রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
রাজনীতির দাবার ঘুঁটি অমিত মুহুরী

রাজনীতির দাবার ঘুঁটি অমিত মুহুরী

আওয়ামী লীগ জোট ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম রেলওয়ে, নিউমার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও পার্শ্ববর্তী বাণিজ্যিক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে উঠেপড়ে লাগেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। আর এ কাজে তিনি ব্যবহার করেন সদ্য কৈশোর পার হওয়া অমিত মুহুরীকে। ফলও আসে রাতারাতি, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সব ধরনের দরপত্র এখন বাবরের নিয়ন্ত্রণে। নগরীর নন্দনকাননে বাবরের বাসা। আর অমিতের বাসা তার থেকে ২০ গজ দূরে।

অমিতের বাবা অরুণ মুহুরীর অভিযোগ, ‘যে নেতা ছোট্ট অমিতকে আজকের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী অমিত বানিয়েছেন, সেই নেতাই তাকে কারাগারে ঢুকিয়েছেন। তিনিই খুন করিয়েছেন। নিজেদের ভবিষ্যতের ভালো-মন্দ চিন্তা থেকেই অমিতকে কারাগারের ভেতরে শেষ করে ফেলা হয়েছে।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান কার্যালয়ের কাছে ২০১৩ সালের ২৪ জুন বন্দুকযুদ্ধ হয় যুবলীগ নেতা বাবর গ্রুপ ও ছাত্রলীগ নেতা লিমন গ্রুপের মধ্যে। এতে সাজু পালিত নামে যুবলীগকর্মী ও ছয় বছরের শিশু আরমান নিহত হয়। জোড়া খুনের এ মামলায় বাবরের সঙ্গে অমিত মুহুরীও অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। আর ওই জোড়া খুনের পরবর্তী সময়ে বাবরের সফলতা প্রশ্নাতীত। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সব দরপত্রই চলে আসে তার নিয়ন্ত্রণে। এ ক্ষেত্রে অমিত মুহুরী ছিলেন দক্ষিণ হাত। রেলওয়ের ঘটনার পর রিয়াজউদ্দিন বাজারে আরও দুটি খুন করেন অমিত। বাকলিয়ায় খুন করেন এক ছাত্রলীগ নেতাকে। তবে নিজ বাসায় যুবলীগ নেতা ইমরানকে বীভৎসভাবে হত্যা, নিহতের শরীর আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার পর এসিড ও চুন মিশিয়ে ড্রামে করে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ অমিতকে গ্রেপ্তার করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। এ খুনের ঘটনায় দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করলেও দুর্ধর্ষ অমিতকে ধরতে পারছিল না পুলিশ। তখন কৌশলী হয় গোয়েন্দা পুলিশ। চাপ দেওয়া হয় যুবলীগ নেতা ও অমিতের গুরু বাবরকে।

অমিতের বাবা অরুণ মুহুরীর অভিযোগ, বাবরের এক সহযোগীই পরে অমিতকে গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করেন। বিষয়টি জানার পর জেলখানায় এক ছাত্রলীগ নেতাকে অমিত তা বলেন এবং বের হয়ে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন। এর মধ্যেই কারাগারে খুন হন অমিত।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য হেলাল আকবর বাবরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে মোবাইল ফোনের ওপাশ থেকে রুবেল নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘বাবর সপরিবারে দুবাই অবস্থান করছেন। ঈদের পর দেশে ফিরবেন।’ হেলাল আকবর বাবর প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বর্তমানে ওই অংশের প্রধান নেতা।

একাধিক রাজনীতিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলকে ব্যবহার করে কিছু রাজনীতিবিদ অর্থ ও প্রতিপত্তির লোভ দেখিয়ে অমিতের মতো সদ্য কৈশোর পার হওয়া তরুণদের সন্ত্রাসের পথে নিয়ে আসেন। দ্রুত সম্পদশালী ও প্রভাবশালী হওয়ার লোভে তরুণরাও এ পথে পা বাড়ান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারাই হন অপরাজনীতির বলি। তাদের ব্যবহারকারী গডফাদাররা বরাবরই থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এলাকায় প্রভাব প্রতিপত্তির লোভে এখনো অনেক কিশোর এসব গডফাদারদের পেছনে ছুটছে বলে জানান একাধিক রাজনীতিক।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘দল ক্ষমতায় থাকার সুবাদে দলের ব্যানার ব্যবহার করে কিছু দুর্বৃত্ত ফায়দা লুটছে। তারা ব্যবহার করেছে উঠতি তরুণদের। কিন্তু দলের দুঃসময়ে আমরা তাদের কাউকেই পাইনি। এটা এক ধরনের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। এ অপরাজনীতি থেকে দলকে রক্ষা করতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877