শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০২ পূর্বাহ্ন

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে ১৪ বছর পর চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে ১৪ বছর পর চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান

স্বদেশ ডেস্ক:

যেন ফিরে এলো নব্বই দশক। ফিরিয়ে আনলো আবাহনী-মোহামেডান। রক্তহিম করা সেই পুরনো স্বাদ, লোম দাঁড়ানো শিহরণ; কী ছিলো না আজ! ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলালো, পরতে পরতে উত্তেজনা ছড়ালো, প্রতি মুহূর্তেই অনিশ্চয়তার রহস্যময় ঘোরে আচ্ছাদিত করে রাখলো। উন্মাদনার এমন পারদ ঠাসা ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা উৎসবে মাতলো মোহামেডান।

এমন একটা ম্যাচের তুলনা খুঁজতে ডুব দিতে পারেন স্মৃতির গহ্বরে। তবে খুব কাছের মাঝে তুলনা খুঁজতে পারেন কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে; আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স লড়াইয়ে। ফাইনাল ম্যাচ ছিল এটাও, ফেডারেশন কাপ ফাইনাল। যেখানে একযুগ পর শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল আবাহনী ও মোহামেডান।

কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে টাইব্রেকারের মাধ্যমে শিরোপা নির্ধারণ হলেও গোল কিন্তু কম হয়নি ম্যাচে। একের পর এক গোল হয়েছে, মুহূর্তে মুহূর্তে রঙ বদলেছে। প্রথম ৯০ মিনিটে আসেনি সমাধান, অতিরিক্ত সময়ে গিয়েও দুই দলের হাল সমানে-সমান। ৪-৪ গোল নিয়ে খেলা গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে।

প্রখর রোদ উপেক্ষা করে আবাহনী-মোহামেডান লড়াই দেখতে গোটা স্টেডিয়াম ভরে যায় এক নিমিষেই। দর্শকদের হতাশ হতে হয়নি। প্রথম মিনিট থেকেই জমজমাট এক লড়াই উপহার দিয়েছে দুই দল। ম্যাচের ১৬তম মিনিটেই এগিয়ে যায় আবাহনী। এমেকার পাস ধরে জাল খুঁজে নেন ফাহিম। ২৯তম মিনিটে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি, তবে বাধা হয়ে দাঁড়ান মোহামেডানের গোলরক্ষক সুজন।

বিরতির দুই মিনিট আগে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়, ২-০ গোলে এগিয়ে যায় আবাহনী। হৃদয়ের লং পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোল করেন কলিনদ্রেস। বিরতির আগে অতিরিক্ত সময়ে আরো দুটো সুযোগ তৈরি করেছিল আবাহনী, তবে বাধা হয়ে দাঁড়ান সুজন। তবে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ মুঠোয় নিয়ে বিরতিতে যায় আকাশী-নীলরা।

দ্বিতীয়ার্ধে আড়মোড় ভেঙে জেগে উঠে মোহামেডান। জ্বলে উঠেন সুলেমানে দিয়াবাতে, দেখা দেন চির চেনা বিধ্বংসী রূপে। চার মিনিটের মাঝে তার জোড়া গোলে ম্যাচে ফেরে সমতা। জমে উঠে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ডার্বি। ৫৬তম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে আসা বল দারুণ ভলিতে আবাহনীর জালে পাঠান সুলেমান। আর ৬০তম মিনিটে জাফর ইকবালের ক্রসে মাথা ছুঁয়ে দ্বিতীয়বারের মতো লক্ষ্যভেদ করেন সুলেমান

তবে সমতা বেশীক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি মোহামেডান। ছয় মিনিট না পেরোতেই ফের এগিয়ে যায় আবাহনী। ৬৬তম মিনিটে রহমতের ক্রসে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন এই নাইজেরিয়ান এমেকা। ব্যাবধান তখন ৩-২। তবে ৮৩তম মিনিটে শঙ্কা কাঁটিয়ে ফের ম্যাচে ফেরে মোহামেডান। দলের ও নিজের তৃতীয় গোলটি পেয়ে যান সুলেমান। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল মাথা দিয়ে জড়িয়ে দেন জালে। ম্যাচে তখন ৩-৩ সমতা।

৩-৩ সমতায় শেষ হয় প্রথম ৯০ মিনিটের খেলা। মাঝের সময়ে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চললেও হয়নি শিরোপার সমাধা। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। যেখানে শুরুতেই জোড়া সেভে আবাহনীকে হতাশ করে মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন।

এরই মাঝে ১০৫তম মিনিটে ম্যাচে প্রথমবারের মতো এগিয়ে যায় মোহামেডান। সুলেমানকে ডি বক্সের ভেতর ফাউল করে বসেন আবাহনীর গোলরক্ষক শহিদুল। রেফারি পেনাল্টি বাঁশি বাজালে স্পট কিক থেকে দলের পক্ষে নিজের চতুর্থ গোলটা খুঁজে নেন সুলেমান। ৪-৩ গোলে এগিয়ে তখন মোহামেডান।

তবে ৬ মিনিট পরই বড় ধাক্কা খায় সাদা-কালোরা। চোটে পড়ে কেঁদে কেঁদে মাঠ ছাড়েন ম্যাচের অন্যতম সেরা পারফর্মার গোলরক্ষক সুজন। লাফিয়ে ক্লিয়ার করতে গিয়ে ব্যাথা পান তিনি। তার বদলি নামেন আহসান হাবিব বিপু। তবে ১১৭ মিনিটে তাকে পরাস্ত করে আবাহনীর রহমত মিয়া। আবাহনীর হয়ে ম্যাচে চতুর্থবার বল জালে জড়ান তিনি। ম্যাচে তখন ৪-৪ সমতা।

অতিরিক্ত সময়েও জয়ী দল নির্ধারণ না হওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে দলের হয়ে প্রথম গোল করেন সুলেমান। তবে আবাহনীর হয়ে রাফায়েলের নেয়া প্রথম শট আটকে দেন মোহামেডানের বদলি গোলকিপার আহসান হাবিব। আবাহনীর হয়ে নেয়া কলিনদ্রেসের শেষ শটটাও আটকে দেন তিনি।

মাঝে মোহামেডান একটি শট মিস করায় পঞ্চম শটের ওপর নির্ভর করছিল ভাগ্য। যেখান থেলে কামরুল গোল করতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে সাদা-কালোরা। টাইব্রকারে ৪-৩ গোলে জিতে যায় মোহামেডান। ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ ঘরে তুলেছে মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী দলটি। শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালে স্বাধীনতা কাপ জয়ের পর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে প্রথম শিরোপাও জিতল মোহামেডান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877