসিটি চার্জের অর্থ জ্বালানি খাতে খরচ করলে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হতো। দেশীয় কয়লা উত্তোলন করার তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। এর দায় জনগণের ঘাড়ে চাপছে।

এদিকে আমাদের কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানিয়েছেন, দেশের বৃহত্তম ও সর্বাধুনিক পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা সঙ্কটে ২৫ মে এই কেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ হয়েছিল। কয়লার মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় অবশিষ্ট ইউনিটও বন্ধ হতে যাচ্ছে। রাতের ঠিক কোনো সময়টাতে ইউনিট বন্ধ হবে তা নির্ভর করছে লোডের ওপর। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকেও সমাধান মেলেনি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হলে জাতীয় গ্রিড অন্তত ১২ শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। এতে দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং দেখা দিতে পারে। তবে নতুন করে কয়লা আমদানির জন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ১০০ মিলিয়ন ডলার সংস্থান করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে এলসি খোলা হয়েছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই কয়লা চলে এলে আবারো চালু হবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত ডলার সঙ্কটে বিদেশ থেকে কয়লা আনা যাচ্ছে না। দীর্ঘ দিন ধরে বাকিতে কয়লা এনে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচল রাখা হয়েছিল। এতে প্রতিষ্ঠানটির দেনা প্রায় ৩৬ কোটি ডলার। এই বকেয়া পরিশোধ না করলে নতুন করে কয়লা আনা সম্ভব হবে না।

সূত্র জানায়, পায়রা- ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন অন্তত ১৩ হাজার টন কয়লা পোড়াতে হয়, যা ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করত কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান সিএমসির মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা হতো। পরে দুই প্রতিষ্ঠানের সমান মালিকানায় বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) নামে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। বিগত দিনে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ছয় মাস বাকিতে কয়লা দিয়েছে সিএমসি। পরে আরো তিন মাসের বকেয়াসহ ৯ মাসে বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়ায় অন্তত ৩৯ কোটি ডলার। ডলার সঙ্কটের কারণে এই বকেয়া পরিশোধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যে কারণে চীন থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়। ডলার সঙ্কট মেটাতে কয়েক দফা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেও সমাধানে আসতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, জটিলতা কাটাতে ২৭ এপ্রিল বিসিপিসিএল কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সচিবকে চিঠি দিয়েছিল। এর আগেও সংশ্লিষ্টদের বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে তাগিদ দিয়েছিল বিসিপিসিএল। এসব চিঠি চালাচালির পর ৩ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। এর পরও পায়রা বিদ্যুতের কাছে ৩৬ কোটি ডলার পাবে সিএমসি। বড় অঙ্কের এই অর্থ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত পায়রা তাপবিদ্যুৎ বাকিতে কয়লা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএমসি।
এ প্রসঙ্গে বিসিপিসিএলের একজন প্রকৌশলী জানান, পায়রা থেকে দৈনিক গড়ে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, যা সরাসরি জাতীয় গ্রিড যুক্ত হয়। ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা পেত দেশের মানুষ। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হলে সারা দেশেই এর প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ খোরশেদুল আলম ২৯ মে বলেছিলেন, কয়লা সঙ্কটের কারণে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, শুধু পায়রা নয়, জ্বালানি সঙ্কটে দেশের একাধিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। মূলত ডলার সঙ্কটের কারণে কয়লা আমদানি করা যাচ্ছে না। এ সঙ্কট কাটাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছি।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী গতকাল সচিবালয়ে বলেন, তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আমরা চেষ্টা করছি, এটা কত দ্রুত সমাধান করা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, কত দ্রুত পায়রাতে কয়লা আনা যায়। ওখানেআমাদের পাওয়ার প্ল্যান্টটি অর্ধেক ক্যাপাসিটিতে চলছে। বড় পুকুরিয়াতেও আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অর্ধেক ক্যাপাসিটিতে চলছে।’

‘আমাদের লিকুইড ফুয়েল নির্ভর যে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো ছিল, সেগুলোর প্রায় অর্ধেক ক্যাপাসিটিতে চলছে। সেজন্য আমাদের লোডশেডিংয়ের মাত্রাটা অনেক বেড়ে গেছে, বিশেষ করে ঢাকা শহরের আশপাশেসহ গ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন জায়গাতে। আমরা সকাল থেকে এটা মনিটর করছি।’

তিনি বলেন, ‘তাপপ্রবাহও বেড়ে গেছে। তাপমাত্রা কোথাও ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে গেছে। এজন্য আমাদের পিক আওয়ারে ডিমান্ডও বেড়ে গেছে। আমাদের হাতে যে পাওয়ার প্ল্যান্ট মজুদ ছিল বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য প্রস্তুত রাখছিলাম, সেটাও আমরা জ্বালানির কারণে দিতে পারছি না।’
পরিস্থিতি উন্নতির জন্য এখন কেন চেষ্টা করা হচ্ছে, আগে কেন করা হয়নি- জানতে চাইলে নসরুল হামিদ বলেন, আমরা দুই মাস আগে থেকে চেষ্টা করছিলাম। আমরা জানতাম যে এ রকম একটা পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে। সেটার সমাধান নিয়ে আমরা চেষ্টা করছিলাম।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, তবে আমাদের অনেক কিছু দেখতে হয়। আমাদের অর্থনৈতিক বিষয় আছে, সময় মতো এলসি খোলার বিষয়ে আছে, সময় মতো জ্বালানি পাওয়ার বিষয় আছে। সেই বিষয়গুলোকে আমাদের একসাথে সমন্বয় করে নিতে হয়।

‘তবে আশার কথা হলো, সামাল দেয়ার একটা ব্যবস্থা অন্তত হয়ে গেছে। সেজন্য আমাদের এক-দুই সপ্তাহ সময় দিতে হবে। সে সময় পর্যন্ত সবাইকে কিছুটা কষ্ট ভোগ করতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877