মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ অপরাহ্ন

পায়রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকবে তিন সপ্তাহ!

পায়রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকবে তিন সপ্তাহ!

স্বদেশ ডেস্ক:

কয়লার জোগান না থাকায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ১৩২০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটই চলে আমদানি করা কয়লা দিয়ে। বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লা মজুদ আছে, তাতে দ্বিতীয় ইউনিট আগামী ৩ জুন পর্যন্ত চলবে।

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করে। ডলারসংকটের কারণে আমদানি করা কয়লার বিল পরিশোধ করতে পারছিল না প্রতিষ্ঠানটি। বিশাল অংকের বকেয়া জমে যাওয়ায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অনেক আগেই চিঠি দিয়েছিল সরবরাহকারী বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান।

বিষয়টি গত এপ্রিলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল বিসিপিসিএল; যার অনুলিপি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরকেও দেওয়া হয়েছিল।

বকেয়া দ্রুত পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘অন্যথায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে ব্যাপকভাবে লোডশেডিংয়ের কারণে জাতীয় অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন হবে।’

বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম গতকাল রাতে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে সিএমসির চিঠি এসেছে। আমরা কয়লা পাব। তবে ১ জুন যদি এলসি ওপেন হয়, সে ক্ষেত্রে (কয়লা) আসতেও তো ২৫ দিন লেগে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, বৈশ্বিক যে পরিস্থিতি; সরকারও এক ধরনের চাপে আছে। পরিস্থিতিটা আমাদেরও বুঝতে হবে। সরকার আমাদের ১০ কোটি মার্কিন ডলারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এর মধ্যে আমরা ৫ কোটি ৮০ লাখ পেয়েছি, সেটা আমরা সিএমসিকে দিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ৩১ মের মধ্যে বাকিটা দেবে। এটা আমরা সিএমসিকে জানিয়েছি।’

খোরশেদুল আলম বলেন, ‘৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার দেওয়ার পরও এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের সিএমসির কাছে বকেয়া আছে সাড়ে ৩৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বাকি চার কোটি ২০ লাখ ডলার দিলে আরও ২৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার বাকি থাকবে। সিএমসি বলেছে, ৩১ মের মধ্যে চার কোটি ২০ লাখ ডলার পাঠিয়ে দিতে। ওটা দিলে তারা এলসি খুলে দেবে। অবশিষ্ট বকেয়া নিয়মিত পরিশোধ করতে বলেছে।’

উৎপাদন বিবেচনায় পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার বিচারেও দেশের অন্যতম সফল বিদ্যুৎকেন্দ্র এটি। গড়ে দেশের দৈনিক মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ জোগান দেয় কেন্দ্রটি।

বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক মাস আগে জ্বালানি সংকটে দেশে শুরু শুরু হওয়া লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। রমজান মাসজুড়ে লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে এই কেন্দ্রের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। কারণ, এটি একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পুরোমাত্রায় এমনকি সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছে।

তিন সপ্তাহের জন্য এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ থাকলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তবে বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে, সে বিষয়ে কিছু বলেনি সংস্থাটি।

তবে খাত সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম হওয়ায় এখনো লোডশেডিং হচ্ছে। তিন সপ্তাহের জন্য পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে দেশে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করবে।

বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা-তাপভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিকানায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান অংশীদারত্ব রয়েছে।

চলতি মাসের প্রথম দিকে আমাদের সময়ে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, ডলার সংকটে আমদানি করা কয়লার বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফলে কয়লা আমদানিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মজুদ কয়লা দিয়ে মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চালানো যাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এর মধ্যে কয়লা আনা না গেলে জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বিসিপিসিএলের পাঠানো এক চিঠির বরাত দিয়ে এসব কথা বলা হয় প্রতিবেদনে।

ইন্দোনেশিয়ার যে কোম্পানি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করে সে কোম্পানির কয়লার দাম পরিশোধ করে সিএমসি।

বিসিপিসিএলের এক কর্মকর্তা জানান, কয়লা আমদানি সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী সিএমসি কয়লা ক্রয়ের ছয় মাস পরে বাংলাদেশ অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। তিনি বলেন, ‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রোভাইড করে সিএমসি। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হলোÑ আমরা ইন্দোনেশিয়া থেকে যে কয়লা কিনি, তার ইনভয়েসের এগেইনস্টে সিএমসি এলসি করে পেমেন্ট করে। চুক্তি অনুযায়ী, আমাদের পেমেন্ট মেথড হলো ডেফার্ড পেমেন্ট (দেরিতে পরিশোধ)। আমরা ছয় মাস পর সিএমসিকে বিল দেই। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়ার কোল-মাইনিং কোম্পানিকে সিএমসি যে পেমেন্ট দেবে, আমরা জুলাইয়ে সিএমসিকে তা পরিশোধ করব। বাস্তবতা হচ্ছে, ছয় মাস তো পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। আরও পাঁচ মাস চলে গেছে। আমরা বকেয়া শোধ করতে পারছি না।’

এত টাকা বকেয়া হওয়ায় চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কয়লা ক্রয়ে নতুন করে এলসি খুলতে সিএমসিকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিএমসি বলছে, টাকা না দিলে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এই টাকা কিস্তিতে নিতে রাজি আছে প্রতিষ্ঠানটি। গত ১৩ এপ্রিল বিসিপিসিএলকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয় সিএমসি। দুই সপ্তাহ পর, গত ২৭ এপ্রিল সিএমসি ই-মেইলের মাধ্যমে বিসিপিসিএল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগাদা দেয়।

ওই দিনই (২৭ এপ্রিল) বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানকে চিঠি পাঠান বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম। সংকট সমাধানে বিদ্যুৎ সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।

চিঠিতে বিসিপিসিএল জানায়, এর আগে বকেয়া পরিশোধের জন্য দফায় দফায় সোনালী ব্যাংক (বিসিপিসিএলের অ্যাকাউন্ট ব্যাংক) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হলেও প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার জোগান না পাওয়ায় বকেয়ার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877